?> সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প ও দুর্নীতির দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং গ্যাস অনুসন্ধান ও পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন « NCBD – National Committee of Bangladesh

Saturday, March 30th, 2019

সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প ও দুর্নীতির দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং গ্যাস অনুসন্ধান ও পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন

মানুষ মরার নয়, বাঁচার উন্নয়ন চাই

সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প ও দুর্নীতির দায়মুক্তি আইন বাতিল এবং
গ্যাস অনুসন্ধান ও পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের দাবিতে
সাংবাদিক সম্মেলন

 

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
শুভেচ্ছা নেবেন।
আপনারা দেখছেন যে, নিমতলী-চুড়িহাট্টা থেকে বনানী, সড়ক থেকে ভবন, কারখানা থেকে অফিস সর্বত্রই ‘উন্নয়নের’ মৃত্যুক’প তৈরি করা হয়েছে। সীমাহীন লোভ, ক্ষমতাবানদের বিশ্বাস-আশ্বাসঘাতক , জনস্বার্থের প্রতি চরম অবজ্ঞা, ক্ষমতার দাপট ও দুর্নীতি, সর্বোপরি জবাবদিহির ভয়ংকর অনুপস্থিতি এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই এই প্রতিটি অকালমৃত্যুর দায় রাষ্ট্রের। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশে উন্নয়নের নামে সকল পর্যায়ে বিচার বিবেচনাহীন অদূরদর্শী লোভী দায়দায়িত্বহীন প্রকল্প অনুমোদন করা হচ্ছে, নির্মাণ ও ক্রয় চলছে। জনগণের ওপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য শত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও কারখানা, ভবন, সড়কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানের কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই, তদারকি নেই, জবাবদিহি নেই। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেই। যে দেশে শতাধিক মানুষ মৃত্যুর পরও ১০ বছরে পুরনো ঢাকায় ভয়াবহ গুদাম সরানো হয় না, আবারো অকাল মৃত্যুর মুখে পতিত হয় মানুষ. যেখানে একের পর বহুতল ভবন হয় কোনোরকম নিয়মকানুন ছাড়া, যেখানে বাস ট্রাক চলতে থাকে ফিটনেস ছাড়া এবং প্রতি বছরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় সেখানে বলা হয় এর চাইতে লক্ষগুণ বিপজ্জনক পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হবে সকল ঝুঁকিমুক্ত, যে সরকার সচিবালয়ের পাশের নদীকে ড্রেনে পরিণত হওয়া ঠেকাতে পারে না তারা বলতে থাকে বছরে ৪৭ লক্ষ টন কয়লা পুড়লেও সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না!

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বিপদ, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সকল কিছুকে অস্বীকার করা সরকারের একটা রোগে পরিণত হয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি আর মিথ্যাচারে সবচাইতে এগিয়ে আছে জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এই খাতে ‘ব্যাপক উন্নয়নের’ নামে, জনমত, বিশেষজ্ঞমত ও দেশের স্বার্থ উড়িয়ে দিয়ে সরকার এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করছে যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, ঋণগ্রস্ততা সর্বোপরি মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ খাতে দ্রুত পরিবর্তন আনার নাম করে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ জনস্বার্থবিরোধী নানা চুক্তি অথবা অন্য কোনো কার্যক্রম বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, কিংবা আদেশ-নির্দেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে কোন ধরনের প্রতিকার পাবার অধিকার হরণ করে ২০১০ সালে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছিল। এটি প্রথমে ২ বছরের জন্য করা হয়, ২০১২ সালে এর মেয়াদ আরও ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর এই বিশেষ দায়মুক্তি আইনের মেয়াদ শেষ হবার কথা থাকলেও এর মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে।
সকল তথ্য ও প্রমাণাদি থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই দায়মুক্তি আইন প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নামে দুর্নীতি, অনিয়ম, টাকা পাচারের মত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পাবার জন্যই করা হয়েছে আর সেকারণেই তার মেয়াদ বারবার বাড়ানো হচ্ছে। এই দুর্নীতি অনিয়মের কারণেই একের পর এক অসম্ভব ব্যয়বহুল ক্ষতিকর প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, বারবার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে মেটাতে সরকার চুক্তি মোতাবেক বাধ্য থাকায় গত ৯ বছরে বিপিডিবি’র ঘাড়ে জমেছে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসানের বোঝা। অথচ মাত্র কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেই বর্তমান রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মদক্ষতা বাড়ানো সম্ভব, সম্ভব প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের জনবল, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বাড়ানো, সম্ভব সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবকাঠামো দাঁড় করানো। এরজন্য টাকাও সমস্যা নয়, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে জমা টাকার একাংশই তার জন্য যথেষ্ট।
গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের আয়োজন না করে সংকট সমাধানের নামে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। আর এর সূত্র ধরেই বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প কারখানা, ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধির আয়োজন করা হয়েছে। এতে করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, যাতায়াত, বিদ্যুত সহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বাড়বে। আমরা গণশুনানীকে একটি প্রহসনে পরিণত করে, দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর সুবিধার্থে বিশ্বব্যাংক- এডিবির শর্ত মেনে গ্যাস বিদ্যুতের অবিরাম দামবৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানাই।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
পারমাণবিক বিদ্যুতের ঝুঁকি ও বিপদের যে কোনো সীমা পরিসীমা নেই তা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের মতো ঘন জনবসতি, পানি ও আবাদী জমির উপর বিপুল ভাবে নির্ভরশীল একটি দেশে এই ঝুঁকি বিশ্বের যে কোনো দেশের চাইতে অনেক বেশি। এই সত্য অগ্রাহ্য করে রূপপুরে বাংলাদেশের সবচাইতে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হচ্ছে, একে অভিহিত করা হচ্ছে ‘জাতীয় গৌরব’ হিসেবে।
অথচ এই প্রকল্পের কোনো পরিবেশ সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়নি, প্রত্যক্ষ ঝুঁকির মধ্যে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি মানুষের কাছে এর সমস্যা, বিপদ ও ঝুঁকির কথা গোপন রাখা হয়েছে, বদলে একটানা উন্নয়নের মিথ্যাপ্রচার চালানো হচ্ছে। এলাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, সংবাদ সম্মেলন, সভা-সমিতি করার ব্যাপারে জারি করা হয়েছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। বিশেষজ্ঞরা যেসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেগুলোর কোনো সদুত্তর না দিয়ে সরকার হাসি তামাশা করে যাচ্ছে। পারমাণবিক বর্জ্যসহ বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয় অনিষ্পন্ন রাখা হয়েছে।
এই ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় ৩ বছরের ব্যবধানে ৩২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর জন্য বিপুল ঋণের ভার বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। আগামী কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা খরচ এবং সুদ সমেত ঋণ পরিশোধের খরচ মিলিয়ে এই কেন্দ্র হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ হবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ডিকমিশনিং এর জন্যও আছে বিশাল খরচ, সেই সাথে আছে ক্রমাগত শুকিয়ে যেতে থাকা পাশ্ববর্তী পদ্মা নদীর পানি ব্যবস্থাপনাগত ঝুঁকি। অর্থাৎ যে কোনো সময়ে চেরনোবিল বা ফুকুশিমার মত ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকির প্রশ্ন বাদ দিলেও শুধুমাত্র অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় নিলেও এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক বোঝা ও মহাবিপদ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। সরকার একদিকে বলেই যাচ্ছে রূপপুরে কোনো দুর্ঘটনা হবে না অন্যদিকে যেকোনো দুর্ঘটনার দায় থেকে রক্ষার জন্য রাশিয়া-ভারতের এই প্রকল্পে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য করা হয়েছে দায়মুক্তি আইন।
প্রাণ প্রকৃতি দেশ বিনাশী আরেকটি বড় দৃষ্টান্ত সুন্দরবন বিনাশী রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত ৮ বছরে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কীভাবে বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর রকম সর্বনাশা তার অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমরা সরকারের কাছে হাজির করেছি। সরকার সেগুলো উপেক্ষা করছে আর দেশ বিদেশে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মিথ্যা তথ্য। বাংলাদেশের জন্য, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কোটি কোটি মানুষের জন্য, সুন্দরবন একটি জীবন মরণ প্রশ্ন। সবাই জানেন যে, বিশে^র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন পরিবেশগত দিক থেকে, প্রাণবৈচিত্রের দিক থেকে অতুলনীয়, সেজন্য এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ^ ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত। শুধুু তাই নয়, এই বন বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। উপকূলের কয়েক কোটি মানুষের জীবন জীবিকা সম্পদ সুন্দরবনের অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া এরকম অতুলনীয় সম্পদ হেলায়, লোভে, দায়িত্বহীনতা আর জেদ দিয়ে ধ্বংস করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
শুধু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, এই কেন্দ্রের কারণে প্রলুব্ধ হয়ে দেশের বনগ্রাসী ভূমিগ্রাসী কতিপয় গোষ্ঠী তিন শতাধিক বাণিজ্যিক প্রকল্প দিয়ে সুন্দরবন ঘিরে ফেলেছে। সুন্দরবনের চারপাশে ৩২০টি শিল্পকারখানা অনুমোদন দেওয়ার পরও সরকার ইউনেসকোকে বলেছে, সরকার সেখানে কোনো ভারী শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই সেখানে পরিবেশ বিপর্যয়কারী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। সেজন্য বাংলাদেশ রক্ষাকারি সুন্দরবন বিনাশ আর বন-জমি গ্রাসে জড়িত ব্যক্তি, কোম্পানী, আমলাদের ঠেকানোর কোনো চেষ্টা দেখা যায় না।
শুধু তাই নয়, কোন প্রকার সমীক্ষা না করে দেশের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে উপক’ল রক্ষাকারী বন/পরিবেশ বিনাশ করে মহেশখালি, বরগুনা ও পটুয়াখালীতেও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বরগুণার সমীক্ষাবিহীন প্রকল্প সম্পর্কে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি এবিষয়ে জানতেন না! জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে সবচাইতে বিপদগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। উপক’ল জুড়ে কয়লাবিদ্যুতের সম্প্রসারণের মাধ্যমে কমানোর বদলে সেই বিপদ আরও বৃদ্ধির মহাযজ্ঞ করছে সরকার।
দক্ষিণবঙ্গের এই পরিস্থিতির পাশে উত্তরবঙ্গ নিয়েও চলছে নানা অপতৎপরতা। ফুলবাড়ীর কয়লাখনি নিয়ে বিতাড়িত এশিয়া এনার্জি বা জিএসএম নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা যে শুধু বেআইনীভাবে ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে লন্ডনে শেয়ারবাজারে ব্যবসা করে যাচ্ছে তাই নয়, এই খনি নিয়েই তারা সম্প্রতি ঢাকায় চীনের ‘পাওয়ার চায়না’র সঙ্গে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে বিদেশি কোম্পানি বিদেশে ব্যবসা করে সরকার কিছুই বলে না, আর এই চুক্তি বিষয়েও মন্ত্রণালয় বলছে তারা কিছুই জানে না। এভাবেই চলছে দেশ!
আপনারা জানেন যে, ঘুষ দুর্নীতি মামলা হামলা প্রলোভন ইত্যাদির মাধ্যমে নানা ভাবে চেষ্টা করেও জনগণের প্রতিরোধের মুখে জিসিএম বার বার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তাই এবার তারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চীন ও চীনা কোম্পানির বিদ্যমান প্রভাব ও যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খননের অপতৎপরতা নতুন করে শুরু করেছে। এছাড়া বড়পুকুরিয়া, দীঘিপাড়া কয়লা খনি নিয়েও বিভিন্ন চক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সৌর বিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির অসীম যোগান থাকলেও এনিয়ে সরকারের ‘শোকেস’ ভিন্ন উদ্যোগ দেখা যায় না। কারণ তাতে কয়লা ও পারমাণবিক প্রকল্পের বিশাল দুর্নীতির কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির কোন খরচ নেই। আর পরিবেশের জন্য তা বন্ধু। প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে এগুলো আরও নিরাপদ হচ্ছে, দামও কমছে। এসবের দাম তেল-কয়লা কিংবা পরমাণু বিদ্যুতের মত ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবার কোন সুযোগ নেই। ভারতে সৌর বিদ্যুৎ এখন সাড়ে ৩ টাকারও কম খরচে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ এই খাত উন্নয়নে মনোযোগী না হয়ে এই বিদ্যুৎ বেশি দামে কেনার চুক্তি করা হচ্ছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সাথে। অথচ বাংলাদেশে জমির অভাব থাকলেও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা খুব কম সময়েই করার মতো প্রযুক্তি এখন আছে। এজন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং ব্যক্তির বেদখলকৃত রাষ্ট্রীয় জমি, রেলওয়ের বেদখল হওয়া জমি, বাসা-বাড়ির ছাদ, নদীর ধার প্রভৃতি জায়গার দিকে মনোযোগ দিলেই হবে। ভারত ও চীন উভয়েই ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছে কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সরে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে। আর তাদেরই পরিত্যক্ত কয়লা বিদ্যুৎ প্লান্ট বাংলাদেশকে ডাস্টবিন বানাতে যাচ্ছে।
রামপাল-রূপপুরসহ প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী বিভিন্ন প্রকল্প যত অগ্রসর হচ্ছে ততই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদের ওপর এক ভয়াবহ বিপদ ঘনীভ’ত হচ্ছে। গ্যাস অনুসন্ধানে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিকাশে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ালে বিদ্যুতের দামও কমবে, বিদ্যুতের নামে সারাদেশের মানুষকে মৃত্যুকুপে ঠেলে দেবার দরকার হবে না। আমরা মানুষ মরার বা মারার উন্নয়ন নয়, মানুষ বাঁচার ও তার জীবন নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন চাই। তাই এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবি:

১. অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকারকে অবশ্যই দায়মুক্তি আইন থেকে সরে আসতে হবে। এ পর্যন্ত হওয়া সকল অনিয়ম এবং লুটপাটের সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে, জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাপেক্সকে বিদেশি কোম্পানির সাবকন্ট্রাক্টর না বানিয়ে স্বাধীন আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গ্যাস সংযোগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের লোভের বোঝা মেটাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না।
৩. সুন্দরবন বিনাশী সকল প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। উপক’ল জুড়ে কয়লা বিদ্যুতের বদলে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের বৃহৎ প্রকল্প তৈরি করে বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ কমাতে হবে।
৪. ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করে খুনি এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) কে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ফুলবাড়ী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. রামপাল- রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ পিএসএমপি-২০১৬’তে বর্ণিত ব্যয়বহুল, আমদানি ও ঋণনির্ভর, প্রাণপ্রকৃতি বিনাশী বিদ্যুৎকেন্দ্র মুখি পরিকল্পনা বাতিল করে সুলভ, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জাতীয় কমিটির বিকল্প খসড়া জ্বালানি প্রস্তাবনা নিয়ে অগ্রসর হবার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এসব দাবিতে আগামি ৫ এপ্রিল ২০১৯ ফুলবাড়ীতে উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি সভা এবং ২৭ এপ্রিল খুলনায় দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এসব সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে মে ও জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে দেশব্যাপী সভা সমাবেশ ও জনসংযোগ। ৬ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় কনভেনশন। এই কনভেনশন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ধন্যবাদ।

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি
মুক্তি ভবন, ৩০ মার্চ ২০১৯