?> রামপাল রূপপুরসহ প্রাণ বিনাশী প্রকল্প বাতিল করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকশিত করতে হবে « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, July 5th, 2020

রামপাল রূপপুরসহ প্রাণ বিনাশী প্রকল্প বাতিল করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকশিত করতে হবে

বিশ্বজুড়ে করোনা বিপর্যয় এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন ধরন ও জনবিপদের মুখে জাতীয় কমিটির ৬ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ৪ জুলাই এক বৈশ্বিক অনলাইন সংহতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় অংশ নেন বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইটালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনের প্রতিনিধিরা। আরও বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, ফখরুদ্দীন আতিক। সভা সঞ্চালনা করেন ইউরোপীয় কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা ফারুক।

সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘করোনা বিপর্যয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন চিকিৎসা সংকট, কাজের সংকট, খাদ্যের সংকটে বিপর্যস্ত তখন সেসব সমস্যার সমাধানে যাবার বদলে দেশিবিদেশি কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থে সরকার রামপাল মাতারবাড়ীসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিনির্ভর প্রাণ বিনাশী কয়লা প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে; স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য যোগানে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করে দেশবিনাশী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল বরাদ্দ দিয়েছে; ভালো বিকল্প থাকা সত্ত্বেও ব্যয়বহুল অপচয় ও আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার বোঝা জনগণের ওপর চাপাতে যখন খুশি তখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইন করছে; পরিবেশবান্ধব পাটশিল্প বিনাশ করে পরিবেশ ধ্বংসী পথে যাওয়াকেই উন্নয়ন হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। অথচ বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন সম্পর্কে নয়া উপলব্ধি হচ্ছে যে, উন্নয়ন ও ভোগের বর্তমান ধারা বিশ্বের মানুষের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনছে। প্রাণবিনাশী মারণাস্ত্র আর জীবাশ্ন জ্বালানী নির্ভর উন্নয়ন ধারা পরিবর্তন করে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও শিল্পের বিকাশ করতে হবে, প্রাণ প্রকৃতি ও মানুষের জন্য অনুক’ল জ্বালানী ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পূর্ণ রেশনিংসহ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের নামে এসব মানববিধ্বংসী তৎপরতার সাথে বৃহৎ দুর্নীতি-ঘুষ কমিশন জড়িত, এরাই এসব চোরাই অর্থ নিয়মিত বিদেশে পাচার করছে। সেজন্য এই লুটেরাদের প্রতিরোধ করতে প্রবাসীদের সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে। টরন্টোতে ইতিমধ্যে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে তা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও সম্প্রসারিত করতে হবে।’

সভায় বক্তারা বলেন, ‘সরকার একদিকে গ্যাস সংকটের কথা বলে কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠা করে দেশকে ভয়াবহ বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে বসিয়ে রেখে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকায় ২৫টি পাটকল নবায়ন না করে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’ বক্তারা আরও বলেন, ‘ দেশ যখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের মুখে তখন সরকার উপকূল জুড়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশকে আরো বিপদগ্রস্ত করছে। ফুলবাড়ী নিয়ে চক্রান্ত চলছে। করোনাকালেও সরকারের মধ্যে নতুন কোনো উপলব্ধি নেই। চীন, ভারত ও জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগে এসব কয়লা প্রকল্প করা হলেও এই সবগুলো দেশই নিজ নিজ দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসছে। রূপপুরে পারমারবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশকে আরো বিপদে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশে আন্দোলন জোরদার করা দরকার। এজন্য বাংলাদেশের মানুষের পাশে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও যুক্ত করতে হবে। নইলে বাংলাদেশ মহাবিপদে পতিত হবে।’

সভায় রামপাল রূপপুরসহ সুন্দরবন বিনাশী ও দেশবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল, ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, এবং জাতীয় কমিটির প্রস্তাবিত খসড়া মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে সুলভ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব বিষয়ে ধারাবাহিক সেমিনার/ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ১৮ জুলাই বাংলাদেশে দেশব্যাপী সভা সমাবেশ, ২৬ আগষ্ট দেশ ও বিদেশে ফুলবাড়ী দিবস পালন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী সভা সমাবেশ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।