?> নারায়ণগঞ্জে ভারতীয় বিনিয়োগে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে « NCBD – National Committee of Bangladesh

Wednesday, May 29th, 2013

নারায়ণগঞ্জে ভারতীয় বিনিয়োগে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যার পারে কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের ৪৬ একর ভূমিতে ভারতের আভ্যন্তরিন কনটেইনার পোর্ট নির্মাণের বিষয়ে একটি ধূম্রজাল তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের ফলে এই ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে পোর্টের অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় কাজ প্রায় শেষের পথে। কন্টেইনার সরানো ও উঠানামার যন্ত্রপাতি স্থাপন ও শেষ পর্যায়ের কিছু কাজ বাকী রয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১০ মে এই পোর্টের প্রযুক্তিগত ও বানিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে সে দেশের সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রদান করেছে। দরপত্রের টার্মস অব রেফারেন্সে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে ৪৬ একর জমি রয়েছে কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট অব বেঙ্গল লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের সাথে যৌথ উদ্যোগে ঐ জমিতে একটি নৌ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। টার্মিনাল নির্মানের কারিগরি ও বানিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য ভারত সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ দরপত্র আহ্বান করেছে।’ এই পোর্ট নির্মাণ সম্পর্কিত বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা লজ্জাজনক, হতাশাব্যঞ্জক ও জাতীয় স্বার্থ-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গত ২৫ মে নৌ-পরিবহনমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এক সংবাদ পত্রে বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের পোর্টের বিষয়ে সরকার অবগত আছে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কুমুদিনি কল্যাণ ট্রাষ্টের সাথে যৌথ উদ্যোগে ভারত এই আভ্যন্তরিন বন্দর নির্মাণ করবে।’ এর দুই দিন পর উক্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার নারায়ণগঞ্জে আভ্যন্তরিন পোর্ট নির্মানের জন্য ভারত সরকার বা ভারতীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোন ধরনের অনুমতি দেয়নি। এব্যাপারে কোন ধরনের চুক্তি বা আলোচনা ও হয়নি।’

এদিকে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপ বিভাগ এই সমীক্ষার বিষয়ে জানে না। বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অংশীদারী বিষয়ক প্রশাসন। কুমুদিনির সঙ্গে ভারতের কন্টেইনার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের (কনকর) আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ অপরদিকে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন সূত্র বলছে, এই সমীক্ষাটি বানিজ্য স¤প্রসারণের জন্য নেওয়া একটি পদক্ষেপ। এতে দুই সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই। কাজেই এই সমীক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশকে জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই।’ আমরা মনে করি ভারতের হাই কমিশন সূত্রের বক্তব্য ধৃষ্টতাপূর্ণ, কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও স্বাধীনতা সাবভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ।

প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের সরকার জানে না অথচ অন্য দেশের সরকার এ দেশের ভূমিতে পোর্ট নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করে কি করে? দুই দিন আগে যুগ্ম সচিব বললেন সরকার অবগত, আর দুই দিন পর মন্ত্রণালয় বলছে সরকার কিছু জানেনা, সরকারের সম্পৃক্ততা নেই। সম্পৃক্ততা নেই কথার সাথে অসংখ্য প্রশ্ন সামনে চলে আসে :

১) একটি কল্যাণ ট্রাষ্ট এমনি বানিজ্যিক পোর্ট সরকারের অনুমোদন ছাড়া কি করে নির্মার্ণ করতে পারে ?

২) একটি বেসরকারী কল্যাণ ট্রাষ্ট ভূমির মালিকানা স্বত্বের ভিত্তিতেই দেশের সরকারকে না জানিয়ে, অনুমতি না নিয়ে অন্য দেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারে কিনা ?

৩) বহিঃশক্তির আভ্যন্তরিন ভূখন্ড ব্যবহারে দেশের সরকারের এহেন নির্লিপ্ততা সংবিধানের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ কিনা ?

৪) এই পোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে ? এর আয়ের অর্থ কোন পক্ষ কতটা পাবে তা ষ্পষ্ট হয়েছে কিনা ?

আমরা অবিলম্বে সরকারকে তার ধোঁয়াশা অবস্থা দূর করে বিষয়টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগনকে খোলাখুলি জানানোর দাবী জানাই। এ বিষয়টি জানা জনগনের সাংবিধানিক অধিকার। মনে রাখতে হবে কুমুদিনি ওয়েরফেয়ার ট্রাষ্ট যে ভূমি সমূহের স্বত্বাধীকারী তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ভূখন্ড, ভারতের নয়। কুমুদিনিকে বাংলাদেশের নিয়ম, আইন ও রীতিনীতি মেনে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার কথা বিবেচনায় রেখেই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিবে বলেই আমরা মনে করি। তবে সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক আমরা জনগন জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্তই মেনে নেব না। জনগনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করব।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি
নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা