Wednesday, July 17th, 2013
সুন্দরবনকে ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নয়
উন্নয়নের নামে জাতীয় ও জনস্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, যেমনটি ঘটছে বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুত সংকট দেশের একটি জরুরী ইস্যূ এবং এ সমস্যার আশু সমাধান সবার কাম্য। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার বাস্তবতায় সরকার গত চার বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বাড়িয়েছে। সেই বাড়তি উৎপাদনের ফলে এক সময়ের তীব্র বিদ্যুৎ সংকট এখন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এখনো বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে আছে বলেই মনে হয় এবং এ নিয়ে জনমনে স্বস্তিও আছে। তবে বিদ্যুতের দাম গত চার বছরে যে হারে বেড়েছে তাতে জনমনে অস্বস্তির মাত্রাও নেহাত কম নয়। সেই অস্বস্তির মাত্রা অবশ্য কেবল সেই পরিমাণ, যে পরিমান বাড়তি বিদ্যুৎ বিল তারা মাস শেষে পরিশোধ করে। কিন্তু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্র্যৎ প্লান্ট স্থাপনের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর যে দীর্ঘস্থায়ী চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কেবলমাত্র অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরাই বোঝেন। আমরা সাধারণ মানুষরা তা বুঝিও না এবং তা নিয়ে মাথাও ঘামাই না। এটি নিশ্চয়ই সরকারের জন্য একটি সুবিধাজনক দিক। যে কারনে সরকার গত চার বছরে অপরিণামদর্শীভাবে একর পর এক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করেছে। স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট মেরামত না বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৮ গুণ বাড়িয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ফাঁদে ফেলে দেশের ওপর ভয়াবহ ঋণের বোঝা তৈরি করা হয়েছে। এসব বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে কতিপয় গোষ্ঠীর স¦ার্থ গুরুত্ব পেয়েছে, দেশের মানুষের স্বার্থ নয়। কোনো প্রকার দরপত্র ছাড়াই অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে নির্মিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো বস্তুত দেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে, একদিকে এই খাতে সরকারের বরাদ্দ ও ভর্তুকি বেড়েছে যার যোগান দেয় এদেশের জনগণ। অপরপক্ষে, অস্বাভাবিকভাবে বিদ্যুতের দাম কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে এবং সেটাও পরিশোধ করছে জনগণ। আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন ব্যয় এবং সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। সুতরাং বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতিই কেবলমাত্র সংকট নয়, বিদ্যুতের উৎপাদনও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে।
দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে চলমান এসব সংকটের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট প্রকল্প। সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও ভারতের ন্যশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) নামক দ’ুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানাধীন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানী (বিআইএফপিসি) প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছে। গত ২০ এপ্রিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রামপাল নামক সুন্দরবন সংলগ্ন বৃহৎ এলাকায় পরিকল্পিত কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্লান্ট প্রকল্পের চুক্তিতে ভারতীয় কোম্পানীর উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য কর মওকুফ, বিদ্যুতের দাম অনির্ধারিত রাখা এবং বাংলাদেশের উপর সব দায়-দায়িত্ব চাপানোসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি পুরোপুরিভাবে একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ এবং সর্বোচ্চ মুনাফাই তাদের লক্ষ্য। বিদ্যুতের দাম অনির্ধারিত রেখে দফায় দফায় দাম বাড়ানোর রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই আয়োজনটিও সফল হলে দেশে এমন অবস্থা আসবে যে, বিদ্যুৎ থাকলেও সাধারণ মানুষের সেই বিদ্যুৎ ক্রয়ের সামর্থ থাকবে না।
গত মার্চ মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় প্রদত্ত ভাষণে তিনি সুন্দরবন রক্ষায় দুই দেশের যৌথ ভূমিকার আহবান জানিয়েছিলেন। অথচ, এর মাত্র দুই মাস পরেই দুই দেশের সরকার ও অতি মুনাফালোভী কিছু মানুষ যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে ধ্বংসের আয়োজন করতে যাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং আইলা ও সিডরের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচাইতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম সুন্দরবন নিঃসন্দেহে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ সমীক্ষা করে এই প্রকল্পের ভয়াবহতা সস্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার বিশেষজ্ঞ মত ও জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এমনকি এনভাইরনমেন্টাল ইম্পেক্ট এসেসম্যান্ট (ইআইএ) ছাড়াই রামপালে বসবাসকাররী মানুষদেরকে উচ্ছেদ করে তাদের জমি দখল করেছে। জমি দখলের পর প্রতারণামূলকভাবে ইআইএ রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়। গত ১২ এপ্রিল ইআইএ রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় বিশেষজ্ঞরা ওই ইআইএ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নতুন ইআইএ রিপোর্ট প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। নতুন রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখারও দাবী জানানো হয়। কিন্তু তারপরেও সরকার তড়িঘড়ি চুক্তি সম্পাদন করে সুন্দরবন ধ্বংস করার এই আয়োজন চূড়ান্ত করেছে।
দেশে বিদ্যুৎ সংকটের প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের স্বার্থ নিশ্চিত করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্টের ক্ষতিকর বিষয় ও ঝুঁকি কমিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত কোনো স্থানে তা স্থাপন করা যেতে পারে – এমন অভিমত সংশ্লিষ্ঠ বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই দিয়েছেন। তাহলে এই বিদ্যুৎ প্লান্ট সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কেন? রামপাল থেকে সুন্দরবনের দুরত্ব মাত্র ৯-১৪ কিলোমিটার। বণাঞ্চলের এত সন্নিকটে এমন পরিবেশ ধ্বংসকারী বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন পৃথিবীতে একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাও কিনা এদেশের পরিবেশের জন্য মাতৃতুল্য ও জাতির অহংকার সুন্দরবনের সন্নিকটে! হায়রে দুর্ভাগা দেশ! আপাতদৃষ্টিতে ভারতের অতি মুনাফালোভী মানসিকতাই এই স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হয়। তবে এই বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের পিছনে ভারতে উৎপন্ন নি¤œমানের কয়লা, যা পরিবেশের জন্য সাংঘাতিক ক্ষতিকর, বাংলাদেশে তার একটি স্থায়ী বাজার সৃষ্টির একটি চক্রান্তও কাজ করছে। উচ্চহারে সালফারযুক্ত সেই নি¤œমানের কয়লা রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্টে ব্যবহৃত হলে তা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ এক বিপর্যয় ডেকে আনবে, যার প্রথম শিকার হবে আমাদের সুন্দরবন।
সুন্দরবন এমনিতেই আইলা ও সিডরে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। সেই বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে একে রক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ না করে উল্টো বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে আমাদের অমূল্য এই জাতীয় সম্পদকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিস্তার পানির ন্যয্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে ভারত একদিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করছে। সেই ভারতীয় চক্রান্তেই এবার বিপন্ন আমাদের পরিবেশমাতা সুন্দরবন, আমাদের দক্ষিণাঞ্চল। এটি মেনে নেয়া যায়না।
বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে পশুর নদী ও এর পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকা ডলফিনের জন্য সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিতর্কিত ইআইএ রিপোর্টেও দুর্লভ প্রজাতির স্বাদু পানির ডলফিন ও বিলুপ্তপ্রায় নোনাজলের কুমিরের বিচরণক্ষেত্র হিসেবে এখানকার কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার সেই বিচরণক্ষেত্রের মধ্য দিয়েই হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট, এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত কয়লাবাহী হাজার টনের জাহাজ চলাচলের নৌরুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা লাগবে। আর দ্বিতীয় পর্যায় শেষে যখন এর উৎপাদন দিগুণ হবে তখন দৈনিক প্রায় ২৬ হাজার টন কয়লা ব্যবহৃত হবে এই প্লান্টে। আকরাম পয়েন্টে এই বিপুল পরিমান কয়লা প্রতিদিন বড় জাহাজ থেকে ছোট নৌযানে স্থানান্তর করা হবে এবং সেখান থেকে তা রামপালে যাবে। এভাবে বড় জাহাজ থেকে ছোট নৌযানে কয়লা স্থানান্তরের সময় এবং সুন্দরবনের কূলঘেঁষা পশুর নদী দিয়ে তা পরিবহনের সময় প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে বিষাক্ত কয়লা নদীর পানিতে সরাসরি নিক্ষিপ্ত হবে। এছাড়া প্রতিদিন কয়লা বহনকারী জাহাজের কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যও সুন্দরবনের কম ক্ষতি করবে না। নিয়মিত কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের কারণে অপ্রশস্ত এই নদীর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
এই প্লান্টে ব্যবহৃত কয়লা পরিশোধনের কাজে পশুর নদীর পানি ব্যবহৃত হবে এবং সেই দূষিত পানি আবার পশুর নদীতেই ফিরে যাবে। উচ্চমাত্রার বিষাক্ত উপাদানযুক্ত উত্তপ্ত সেই পানি নিঃসন্দেহে পশুর নদীর উপর নির্ভরশীল উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীকে ধ্বংস করবে। শুধু তাই নয়, প্রচুর পরিমাণে কার্বণ ডাই অক্সাইড, বিষাক্ত সালফারসহ অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস নির্গমণের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ প্লান্ট সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য মারাত্মক উন্নয়ন বিপর্যয় ডেকে আনবে। প্রত্যাখাত ইআইএ রিপোর্ট অনুসারেই এই প্লান্ট হতে বছরে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। ক্রমাগত উৎপাদিত এই বিশাল পরিমান ছাই জমা করার জন্য ১০০ একরের একটি ছাইয়ের পুকুর তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। সেই বিষাক্ত ছাইয়ের পুকুর থেকে পশুর নদীর দূরত্ব হবে মাত্র ১২০ মিটার।
সংশ্লিষ্ঠ বিশেষজ্ঞদেরর অনেকেই এই প্রকল্পকে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’স মনস্টার’ প্রকল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যা তার সৃষ্টিকর্তাকেই ধ্বংস করে। তারপরেও কেন এই বিদ্যুৎ প্লান্ট? কাদের জন্য বিদ্যুৎ দরকার? এদেশের মানুষের জন্য। বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের ফলে যদি কোনো পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটে, তাতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? এদেশের মানুষ। তাহলে রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মিত হলে যে মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আমাদের সুন্দরবন বিপন্ন হবে সে কথা জনগণকে না জানিয়ে এই প্লান্ট নির্মিত হবে কেন? কার স্বার্থে? দেশের মানুষকে যদি সততার সাথে জানানো হয় যে, রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্লান্ট হলে, বাংলাদেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বণাঞ্চলের অবশিষ্ট যোগনদাতা, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যাগ্রোভ বন, আইলা ও সিডরের মত প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচাইতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম, আমাদের অহংকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি, ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় জায়গা করে নেয়ার প্রতিযোগিতায় পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সুন্দরবনের সামান্যতম ক্ষতি হবে তাহলে এদেশের মানুষ রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট চাইবে না।
আমরা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে এই দেশকে আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ রেখে যেতে চাই। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, দেশের মানুষের জন্য বিদ্যুৎ দরকার; মানুষের আবাসভূমি ধ্বংস করে, পরিবেশ বিনষ্ট করে, মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে বিদ্যুৎ নয়। সব যুক্তি অগ্রাহ্য করে সরকার যেভাবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে তা প্রতিরোধ করা না গেলে আমাদের অহংকার ও আশ্রয়ের সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে না। এদেশের লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক তরুণ-তরুণী যে বাধভাঙগা আবেগ নিয়ে সপ্তম আশচর্যের তালিকায় আমাদের সুন্দরবনের নাম লেখবার জন্য ভোট দিয়েছিলেন তারা নিশ্চই সুন্দরবন ধংসের এই প্রকল্পকে মেনে নেবে না। সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল নিশ্চয়ই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আসুন আমরা সকলে মিলে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ‘না’ বলি এবং আমাদের পরিবেশমাতা সুন্দরবনকে ধ্বংস করার সব চক্রান্ত রুখে দিই।
(৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ এর সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত)
মোহাম্মদ গোলাম রববানী
সহযোগী অধ্যাপক
ইতিহাস বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল:rabbani_ju@yahoo.com