?> আমাদের সুন্দরবন আর একটি কোম্পানীর বিদ্যুৎকেন্দ্র « NCBD – National Committee of Bangladesh

Monday, February 25th, 2013

আমাদের সুন্দরবন আর একটি কোম্পানীর বিদ্যুৎকেন্দ্র

কোম্পানীর জালিয়াতি আর জোচ্চুরীর কথা উঠলেই মনে পড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কথা- যে কোম্পানী ব্যবসার নাম করে এসে আমাদের স্বাধীনতা হরণ করে, একশ বছর ধরে চলে এদের অত্যাচার, শোষণ আর সম্পদ পাচার। একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রত্যক্ষ শোষণের সুযোগ না থাকলেও ওই কোম্পানী ব্যবস্থার জালিয়াতি, ছল-চাতুরী আর জোচ্চুরী আমরা এখনও দেখি আমাদের চারপাশের নানা ক্রিয়াকলাপে। এবারের সেই কোম্পানীটির নাম বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানী, এবার জালিয়াতীর স্বীকার হতে যাচ্ছে আমাদের অহংকারের সুন্দরবন আর জালিয়াতীর সর্বশেষ দলিল হচ্ছে সদ্য প্রকাশিত পরিবেশগত সমীক্ষা রিপোর্ট।

যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বে পরিবেশগত সমীক্ষা রিপোর্ট বা ইআইএ আধুনিককালের অনিবার্য দলিল। এখানে পরিবেশের উপর কোন প্রকল্পের প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ, প্রচ্ছন্ন-অপ্রচ্ছন্ন সকল প্রভাবের সত্যভাষণ তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে এই ইআইএ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হয় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে কি-না। কিন্তু বাগেরহাটের রামপালে ২৬৪০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির ক্ষেত্রে চুক্তি সই, জমি অধিগ্রহণ, জোর পূর্বক স্থানীয়দের উচ্ছেদ ইত্যাদি নানা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মোড়কে কাজ শুরু হবার ২ বছর পর নিয়ম রক্ষার ইআইএ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ইআইএ এর মত একটা স্পর্শকাতর রিপোর্টে যদি-তবে, হয়তোবা, আশা করা যায়, ধারণা করা হচ্ছে- এ জাতীয় আড্ডাবাজী কথাবার্তার সুযোগ একেবারেই নেই। এই ইআইএ রিপোর্টের তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশে ৩০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ভারতের মধ্যপ্রদেশে ২০১০ সালে বাতিল হয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি প্রকল্প। হয়তোবা বাতিল হয়ে যাবার ভয়েই দু’বছর আগে থেকেই রামপাল প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে, হয়তোবা বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা থেকেই ইআইএ রিপোর্টে সত্যকে আড়াল করে নানা গুরূত্বপূর্ণ দিক দূর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অবস্থানগত ছাড়পত্র, উপজেলা পরিষদের অনাপত্তিপত্র, ভূমি দখল হস্তান্তর প্রত্যয়নপত্র, বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ইত্যাদি নানা দলিলাদি এই রিপোর্টে উপস্থাপন করে প্রকল্পটির যথার্থতা জাহির করার প্রচ্ছন্ন প্রবণতা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিন্মে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হলঃ

প্রকল্পটি কত বড়?

 

রামপালের বর্তমান আলোচিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২৬৪০ মেগাওয়াটের পরিকল্পিত প্রকল্পের একাংশ। সদ্য প্রকাশিত ইআইএ রিপোর্টে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বারবার উঠে এসেছে ভবিষ্যতে সমক্ষমতার আরো একটি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা। আমাদের দেশে সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রয়েছে ঘোড়াশালে যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯৫০ মেগাওয়াট। যদি ধরেও নেই যে, ভবিষ্যতে ১৩২০ মেগাওয়াটের আরো একটি কেন্দ্র সেখানে স্থাপিত হবে না, তারপরও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ- যেটি পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি (ইসিআর, ১৯৯৭) অনুসারে বিপদজনক শ্রেণীভুক্ত বলে এই রিপোর্টেই স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

সুন্দরবন থেকে কত দূরে?

 

সুন্দরবন থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার ধরে ৪ কিলোমিটার নিরাপদ দূরত্বের মারপ্যাচে প্রকল্পটি সঠিক জায়গাতেই হচ্ছে বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু হিসেবটি এত সরলভাবে নেয়ার কোন সু্যোগ নেই। এটি হতে যাচ্ছে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার জন্য বছরে প্রয়োজন হবে ৪৭ লক্ষ ২০ হাজার টন কয়লা। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানীকৃত এই কয়লা বোঝাই বড় বড় জাহাজ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পশুর নদীতে চলাচল করবে ৫৯ দিন আর অগভীর অংশে কয়লা আনার জন্য ছোট লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করবে বছরে ২৩৬ দিন। এর অর্থ হচ্ছে বিদ্যুতকেন্দ্রটি তাত্ত্বিকভাবে নিরাপদ স্থানে হলেও এই কেন্দ্র সচল রাখতে সার্বিক কাযক্রম চলবে সুন্দরবনের বুকের উপর দিয়েই। এছাড়া রামপালের এই জায়গাটি যে একসময় সুন্দরবনেরই অংশ ছিল তা এই ইআইএ রিপোর্টে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে সুন্দরবনও যে নগরায়নের আওতার মধ্যে চলে আসবে সে বিষয়েও ইংগিত করে বলা হয়েছে- যদি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় তবে বিভিন্ন সরকারী অফিস-আদালত এখানে স্থাপিত হবে এবং শিল্প মালিকেরা এ অঞ্চলে আসতে আগ্রহী হবে।

হতাশার ব্যাপার হচ্ছে, যে ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানীর সাথে কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে সেই ভারতেরই ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন এ্যাক্ট ১৯৭২ অনুযায়ী বাঘ-হাতি সংরক্ষণ অঞ্চল, জাতীয় উদ্যান এবং জীব বৈচিত্র্যের জন্য গুরূত্বপূর্ণ বনাঞ্চলের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী করা যায় না।

মালয়েশিয়ার সাবাহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন তাবিন অঞ্চল, ৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী তান সাংকারান মেরীণ পার্ক, এমনকি ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চল বিবেচনায় এনে কোন প্রভাব পড়বে কিনা তা সুস্পষ্টভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছিল।

সুন্দরবনের উপর প্রভাব কী এবং কতটা?

 

সুন্দরবন শুধুমাত্র ৬০০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি বনাঞ্চল নয়, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য শুধু ইউনেস্কো ঘোষিত একটি ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইটই নয়, এটি বৈশ্বিক গুরুত্ব সম্পন্ন রামসার এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নানা প্রাজাতির জীবজন্তুর প্রাকৃতিক আশ্রয়ক্ষেত্রই নয়। এই বন বিভিন্ন ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে উপকূলীয় মানুষকে বাচানোর একমাত্র রক্ষাকবচ। এটি পাঁচ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার একমাত্র আশ্রয়। এই সুন্দরবন পৃথিবীতে একটিই। এটি আমাদের অহংকার। অথচ এই অনন্য সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিপন্নকারী একটি মেগাপ্রজেক্ট হতে যাচ্ছে দায়সারা সব যুক্তি আর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে। এই প্রেক্ষিতে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলঃ

– পৃথিবীতে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দূষণমুক্ত প্রযুক্তি (clean coal technology) বলতে কিছু নেই। ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টন বর্জ্য তৈরী করে। ইআইএ’তে বলা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার কাজে পশুর নদী থেকে ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করার পর পশুর নদীতে ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নির্গমন করা হবে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুন্য নির্গমন (zero discharge) নীতি অনুসরণ করা হয়। এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, গ্রীষ্মে নির্গত পানির তাপমাত্রা হবে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতকালে হবে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ এক গবেষণায় দেখা গেছে ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর অধিক তাপমাত্রায় মাছের বৈচিত্র্যতা আশংকাজনকভাবে কমে যায়।

– এই ইআইএ রিপোর্টে সুন্দরবনের বাঘ এবং হরিণের উপর নিশ্চিত ক্ষতিকর প্রভাব একেবারে অস্বীকার না করে তা ভবিষ্যৎ নিরীক্ষণের জন্য তুলে রাখা হয়েছে (Tiger and dear has been considered as an Important Ecological Component to examine and evaluate the potential impact of power plant).

– এই ইআইএ রিপোর্টে দুর্লভ প্রজাতির স্বাদুপানির ডলফিন আর বিলুপ্তপ্রায় নোনাজলের কুমিরের নাজুক অবস্থার কথা বলে এদের বিচরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে আবার অন্যদিকে সেই বিচরণক্ষেত্রের মধ্য দিয়েই হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট আর আকরাম পয়েন্ট থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত হাজারটনী ছোট-বড় জাহাজ চলাচলের নৌরুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই সাথে কয়লা পরিবহণকারী এসব জাহাজ থেকে কয়লার গুড়া, টুকরা কয়লা, তেল, ময়লা আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।

– এই পরিবেশগত সমীক্ষা রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে, রামপাল এমন একটি জায়গায় অবস্থিত যেখান থেকে নির্গত ধোয়া বা ছাই সুন্দরবনে “হয়তোবা পৌছাবে না” । আবার এই রিপোর্টেরই আরেক জায়গায় বলা হয়েছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে চুল্লী নির্গত ধোয়া বা ছাই সুন্দরবনে “হয়তোবা পৌছাতে পারে।” এই ‘হয়তোবা’ এর মারপ্যাচে হলে কি হবে সে বিষয়টি চতুরতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

-এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণকালে সাড়ে চার বছর ধরে প্রায় ৮ হাজার জন কাজ করবে। এখান হতে প্রতিদিন যে ৮ টন বর্জ্য তৈরী হবে সেটির ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে এখানে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্জ্য “হয়তোবা তৈরী হতে পারে।” যদি আমরা ধরে নেই যে দৈনিক এই ৮ টন বর্জ্যের শেষ আশ্রয় হবে পাশেই বয়ে চলা পশুর নদী তবে সুন্দরবনে বাস্তু-সংস্থানের কী ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়।

– ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে এই কেন্দ্র হতে বছরে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। ক্রমাগত উৎপাদিত এই বিশাল পরিমাণ ছাই কাজে লাগানোর (!) জন্য প্রথমে বলা হয়েছে প্রকল্প এলাকার ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার কথা। এরপর বলা হয়েছে সিমেন্ট কারখানা, ইটভাটায় ব্যবহার করার কথা। এরপর বলা হয়েছে ছাই রপ্তানীর কথা। অথচ বড়পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত দৈনিক ৩০০ মেট্রিকটন ছাই মারাত্নকভাবে পরিবেশ দূষণ করছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পযন্ত চার বছরে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টন ছাই পুকুরে জমা করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এই প্রকল্পেও ১০০ একরের  একটি ছাইয়ের পুকুর তৈরীর কথা বলা হয়েছে, পশুর নদী থেকে যার দূরত্ব হবে মাত্র ১২০ মিটার। এই বর্জ্য ছাইয়ের বিষাক্ত ভারী ধাতু বৃষ্টির পানির সাথে মিশে কিংবা চুইয়ে প্রকল্প এলাকার মাটি ও মাটির নীচের পানির স্তরএবং পশুর নদীর সাম্ভাব্য ভয়াবহ দূষণ সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

উন্নয়নের নেশায় বুঁদ হয়ে আমরা পাহাড় কেটে আবাসন শিল্প গড়ে তুলি, খাল দখল করে বাড়ি তৈরী করি, তিতাস ভরাট করে এপাড়-ওপাড় রাস্তা বানাই, বুড়িগঙ্গা পরিণত করি ভাগাড়ে। এবার আমরা করব রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। গাছপালা, জন্তু-জানোয়ার রেখে কী হবে?! তার চেয়ে বরং ২৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র আর এর আশেপাশে কল-কারখানা, অফিস-আদালত, শপিংমল, এপার্টমেন্ট গড়ে তুললে সুন্দরবনের বেদখল হয়ে থাকা জায়গাটা আমাদের কাজে লাগবে!

আসছে কোন এক ছুটিতে তাড়াতাড়ি সুন্দরবন ঘুরে আসুন, পরে কোন এক সময়ে না হয় সেখানকার ‘উন্নয়ন’ দেখে আসবেন।

অবশিষ্টঃ    “পৃথিবী খারাপ মানুষের কাজের জন্য ধ্বংস হবে না, ধ্বংস হবে তাদের জন্য যারা খারাপ মানুষের কাজ দেখে কিন্তু কিছু করে না” – আলবার্ট আইনস্টাইন