?> সমুদ্রসীমা নির্ধারণ না করে, জনগণকে না জানিয়ে কোন তেল-গ্যাস চুক্তি করা যাবে না « NCBD – National Committee of Bangladesh

Wednesday, February 6th, 2008

সমুদ্রসীমা নির্ধারণ না করে, জনগণকে না জানিয়ে কোন তেল-গ্যাস চুক্তি করা যাবে না

[০৬.০২.২০০৮ তারিখে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সংবাদপত্রে প্রকাশার্থে নিম্নোক্ত বিবৃতিটি প্রদান করেন।]

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকার তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা ২৭টি ব্লকে ভাগ করেছে এবং শীঘ্রই তার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। ইতোমধ্যে এর জন্য একটি উৎপাদন অংশীদারী চুক্তির (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট বা পিএসসি) মডেল দাঁড় করানো হয়েছে এবং একটি আইনজীবি প্রতিষ্ঠান দিয়ে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আগে এরশাদ আমলে বাংলাদেশের ভূমি ২৩টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছিল এবং পরবর্তী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ জনগণের সাধারণ সম্পত্তি হলেও এসব চুক্তি করা হয়েছে জনগণের অগোচরে। কিন্তু ক্রমে পরিস্কার হয়েছে যে, এই চুক্তিগুলো দুর্নীতিযুক্ত, জাতীয় স্বার্থবিরোধী এবং অর্থনীতির উপর বোঝাস্বরূপ। এসব চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সম্পদ বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিকে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ দিয়ে মুনাফা গড়ছে বিদেশী কোম্পানি অন্যদিকে তাদের বেশী বেশী জায়গা দেবার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করা হচ্ছে জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় মার্কিনী ও কানাডীয় কোম্পানির অদক্ষতা ও অবহেলায় বিপুল গ্যাস সম্পদ বিনষ্ট হলেও ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন কার্যকর ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এই ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও চুক্তিতে স্পষ্টভাবে ছিল না বলে জানা যায়। গত ১০/১২ বছরে একাধিক বিদেশী কোম্পানি তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসার অংশ হিসেবে এদেশে তাদের মালিকানা হস্তান্তর করেছে। বলা হয় এসব বিষয়েও কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। এর অর্থ হলো চুক্তিগুলোই এমন হয়েছিল যাতে বাংলাদেশ সম্পদে ধ্বংস কিংবা এই সম্পদকে নানা আন্তর্জাতিক ব্যবসার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করলেও এ সম্পর্কে তাদের কোন জবাবদিহিতা করতে হয় না।

এসব জাতীয় স্বার্থবিরোধী ধ্বংসাত্মক চুক্তিগুলো গোপন ও বহাল রেখেই আবার আরও বিশাল সম্ভাবনাময় সমুদ্র ক্ষেত্রে ব্লক বরাদ্দের দরপত্র আহ্বায়ন করা হচ্ছে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় বিপুল তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ পাবার সম্ভাবনা উজ্জল, কিন্তু এই সমুদ্র সীমা এখনও অনির্ধারিত রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত যে সীমা সেই সীমা নির্ধারণ ও তাতে পাকাপাকি দখলীস্বত্ত্ব নেবার ক্ষেত্রে অতীতের বিভিন্ন সরকার ক্ষমার অযোগ্য শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে, বর্তমান সরকারও এবিষয়ে কোন মনোযোগ দিচ্ছে না। এই সুযোগে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় ভারত ও মায়ানমার দখল নিচ্ছে। এবং শুধু তাই নয়, এসব ক্ষেত্র তারা বিভিন্ন বহুজাতিক তেল কোম্পানির কাছে বরাদ্দও দিচ্ছে।

জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের দাবী, অবিলম্বে সমুদ্র সীমা যথাযথভাবে নির্ধারণ ও তার উপর বাংলাদেশের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হোক। দ্বিতীয়ত, নতুন দরপত্র আহ্বানের আগে আগের চুক্তিগুলো প্রকাশ ও অসম-অন্যায় চুক্তি বাতিল করা হোক। তৃতীয়ত, যে পিএসসি মডেল প্রণয়ন করা হয়েছে সেটা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হোক যাতে আগের মতো ঘটনা না ঘটে। চতুর্থত, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাপেক্সসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক, বিধ্বংসী নীতিমালা পরিবর্তন করে যথাযথ দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। পঞ্চমত, সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দক্ষতা তৈরির জন্য সব ব্লকে বাপেক্সকে যুক্ত রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক। বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ নিয়ে কোন চুক্তি জনগণকে না জানিয়ে বা তার সম্মতি না নিয়ে করা যাবে না। এই সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধ আর স্বচ্ছতার কথা বলছেন। জ্বালানী সম্পদ ক্ষেত্রে আমরা তার বহিঃপ্রকাশ দাবী করি।