?> মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সংক্ষিপ্ত নোট « NCBD – National Committee of Bangladesh

Tuesday, October 27th, 2009

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট সংক্ষিপ্ত নোট

সংবিধান সূত্রে জনগণই জ্বালানী তথা প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক এই বিধান উপেক্ষা করে গত অনির্বাচিত সরকার নিজেরা ভূয়া মালিক সেজে জনগণের সম্মতির তোয়াক্কা না করে সাগর বক্ষের তেল-গ্যাস সম্পদ ইজারা দানের উদ্যোগ নেয়। এই লক্ষ্যে একটি মডেল উৎপাদন বণ্টন চুক্তি অনুমোদন করে। উৎপাদন বণ্টন চুক্তির মডেল প্রণয়ন করেন আমলারা আর ভেটিং করেছেন জনগণের প্রতিনিধির স্থলে কয়েকযুগ ধরে বহুজাতিক কোম্পানির উপদেষ্টা সেবাদানকারী আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। বলা বাহুল্য এই মডেল চুক্তিটি দেশের জন্য সর্বনাশা। তরলায়িত করে ৮০% গ্যাস রপ্তানির বিধান মডেল চুক্তিতে ছিল। অথচ আমরা নিজেরাই গ্যাস সংকটে ভুগছি। অতিসত্ত্বর গ্যাস সংকট মোচনের কথা বলে অনির্বাচিত সরকার তড়িৎ গতিতে বহুজাতিক কোম্পানিকে ইজারা দেবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, মাত্র কয়েক মাস পরে আসন্ন নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে। এই উদ্যোগ অনুযায়ী তদানীন্তন সরকার সমুদ্র এলাকাকে ২৮টি ব্লকে ভাগ করে ২০০৮ সালে ফেব্র“য়ারি মাসে টেন্ডার আহ্বান করে ও ৩ মাস পর, মে মাসে টেন্ডার গ্রহণ করে। গৃহীত টেন্ডারগুলোর মূল্যায়ন করে ২০০৮ এর জুলাই মাসে ২৮টি ব্লকের মধ্যে আটটি ব্লক যথা – ১০, ১১, ১২, ১৫, ১৬, ১৭, ২০ ও ২১ বহুজাতিক কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসকে এবং অন্য একটি ব্লক (৫নং) অন্য এক বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লোকে ইজারা দানের জন্য নির্বাচন করে। তদানীন্তন সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা জাতীয় স্বার্থের প্রতি বিশ্বাস ঘাতক ড. ম. তামিম বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি সদা বিশ্বস্ত থেকে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন করিয়ে নেবার জন্য বারংবার চেষ্টা করে যান। কিন্তু তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তথা জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখে গত অনির্বাচিত সরকার এই সর্বনাশা ইজারা চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেনি।

Financial Express পত্রিকায় এসেছে ড. তামিমের স্থানে আসীন একই চরিত্র বিশিষ্ট ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপরোক্ত ৯টি ব্লকের চুক্তি যথাসাধ্য অধ্যবসায় সহকারে সম্পাদন করতে যাচ্ছেন। তাঁর পূর্বসূরী বেঈমান ড. তামিম যা করে যেতে পারেননি, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সেই বিশ্বাসঘাতকের অসমাপ্ত কাজ সুসম্পন্ন করে যাবেন।

যদি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার এই সর্বনাশা ইজারা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে ফেলেন, তাহলে চিরকালের জন্য সাগরের এই ৯টি ব্লকে তেল-গ্যাস জনগণের হাতছাড়া হয়ে যাবে। প্রণীত মডেল উৎপাদন বণ্টন চুক্তি অনুসারে বহুজাতিক কোম্পানি দেশের ৮০ শতাংশ গ্যাস তরলায়িত করে বিদেশে পাচার করতে পারবে। বাংলাদেশের ভাগ অর্থাৎ মাত্র ২০ ভাগ গ্যাস আমাদের ব্যবহারের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করে সাগর থেকে দেশের অভ্যন্তরে আনতে হবে। তা যদি ব্যয়বহুল হয় তবে এই ২০ ভাগ গ্যাসও বাধ্য হয়ে বহুজাতিক কোম্পানির কাছে বিক্রয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানি শতভাগ গ্যাস পাচার করতে পারবে।

জনগণের দাবী এই যে, জনগণের অনুমোদন বর্জিত শুধুমাত্র ড.কামালের ভেটিং প্রাপ্ত মডেল পিএসসি এক্ষুনি বাতিল করতে হবে। দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা অনুমোদন সাপেক্ষে নতুন মডেল পিএসসি প্রণয়ন করতে হবে। তাতে এই বিধান থাকবে যে, গ্যাসের সমুদয় অংশ শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। সামান্য অংশও রপ্তানি করা যাবে না। তাই, যখন যে কয়টি ব্লকের গ্যাস তুললে আমাদের সম্পূর্ণ সচ্ছল চাহিদা পূরণ করা যায়, গ্যাস উত্তোলন কাজ সে কয়টি ব্লকে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এইভাবে বহুবছর ধরে সকল গ্যাসবাহী ব্লকগুলি থেকে বাংলাদেশের প্রয়োজন মেটানো হবে। স্থলভাগের চুক্তির মতোই সমুদ্রের গ্যাসের চুক্তি অনুযায়ী বহুজাতিক কোম্পানি তাদের প্রাপ্য অংশ আমাদের নিকট ন্যায্য ও সমতা ভিত্তিক দরে বিক্রি করতে বাধ্য থাকবে। তবে স্থল ভাগে যেভাবে অসম চুক্তি হয়েছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, মডেল চুক্তি যেন সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক হয় এবং কোম্পানি নির্বাচন যেন প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতাভিত্তিক হয়। অধিকন্তু কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা হস্তান্তরের জন্য আবশ্যিকভাবে বাপেক্সকে যথেষ্ট অংশের অংশীদার করতে হবে।