Tuesday, May 12th, 2009
আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীর জন্য আমাদের কর্মসূচী
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যিক ব্যবস্থার অন্যতম খুঁটি আইএমএফ এর একটি মিশন বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে রীতিমতো তাড়া খেয়ে। তারা বাংলাদেশকে ‘সাহায্য করতে ‘ পিএসআই বা যে কোন একটি চুক্তি স্বাক্ষরে দুই সপ্তাহের দেন-দরবারে এসেছিল। পিএসআই বা পলিসি সাপোর্ট ইন্সট্রুমেন্ট হল এমন একটি চুক্তি যার অধীনে আইএমএফ কোন অর্থসংস্থান করবে না কিন্তু বিভিন্ন নীতিগত বিষয়ে সরকারকে ‘পরামর্শ’ দেবে। আর তা মানলে সিগনাল দেবে অন্য অর্থ যোগানদারদের, যার উপর ভিত্তি করে অন্যরা অর্থ যোগানের সিদ্ধান্ত নেবে। এই ধরণের চুক্তির সূচনা ২০০৫ সালে। যে ধরণের আর্থিক সংকটের উপর ভর করে এসব সংস্থা কর্তৃত্ব স্থাপন করে সেই সংকট মোচনে অনেক দেশ আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের দায় মিটিয়ে স্বাধীনভাবে চলা শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী ক্রমে নিন্দিত আর একেবারে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার মুখে আইএমএফ এখন নতুন রাস্তা খুঁজছে, পিএসআই তার একটি। নাইজেরিয়াসহ বিপর্যস্ত কয়েকটি দেশ ছাড়া কেউ এই চুক্তি করতে রাজী নয়। বাংলাদেশ নিয়ে তারা অনেক আশাবাদী ছিল কিন্তু প্রতিবাদের মুখে সরকারও আর এই দায় নিতে রাজী হয়নি। আপাতত।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সকল ব্যবসায়ী সংগঠন আইএমএফ প্রেসক্রিপশন প্রত্যাখ্যান করার জন্য ডাক দিয়েছেন। অনেকেই অবাক, ঘটনা কী? এটাই ঘটনা। আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে দাঙ্গা, সংঘাত সহিংসতা, দারিদ্র্য, আর্থিক সংকট বেড়েছে। লুণ্ঠন, দুর্নীতি তো আছেই। দুর্নীতিবাজ শাসক, গোষ্ঠী, আমলা, কনসালট্যান্ট ছাড়া তাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখাই সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা তাদের অনেক কর্মসূচির সুফলভোগী ঠিকই, কিন্তু যেহেতু এসব সংস্থা শেষ পর্যন্ত বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, তাই এক পর্যায়ে গিয়ে দেশী শিল্পোদ্যোক্তা, বিশেষত আত্মমর্যাদা আছে এরকম মানুষদের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য। এদের চাপে বিপর্যস্ত বহুদেশই এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বহু দেশেই যখন আইএমএফ ঘৃণিত, প্রত্যাখ্যাত সে সময় বাংলাদেশে তারা হাজির পিএসআই করতে। যা বাংলাদেশের ঘাড়ে দাসত্বের শৃঙ্খল পড়ানোর আরেক কর্মসূচি ছাড়া আর কিছু নয়। এদের দরকার মাথাশূন্য, মেরুদণ্ডহীন, ইজ্জতের বোধহীন একটি শাসকগোষ্ঠী, যারা তাদের সকল কথা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেবে, দাসত্বে ধন্য হবে। এসব চুক্তি সেটাই নিশ্চিত করতে চায়। এইসব সংস্থার এরকম মিশন বছরে কতবার এ দেশে আসে সেটা বাংলাদেশের মানুষ সবসময় জানে না। আইএমএফ-এর অফিস যে বাংলাদেশ ব্যাংকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণে তাদের কী ভূমিকা সেটাও বাংলাদেশের মানুষের কাছে জানা নেই।
বিশ্বব্যাংকের কত মিশন সারা বছর আসে আর তাদের এখানকার অফিস থেকে কর্মকর্তারা কতবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে, কতবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আমলাদের তা দেশের মানুষ জানে না। জোসেফ স্টিগলিজ নিজের বিশ্বব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেছিলেন, ‘গরীব’ দেশগুলোতে ‘বিদেশী সাহায্য’ যুক্ত প্রজেক্ট-এর কাগজপত্র আর নিয়ম-কানুন ঠিক করতে করতেই আমলাদের সময় চলে যায়, অন্য কাজ আর করবে কখন? এদের সব ‘উচ্চপর্যায়ের’ গোপন সভায় কী কী আলোচনা হয়, কী কী সিদ্ধান্ত হয় সেটা বাংলাদেশের মানুষ আজও জানে না। বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় যারা থাকে, যারা কনসালট্যান্ট বিশেষজ্ঞ তাদের মাধ্যমে জনগণ জানে যে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ইত্যাদি সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মানুষকে সাহায্য করবার জন্য সদা ব্যস্ত। তাদের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারে না। এসব সংস্থা হল ‘দাতা সংস্থা’!
এ কথাটা আমাদের সবারই পরিষ্কার হয়ে নেয়া দরকার যে, এসব সংস্থা কোন দাতা সংস্থা নয়। দান করার জন্য হাতেম তাই, হাজী মুহম্মদ মহসীন বা আরপি সাহা আমাদের পরিচিত। কিন্তু এসব সংস্থা কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। এসব সংস্থার গঠন, পরিচালনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সবকিছু বিশ্লে¬ষণ করলে বোঝা যাবে যে, বিভিন্ন দুর্বল দেশে তাদের অর্থসংস্থান একদিকে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত, অন্যদিকে এই অর্থসংস্থান তাদের নিজেদের সাম্রাজ্যিক অস্তিত্বের জন্য, বহুজাতিক পুঁজির বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এই মুহূর্তে তাই বিশ্বের বিভিন্ন দুর্বল দেশ যদি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ধরনের সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ/অনুদান নেয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে শরীরের ভেতর কাজ করা একটা ভাইরাস প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ যেমন ঝরঝরে হয়ে উঠে, এই দুর্বল দেশগুলোও সে রকম ঝরঝরে অবস্থা লাভ করবে। অন্যদিকে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্বাধীন বিশ্বের মোড়ল দেশগুলোর, তাদের বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থাগুলোর, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক আধিপত্যে ধ্বস নামবে। কারণ কী?
যদিও এরকম শুনতে শুনতে আমাদের কান ঝালাপালা যে, এসব সংস্থা আমাদের উন্নয়নের জন্য সভা/সম্মেলন/ওয়ার্কশপ/গবেষণা/সফর করে যাচ্ছে, কিন্তু এসব সংস্থা অর্থসংস্থান করে তাদেরই নিজেদের তাগিদে, নিজেদের প্রয়োজনে। এই অর্থসংস্থান তারা যেভাবে যে শর্তে করে থাকে তাতে এই ঋণের টাকা তাদের অনেক পণ্য চড়া দামে বিক্রির ব্যবস্থা করে। আর এই টাকায় কর্মসংস্থান হয় ঐসব দেশের ধড়িবাজ, অর্ধশিক্ষিত স্মার্ট কনসালট্যান্টদের। তারা আমাদের ঋণের টাকায় মাসে ১০/১৫/২০ লাখ টাকা বেতন নেয়, বছরে এক/দুই/তিনবার দেশে যায়, নানা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে বেড়ায়। এই কনসালট্যান্টদের একটি বিশ্বজোট এখন সচল, যাদের অস্তিত্ব, স্ফীতি নির্ভর করে তথাকথিত এই বিদেশী সাহায্য এর উপর। বাংলাদেশের মতো দেশে এসব কনসালট্যান্ট কিছু না জেনেও তাদের থেকে অনেক যোগ্য ব্যক্তির মাথার উপর ছড়ি ঘোরায়। সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, দলিলপত্র সবকিছুই তাদের দখলে। অনেক কনসালট্যান্ট নিজের স্থায়ী জায়গা তৈরি করে দশকের পর দশক এখানে কখনো অর্থ কখনো খনিজ কখনো শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে নানা প্রজেক্টে আটকে থাকে। এর থেকে লোভনীয় লাভজনক চাকুরি তাদের জন্য আর কোথাও নেই।
বাংলাদেশের সব মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বত্র আমাদের জনগণের ঋণের টাকায় এরকম অনেক কনসালট্যান্ট দেখা যাবে। আর এদের ঔদ্ধত্য কোন মাত্রায় যায় তার অভিজ্ঞতা এ দেশের অনেকেরই আছে। কদিন আগে একজন কনসালট্যান্টের লেখায় ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প বাস্তবায়নের হুমকি পড়লে তার একটা চিত্র পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর কনসালট্যান্টদের পেছনে ঋণের/অনুদানের টাকায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ব্যয় হয়। বাকি টাকায় এখানে একটা সমর্থক ভিত্তি তৈরি হয়। এখানকার কিছু কনসালট্যান্ট, আমলা, মিডিয়া তার ঐ টাকায় ক্ষুদ্র অংশের ভাগীদার হিসেবে কিছু আয়ের মুখ দেখে, এলিট হিসেবে দাঁড়ায় আর উঁচু গলায় ‘বিদেশী সাহায্য’ আমাদের কত দরকার সেই যুক্তি বিস্তার করতে থাকে কনসালট্যান্সি রিপোর্ট, সেমিনার কিংবা ফাইল নোটে। সবচাইতে বিপজ্জনক দিক হল এসব সংস্থার নীতিগত সংস্কারের দিক। ঋণের টাকা দিয়ে তারা নীতি ও প্রতিষ্ঠানে যা যা করে তার প্রভাব বোঝার জন্য আমাদের সামনে নদী, পানি সম্পদ, জ্বালানি সম্পদ, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা, পাট খাত আছে। শুধু পাট শিল্পে উন্নয়নের নামেই বাংলাদেশ ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক থেকে। সেই টাকায় দেশ বিদেশ সফর, কনসালট্যান্সি করে অনেকেই লাভবান হয়েছে আর মূল কর্মসূচি পাট শিল্পে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বদলে ধ্বস নেমেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, সেগুলো দিয়ে নীতি প্রতিষ্ঠান কর্মসূচী যা পরিবর্তন/সংস্কার/উন্নয়ন হয়েছে তার ফলে গ্যাস ব্ল¬কগুলো এখন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে। তাদের কাছ থেকে গ্যাস কিনতে আমাদের এখন প্রতি বছর ১ হাজার কোটি টাকার লোকসান দিতে হয়। বিদ্যুৎ খাতে দেশীয় প্ল্যান্ট না বসিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে বিদ্যুৎ খাত তুলে দেয়ায় প্রতি বছর সেখানে লোকসান যাচ্ছে ১১০০ কোটি টাকারও বেশী। তার দায় মেটাতে তারা অবিরাম পরামর্শ দেয় গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়াতে। এইসব ‘উন্নয়ন সাহায্যের’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন, পানি সম্পদ উন্নয়ন, ব্যাংক সব ক্ষেত্রেই জাতীয় সক্ষমতা আর প্রতিষ্ঠান বিকশিত হবার বদলে প্রায় শেষ অবস্থা। এসব ‘দাতা সংস্থা’ এসব কাজই করে উন্নয়ন কর্মসূচী নাম দিয়ে, আর করে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে। করতে পারে, কারণ এ দেশে দুর্নীতি, লুণ্ঠনের উপর দাঁড়ানো শাসক গোষ্ঠী তাদের কনিষ্ঠ অংশীদার, তাদের কেনা আমলা ও কনসালট্যান্টরা ভূমিকা পালন করে বিশ্বস্ত বাহিনীর।
উন্নয়নের নামে এসব কর্মসূচী দিয়ে তাই বাংলাদেশের মানুষের ঋণ বাড়ে আর কমে জাতীয় সক্ষমতার সুযোগ, ভেঙে পড়ে নিজেদের পায়ের নীচের মাটি, উৎপাদনশীল ভিত্তি। এসব সংস্থার নানা কর্মসূচী এই অর্থনীতির টেকসই ভিত্তি তৈরিতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, আমদানিমুখী অর্থনীতি হিসেবে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে পুরো অর্থনীতিকে। বন্যায় বিপর্যস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ বাড়াতে চাপ দিয়েছে তারাই, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিসহ বিনিয়োগ ব্যয়বহুল করবার নানা কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছিল, বাধা পেয়ে থেমেছে। এদের জন্য বস্ত্রশিল্পের বিকাশও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। দেশী বিদেশী এই জোটের আধিপত্যে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে কয়েক হাজার চোরাই কোটিপতি। অন্যদিকে স্থায়ী কর্মসংস্থান কমেছে, বিমোচনের বদলে দারিদ্র্য আরও টেকসই হয়েছে, সম্পদ ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিরাপত্তাহীনতা ও অধিকতর নাজুকতায় আক্রান্ত হয়েছে। বন, জলাভূমি, নদী-নালা, খাল-বিল, রাষ্ট্রীয় সম্পদের দখলদার দুর্বৃত্তদের আধিপত্য বেড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের নামে তেল, গ্যাস, কয়লা নিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী বহু ধ্বংসাত্মক চুক্তি করা হয়েছে। ফুলবাড়ী অঞ্চলের মানুষ জীবন দিয়ে এরকম এক ভয়াবহ বিনিয়োগ প্রকল্প না ঠেকালে এই খাতে আরও বিপর্যয়ের দিকে আমাদের যেতে হতো।
বাংলাদেশকে সবসময় বলা হয় গরীব। কিন্তু তা ঠিক নয়। মানুষ, পানি, ভূমি, এমনকি খনিজ সম্পদেও বাংলাদেশ সমৃদ্ধ। অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশের পাট ও পাট শিল্প বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাতে পারে; বাংলাদেশের সীমিত তেল, গ্যাস, কয়লা, খনিজ সম্পদ নিজেদের কর্তৃত্বে থাকলে তা এ দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারে; সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা সম্ভব যদি বিদ্যমান বাজারমুখী মুনাফামুখী নীতি পাল্টানো যায়; মানুষ, মাটি ও পানির সার্থক সমন্বয়ে এ দেশ নতুন যাত্রা শুরু করতে পারে। এ সবই সম্ভব বাংলাদেশের জনগণের জীবন ও সম্পদের উপর জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে। আর তা সম্ভব করবার প্রথম শর্ত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির মতো সংস্থাগুলোকে প্রত্যাখ্যান করবার শক্তি অর্জন করা। বিশ্বের বহুদেশ এখন এভাবেই নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করছে। জনগণ যদি বিশ্ব মোড়লদের প্রত্যাখ্যান করতে পারে তাহলে এ দেশে তার দেশী ভাগীদারদেরও জায়গা হবে না।
এরকম একটি পরিস্থিতিতে এখন তিনটি বিষয়ে সবার মনোযোগ ও সক্রিয়তা দরকার:
(ক) এসব অর্থলগ্নীকারী সংস্থাগুলোকে ‘দাতা সংস্থা’ বলা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
(খ) এসব সংস্থার সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি সম্পর্কিত সকল তথ্য আমরা জানতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ নিয়ে চুক্তি হবে আর বাংলাদেশের মানুষ জানবে না তা আর চলবে না। এবং,
(গ) দেশে দেশে এসব সংস্থার বিরুদ্ধে পাবলিক ট্রায়াল হচ্ছে। ২১-২৪ সেপ্টেম্ব^র দিল্লীতে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে গণআদালত বসছে। সেখানে অংশ নিচ্ছে বিশেষজ্ঞসহ বহু সংগঠন। আমাদের দেশেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির বিরুদ্ধে, তাদের সকল প্রকল্প ধরে এর আয়োজন করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা সম্পর্কে তারা যা যা বলে তা এভাবেই কার্যকর করা সম্ভব। অপচয়, দুর্নীতি, সম্পদ, শিল্প সম্ভাবনার বিনাশে তাদের দায়-দায়িত্ব জনগণের সামনে পরিষ্কার হলে বাকি সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন।
ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব স্পষ্ট হয় প্রয়োজনে তার ‘না’ বলার শক্তির মধ্য দিয়ে, একটি জনগোষ্ঠীর শক্তিও স্পষ্ট হয় সে দখলদার, দুর্বৃত্ত আধিপত্যকামী অপশক্তিকে প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা তার উপর।