Friday, November 24th, 2017
‘বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির মহাপরিকল্পনা বাতিল করুন। সুলভ পরিবেশসম্মত পথে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনায় আসুন।’- জাতীয় কমিটি
অযৌক্তিকভাবে অষ্টমবারের মতো বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন:
“গণশুনানীতে প্রদত্ত তথ্য, যুক্তি এবং প্রাপ্ত ফলাফলের বিরুদ্ধে গিয়ে, দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনের বিষয় বিবেচনা না করে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েকমাস আগে গ্যাসের দামবৃদ্ধির পর গতকাল ২৩ নভেম্বর সরকারের নির্দেশে বিইআরসি অষ্টমবারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে, কতিপয় গোষ্ঠীস্বার্থে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। জাতীয় কমিটি কমদামে পরিবেশসম্মতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প মহাপরিকল্পনা উপস্থিত করা সত্ত্বেও তাতে কান না দিয়ে সরকার তার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতকে ক্রমাগত কিছু দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর মুনাফা বানানোর খাতে পরিণত করছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান স্থগিত করে এলএনজি আমদানির পথ ধরেছে, দেশ বিনাশী ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে, ব্যয়বহুল কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।
বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য বোঝা হচ্ছে, সকল পর্যায়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াচ্ছে। আবারও এই দামবৃদ্ধিতে সকল পর্যায়ে আরেকদফা উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, বাড়বে বাসাভাড়াসহ অন্য সব দ্রব্যসামগ্রীর দাম, বাড়বে শিল্পকৃষি পণ্যের দাম, কমবে প্রতিযোগিতা ক্ষমতা। সকল উদ্যোক্তার জন্যই নতুন বিনিয়োগ এতে আরও কঠিন হয়ে যাবে।
সরকারি মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি ২০১৬) অনুযায়ী জাতীয় সক্ষমতা বিপর্যস্ত করে সরকার একদিকে সাগরের গ্যাস রপ্তানির বিধান রেখে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে, অন্যদিকে গ্যাস সঙ্কটের অজুহাতে সুন্দরবন বিনাশী প্রকল্প, ভয়ংকর ঝুঁকি ও বিপুল ঋণের রূপপুর প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার দরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনার চুক্তি হচ্ছে।
কয়েকবছর ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে, কমে আছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা কমানো হয়নি। তেলের দামের ক্ষেত্রে সরকারের ‘সমন্বয়’ আর ‘যৌক্তিকীকরণের’ কথা শোনা যায় না। অথচ তেলের দাম যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করলে তা অনেক কমানো সম্ভব ছিলো। এতে পরিবহণ ব্যয় কমতো, উৎপাদন ব্যয় কমতো, জিনিষপত্রের দাম কমতো, বিদ্যুতের খরচও কমতো। পুরো দেশের অর্থনীতি ও মানুষের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে সরকার। কার জন্য? দেশি বিদেশি কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা বাড়ানোর জন্য, নিজেদের দুর্নীতি আর অপচয়ের টাকা যোগান দেবার জন্য।
আমরা তাই বিদ্যুতের আবারও দামবৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই দামবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের অবিরাম দামবৃদ্ধির দেশবিনাশী মহাপরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানাই। এছাড়া সুন্দরবনবিনাশী রামপাল ও মহাঝুঁকির ব্যয়বহুল রূপপুর প্রকল্পসহ দেশবিধ্বংসী সব তৎপরতা বন্ধ করে সুলভে পরিবেশসম্মতভাবে গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনার খসড়া নিয়ে আলোচনা শুরুর দাবি জানাই।”