তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঘোষণা ও পরিচালনা নীতিমালা
ভূমিকা
জনগণকে বঞ্চিত করে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন করে বাংলাদেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ লুন্ঠন ও পাচারের নানা গোপন চুক্তি ও কার্যক্রম গোচরে আসার পর বাংলাদেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এক কনভেনশনে মিলিত হয়ে ১৯৯৮ সালের ১৮ আগষ্ট ‘জাতীয় স্বার্থে তেল গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি’ গঠন করেন। পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এতে যোগদান করে। বিদ্যুৎ ও বন্দর খাতে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় এগুলোকে এই মঞ্চের কাজের আওতাভুক্ত করবার জন্য ২০০২ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘তেল গ্যাস সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’। গোপনে প্রণীত ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত হবার পর এবং কয়লা সম্পদ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের মুখে খনিজ সম্পদ অন্তর্ভুক্ত করে নাম হয়: ‘তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে খনিজ সম্পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত উল্লে¬খযোগ্য হল প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা সম্পদ। ক্রমে তেল সহ অন্যান্য বহুমূল্য খনিজদ্রব্য পাবার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্র উপক’লসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি ও বালিতে মূল্যবান নানা খনিজ পদার্থও দেখা যাচ্ছে। সীমিত হলেও অনবায়নযোগ্য বলে এসব সম্পদ বাংলাদেশের জন্য অমূল্য এবং বাংলাদেশের শিল্পায়ন, বিদ্যুতায়তন, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ অবকাঠামো বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
সাধারণ সম্পত্তি হিসেবে খনিজ সম্পদের মালিকানা জনগণের। বাংলাদেশে সংবিধানে এটি স্বীকৃত থাকলেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার সহযোগী দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর প্রভাবে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা এবং কার্যক্রমের মূল প্রবণতা হচ্ছে এসব খনিজ সম্পদ জনগণের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বহুজাতিক পুঁজির দখলে নিয়ে যাওয়া। এবং যে সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে বিদ্যুতায়ন, শিল্পায়ন, জ্বালানী ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব তা না করে সেই অমূল্য জ্বালানী সম্পদকে বহুজাতিক কোম্পানীর মুনাফার ক্ষেত্রে পরিণত করা। এর ফলে এই সম্পদের একটি বড় অংশ এখন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে, এই দখল ও আধিপত্য বিস্তুৃত করবার অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। এরফলে গ্যাস খাতে প্রতিবছর এসব কোম্পানির জন্য ভর্তুকি দিতে হচ্ছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। একই কারণে বিদ্যুৎখাত গ্যাসের অভাবসহ নানা সংকট, দুর্নীতি ও সম্পদ লুন্ঠনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত। ব›ন্দরের মতো জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও এখন অরক্ষিত।
জাতীয় কমিটির মূল লক্ষ্য জনগণের এই সম্পদ ও সম্পর্কিত বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের উপর জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র, সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানির থাবা থেকে ভূখন্ড ও সমুদ্রসীমার মধ্যে অবস্থিত জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও জনগণের প্রয়োজনে তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে তেল গ্যাস কয়লা সহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করে জনগণের স্বার্থে তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করা। এবং এই লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সবরকম রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনকে যথাযথ সহায়তা দান করা।
জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জাতীয় কমিটির নীতিগত অবস্থান নিম্নরূপ:
১. খনিজ সম্পদ বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ। সে জন্য যে কোন উন্নয়ন প্রশ্নে এই সম্পদের উপর দেশের মানুষের শতকরা একশোভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে।
২. এই খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও তার সর্বোত্তম ব্যবহার হবে কেবলমাত্র দেশের অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাত তথা জনগণের প্রয়োজনে।
৩. সীমিত ও অনবায়নযোগ্য সম্পদ হেতু সরাসরি বা পণ্য আকারে এর কোন অংশ রফতানি চলবে না।
৪. খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলনের জন্য বিদ্যমান জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে এবং প্রয়োজনে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি ও বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. মানুষ, পরিবেশ এবং জীবন জীবিকা বিপর্যস্ত না করে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন করতে হবে।
৬. উপরের নীতিমালা অক্ষুণœ রেখে সামগ্রিক জ্বালানী নীতি প্রণয়ন করতে হবে। উপরোক্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৭. সামগ্রিক জ্বালানী নীতির আলোকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ যথাযথ করবার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বে করতে হবে।
৮. চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর জাতীয় প্রতিষ্ঠান, দেশের বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এগুলো নিছক কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌম অবস্থান নিশ্চিত করবার জন্য এসব বন্দর কিংবা গভীর সমুদ্র বন্দর অবশ্যই জাতীয় মালিকানায় থাকতে হবে।
৯. সমুদ্রসীমা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই সীমায় সকল সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
১০. উল্লিখিত নীতিমালার পরিপন্থী সকল তেল গ্যাস চুক্তি, কয়লা প্রকল্প, এই খাতে বিশ্বব্যাংক এডিবি ইউএসএইড সহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ ও পরামর্শে পরিচালিত সকল উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
১১. মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলার বিস্ফোরণের জন্য সৃষ্ট ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
১২. জাতীয় স্বার্থ এবং জনগণের বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যেসব ব্যক্তি নানা চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করে তা জাতীয় সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দেশিয় সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করতে হবে।
গত বছরগুলোতে বাংলাদেশে তেল, গ্যাস, কয়লা সহ খনিজ সম্পদ এবং বন্দর ও বিদ্যুৎ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও তার বহুজাতিক পুঁজির আর তার সঙ্গে তার দেশিয় প্রতিনিধিদের আগ্রহ, উদ্যোগ, চক্রান্ত, চাপ একদিকে অনেক বেড়েছে অন্যদিকে জাতীয় কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও জাতীয় সম্পদ হিসেবে খনিজ সম্পদ, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্দর এবং জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিদ্যুৎ খাত এর বিকাশের ব্যাপারে আগ্রহ, মনোযোগ এবং সক্রিয়তা বেড়েছে।
জাতীয় কমিটি ইতিমধ্যে তেল গ্যাস খাতে উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি বাতিল, গ্যাস রফতানির অপতৎপরতা এবং চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেবার অপচেষ্টা বন্ধের জন্য দেশব্যাপী লংমার্চ, সভা, সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গ্যাস রফতানির অপচেষ্টা বন্ধ হয়, যার মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতি এক বিরাট বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর একটি জালিয়াত মার্কিন কোম্পানির দখলদারিত্ব ঠেকানো সম্ভব হয়। মানুষ ও প্রকৃতি বিনাশী ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প প্রতিরোধে জাতীয় গণরায় জাতীয় কমিটি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সর্বশেষ অর্জন।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি সম্মানজনক উজ্জল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে গেলে জনগণের সম্পদ ও জনগণের প্রতিষ্ঠানের উপর জনগণের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা ছাড়া কোন পথ নেই। এর জন্য গবেষণা, প্রচার ও আন্দোলনমূলক কাজ প্রসারিত করাই জাতীয় কমিটির প্রধান করণীয়। দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় করে জাতীয় কমিটি এই দায়িত্ব পালন করে চলেছে। একে আরও বিস্তৃত করাই এখন লক্ষ্য।
পরিচালনা নীতিমালা
নাম: এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’ যা সংক্ষেপে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটি’ নামে অভিহিত হবে। এরপর ‘জাতীয় কমিটি’ বলতে ‘তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’ বোঝাবে।
গঠন: এই জাতীয় কমিটি তার ঘোষণা ও পরিচালনা নীতির সঙ্গে একমত রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক পেশাজীবী শ্রেণী সংগঠন বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের সমন্বয় গঠিত হবে।
কেন্দ্র: জাতীয় কমিটির কেন্দ্র দেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থান করবে।
সদস্য
জাতীয় কমিটির ঘোষণা ও পরিচালনা নীতিমালার সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার ঘোষণা করে যে কোন সংগঠন বা ব্যক্তি সদস্য হতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের যদি জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি প্রণয়ন বা তৎপরতার সঙ্গে যুক্ততার প্রমাণ থাকে তাহলে তাকে সদস্যপদ প্রদান করা যাবে না। সদস্য পদ গ্রহণের পর কারও এ ধরনের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত হলে যথার্থ তদন্ত সাপেক্ষে তার সদস্যপদ খারিজ করা যাবে। সদস্যপদ অনুমোদন ও বাতিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
জাতীয় কমিটির গঠন:
কেন্দ্রীয় সংস্থা: গঠন ও কার্যক্রম
জাতীয় কমিটির সদস্য বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংস্কৃতিক পেশাজীবী বা শ্রেণী সংগঠনের প্রতিনিধি, জাতীয় কমিটির কাজে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ ও ব্যক্তিবর্গ নিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠিত হবে। এর নাম হবে ‘জাতীয় পরিষদ’। এর সদস্য সংখ্যা প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। প্রতি দুবছর অন্তর জাতীয় পরিষদের সভায় আহবায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচন করা হবে।
জাতীয় পরিষদের গঠন হবে নিম্নরূপঃ
আহবায়ক: ১ জন।
সদস্য সচিব: ১ জন।
বাকি সকলেই সদস্য।
জাতীয় পরিষদে, শরীক রাজনৈতিক দলগুলো থেকে দুজন করে প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সংগঠন থেকে একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। ব্যক্তি হিসেবে যারা জাতীয় ভাবে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত কিংবা জাতীয় কমিটির কার্যক্রমে অবদান রাখতে সক্ষম তারা জাতীয় পরিষদের সম্মতিক্রমে সদস্য হতে পারবেন।
কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে জাতীয় পরিষদ তার আহবায়ক, সদস্য সচিব ও ৯ জন সদস্য নিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠন করবে।
জাতীয় পরিষদ সারাদেশে জাতীয় কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করবে। জাতীয় পরিষদের দুইসভার মধ্যবর্তী সময়ে আহবায়ক এবং সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ এর সভা কিংবা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নীতি কাঠামোর অধীনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ পরিচালনা করবেন এবং পরবর্তী সভায় তা অনুমোদনের জন্য রিপোর্ট করবেন।
জাতীয় পরিষদ প্রতি দুইমাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হবে।
জাতীয় পরিষদ সারা দেশে শাখা ও অঞ্চল কমিটি গঠন, সেগুলোর স্বীকৃতিদান তদারকি ও প্রয়োজনে পূনর্বিন্যাস করবে। তাছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন উপপরিষদ গঠন করতে পারবে।
সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতীয় পরিষদ তার যেকোন একজন সদস্যের তত্ত্বাবধানে ভিন্ন ভিন্ন উপকমিটি গঠন এবং তার কার্যসীমা নির্ধারণ করতে পারবে। সেগুলো হতে পারে নিম্নরূপ:
প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি
তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ উপকমিটি
সাংস্কৃতিক উপকমিটি
শাখা সংস্থা
সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা, থানা এমনকি অন্যান্য অঞ্চলেও জাতীয় কমিটির শাখা গঠিত হবে। কোন অঞ্চলে শাখা কমিটি গঠনের সময়ে জাতীয় কমিটির সদস্য সংগঠনসমূহের উপস্থিতি থাকলে তাদের অংশগ্রহণ শাখা কমিটিতে নিশ্চিত করতে হবে। শাখা অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠন শাখা কমিটির সদস্য হতে পারবে। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন জাতীয় কমিটিতে কাজে আগ্রহী ও যোগ্য ব্যক্তিবর্গ। শাখা কমিটির গঠনও হবে নিম্নরূপঃ
আহবায়ক
সদস্য সচিব
সদস্য
আঞ্চলিক সংস্থা
জাতীয় পরিষদ ও শাখা কমিটির মধ্যবর্তী স্তরে প্রয়োজনে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা যাবে। জাতীয় পরিষদই কেবল এইরূপ কমিটি গঠন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। আঞ্চলিক কমিটির গঠন শাখা কমিটির অনুরূপ হবে।
প্রতিনিধি সম্মেলন ও কমিটি গঠন
প্রতি দুই বছর পরপর জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় পরিষদ এবং সকল শাখা ও অঞ্চল কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ। এতে সংস্থার ঘোষণা, নীতিমালা, কর্মপরিচালনা পদ্ধতি ও পরবর্তী কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতিনিধি সম্মেলনে জাতীয় পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষিত হবে।
শাখা ও আঞ্চলিক কমিটিগুলি গঠিত হবে যথাক্রমে শাখা ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি সম্মেলনে। তবে মধ্যবর্তী সময়ে নিষ্ক্রিয়তা বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় সংস্থা শাখা ও আঞ্চলিক কমিটি পুনর্বিন্যাস করতে পারবে।
তহবিল
জাতীয় কমিটি পরিচালিত হবে সদস্য ব্যক্তি ও সংগঠনের চাঁদা ও অনুদানের মাধ্যমে। জাতীয় কমিটির আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছ থেকেও চাঁদা সংগ্রহ করা যাবে। একটি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে জাতীয় কমিটির তহবিল পরিচালিত হবে। এবিষয়ে জাতীয় পরিষদ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি
সাধারণভাবে বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে। কোন কারণে তা সম্ভব না হলে সংখ্যগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সভা আহবান
কমপক্ষে তিনদিন সময় নিয়ে সাধারণ সভা আহবান করতে হবে। তবে ১২ ঘন্টার নোটিশে জরুরী সভা আহবান করা যাবে।
কোরাম
সভার সব সদস্যকে যথাযথভাবে অবহিত করবার পর এক তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম পূর্ণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
১৭ মার্চ ২০০৯ জাতীয় কমিটির সভায় সাময়িকভাবে গৃহীত। অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় কনভেনশনে চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে এটি কার্যকর হল।