?> ‘ভারত বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রাণ প্রকৃতি বাঁচাতে এই লংমার্চ’ « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, September 26th, 2013

‘ভারত বাংলাদেশ উভয় দেশের প্রাণ প্রকৃতি বাঁচাতে এই লংমার্চ’

সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় কমিটি ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লংমার্চ চলছে।
বেলা ১টা ৪০ এর দিকে লংমার্চ বহর মাগুরা পৌঁছে। শহরে মিছিল নিয়ে ঢুকার সময় মাগুরার জনতা লংমার্চের মিছিলকে স্বাগত জানায়। পথের দুই পাশে শহরের  বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা করতালি ও স্লোগান দিয়ে লংমার্চের মিছিলকে স্বাগত জানায়। মিছিলটি নগরীর বিচিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষীণ করে।

বেলা ২টার দিকে মিছিলটি মাগুরা পৌরভবন প্রঙ্গনে একটি পথসভা করে। সমাবেশে জাতীয় কমিটির কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আনু মুহাম্মদ মাগুরার পথসভায় বলেন, “আমরা জাতীয় কমিটি দীর্ঘদিনের আন্দোলনে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদের উপর জনগণের মালিকান প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। আমরা আমাদের তরুণদের সক্ষম করে গড়ে তুলে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।”

সুন্দরবনের গ্যাস ব্লক বিদেশিদের কাহে ইজারা দান, ফুলবাড়িতে উম্মুক্ত কয়লা খনি করার অপচেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন গণবিরোধী কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় যে সরকারই আসুক তারা গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার চেষ্টা করে। একদিকে দেশের গ্যাস কয়াল বিদেশিদের দিয়ে কয়লা আমদানি করে তারা সুন্দরবন ধংস করে বিদ্যত কেন্দ্র বানাতে চায়। অন্যদিকে তারাই দেশের সম্পদ বিদেশি লুটেরাদের হাতে তুলে দিতে চায়।”

তিনি  আরো বলেন, “সরকারে যারা আসছেন তারা বলেন, বাংলাদেশ কিছুই পারেনা, এদেশের তরুণরা কিছুই পারেনা। এসব বলে তারা তরুনদের কাজ করতে দিচ্ছে না, তাদের সক্ষমতা বিকাশ হতে দিচ্ছেনা। কেন শাসকেরা এ কাজ করছে? কাতীয় সক্ষমতার বিকাশ হলে বিদেশে সম্পদ পাচার করা যাবে না। দেশের তরুনরা কাজ করলে তাদের কমিশন নাই।”
“তাদের দৃষ্টিতে কাজ হল কমিশন খেয়ে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা”। যোগ করেন তিনি।

তৌফিক এলাহীদের কাছে কাজ হল মাথা বিক্রি করা উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, “অন্যদিকে লংমার্চে যারা এসেছেন তাদের কাজ হল, তারা ভাবেন বাংলাদেশের স্বার্থয়ই আমাদের স্বার্থ। আমাদের স্বার্থ, বাংলাদেশের স্বার্থেই আমরা কাজ করছি, লংমার্চ করছি।”
সুন্দবনের কোন বিকল্প নাই, আরেকটা সুন্দরবন তোইরী করা যাবে না। জমি দখলের জন্য তারা সুন্দরবনে কয়লা ভিত্তিক ভিদ্যুত কেন্দ্র বানাতে চায়।”

তিনি বলেন, “সরকারের ধারণা বাংলাদেশের মানুষ ভেরার পাল। তারা সব কিছু অর্থ দিয়ে কিনতে চায়, ক্ষমতা দিয়ে দখল করতে চায়। কিন্তু অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কেনা যায় না। এই লংমার্চ নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের লংমার্চ।”

দক্ষিন এশিয়ার একটি অনন্য বন এই সুন্দরবন এ অঞ্চলের জীববৈচিত্রের ধারক ও মহাপ্রাণ উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ আরো বলেন,  “লংমার্চ কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার জন্য জরুরি একটি লংমার্চ। বিশেষ করে ভরতের প্রাণ প্রকৃতি মানুষকেও এই লংমার্চ সাহায্য করছে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশ উভয়ের লুটেরারা মুনাফার লোভে সুন্দরবনকে ধংস করতে চায়।” লংমার্চের মাধ্যমে এই দুই দেশের লুটেরাদের প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

বেলা ৩টার দিকে লংমার্চ পরবর্তী গন্তব্য ঝিনাইদহে পৌছায়। এখানে হাজার হাজার লোক লংমার্চের সাথে মিছিল করে যোগ দেয়। সড়ে তিনিটার দিকে জেলার আরামপুর বাস স্ট্যান্ড প্রাঙ্গনে জাতীয় কমিটি সভা করে।

সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বিদ্যুত উতপাদনের বহু বিকল্প আছে কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নাই। সারা দেশের সুব মানুষকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হবে। সুন্দরবন ধ্বংস হলে সারা দেশের মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, তারা যখন দেখে এই বাংলাদেশের তরুণরা তাদের লুটপাটের প্রতিবাদ করছে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তারা তখন তাদের দখলদার বাহিনী লেলিয়ে দেয়। বাংলাদেশের কিছু তরুন লোভের উর্ধে উঠে তাদের লুটপাটের প্রতিবাদ করে তখন তারা কেঁপে উঠে।

তিনি বলেন, “শাসকদের যে রাজনীতি, তাদের যে উন্নয়ন দর্শন তার বিকল্প উন্নয়ন দর্শন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে লংমার্চ। লংমার্চের পতাকা লুটেরারা বইতে পারে না। কারণ তারা চেনে কেবল টাকা। তারা চেনে মুনাফা।”

তিনি বলেন, “আমাদের লংমার্চ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ। তাই এই লং মার্চের যাত্রীরা নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। এই লংমার্চ বাংলাদেশকে রক্ষা করার লংমার্চ।”

তিনি আরো বলেন, “এদেশের তরুনরা যে মাদকাশক্ত বাংলাদেশের তরুনরা সন্ত্রাসী এসব নানা রকম প্রচারণাকে তোয়াক্কা না করে এই লংমার্চের তরুনদের দিকে তাকান। তারি এই বাংলাদেশকে রক্ষা করবে।”

জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, সুন্দরবনে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যত কেন্দ্র হচ্ছে ভারতকে মুনাফা দেয়ার জন্য।  আমরা  এই চক্রান্তকে মুকাবেলা করব। এর আগে ভারত সরকার আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বহুবার চক্রান্ত করেছিল, আমরা সেগুলোকে নস্যাত করে দিয়েছি।

লংমার্চ  বহর ক্যাসেল ব্রিজ এলাকায় মধ্যাহ্নভোজন করে বিকেল পাঁচটার দিকে যশোরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। যশোরে লংমার্চের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।