Saturday, July 22nd, 2017
জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনার খসড়া রূপরেখা উত্থাপন
‘জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (২০১৭-৪১)’
জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখা উত্থাপন
নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে গুরুত্ব দিয়ে, মানুষ ও প্রকৃতিবান্ধব উন্নয়ন দর্শনের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজ ২২ জুলাই ২০১৭, জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে সরকারের বাংলাদেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (২০১৭-৪১)-এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবিত খসড়া রূপরেখা উত্থাপন করেছে।
প্রস্তাবিত রূপরেখায় বলা হয় ‘সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর আধিপত্য থেকে মুক্ত হলে দেশ ও জনগণের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি না করে সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো সম্ভব।’ প্রস্তাবে বলা হয় এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হবে, ‘সকল নাগরিকের জন্যে সুলভে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত, নিরাপদ-ঝুকিহীন ও পরিবেশসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ এবং জাতীয় সক্ষমতার উপর দাঁড়িয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
সরকার ও জাতীয় কমিটির প্রস্তাবের তুলনামূলক অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়, সরকারের পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্য হলো আমদানী ও রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণ নির্ভরতা। যা পরিবেশ বিধ্বংসী। সরকারের বিদ্যুৎ উৎপানের প্রধান উৎস হলো কয়লা, এলএনজি ও পারমাণবিক এবং মূল চালিকা শক্তি হলো বিদেশি কোম্পানী অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও কনসালটেন্ট। এর বিপরীতে জাতীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, মূল বৈশিষ্ট্য হবে দেশের সম্পদ নির্ভরতা। রাশিয়া-চীন-ভারতের ঋণ মুক্ত ও পরিবেশ অনুকূল। বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস ধরতে হবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীকে। মূল চালিকা শক্তি হবে জাতীয় সংস্থা, দেশিয় প্রতিষ্ঠান ও জনউদ্যোগ।
প্রস্তাবে বলা হয়, ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করে সরকার ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার বিপরীতে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে টার্গেট থেকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রস্তাবে বলা হয়, বিদ্যুতের দামও এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী (২০১৫-এর দামস্তর অনুযায়ী) ১২.৭৯ টাকা বিপরীতে ৫.১০ টাকায় আনা সম্ভব।
আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী, প্রকৌশলী মাহাবুব সুমন, ড. সুজিত চৌধুরী, রাজনীতিক সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকী। টিপু বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মোশরেফা মিশু, জাহিদুল হক মিলু, আজিজুর রহমান, নাসিরউদ্দিন নসু, ফকরুদ্দিন কবির আতিক, মাহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, মাসুদ খান, সামছুল আলম প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অসংখ্য প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার যখন পশ্চাতমুখী, লুণ্ঠন ও ধ্বংসমুখী, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক উন্নয়ন চিন্তার অধীনে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তখন প্রায় দুই দশকে জনআন্দোলনের শক্তি ও আকাঙ্খার উপর দাঁড়িয়ে আমরা ভবিষ্যতমুখী, প্রগতি ও সমতামুখী প্রবৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক, প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের স্বার্থপন্থি উন্নয়ন চিন্তার কাঠামোতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিকল্পনার খসড়া উপস্থাপন করছি। তিনি বলেন, আমরা কখনও দ্বিমত করেনি যে আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু এটা দেখিয়ে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল কয়লা প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় এটা হলে দেশ ঋণের শৃঙ্খল ও আধিপত্যের মধ্যে পড়বে, পানি-মাটি-পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় কমিটি বিকল্প প্রস্তাবনা হাজির করছে। আমরা যথাযথ নীতি গ্রহণ করলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশের গ্যাস চাহিদা নিজেদের গ্যাস থেকেই মেটাতে পারব। সেজন্য রপ্তানিমুখী চুক্তি বাতিল, বাপেক্সকে কাজের সুযোগ দেওয়া, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থলভাগ ও গভীর অগভীর সমুদ্রে নিয়মিত অনুসন্ধান চালাতে হবে। তিনি বলেন, শুধু এলএনজি আমদানীর কথা বলা হচ্ছে এর ফলে গ্যাসের দাম বাড়বে এবং বিদ্যুতের দামও বাড়বে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর কথাও সরকার বলে। বিদেশে এ নিয়ে ঢাক-ঢোল পেটানো হচ্ছে অথচ দেশে কোনো অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিবেশবিনাশী পথ বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানী নির্ভরতার টার্গেট নির্ধারণ করেছে। অথচ আমরা এসব চিন্তা করছি না। তাই দেশের সৌর-বায়ু-বর্জ্যরে ব্যবহার বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, এটি প্রস্তাবিত খসড়া। চূড়ান্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নেওয়া হবে। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের মহাপরিকল্পনা জনগণ জানেনা। আমরা আজ প্রকাশ্যে আমাদের বিকল্প প্রস্তাব পেশ করলাম। এ বিষয়ে আমরা আপনাদের মতামতও প্রত্যাশা করছি।
সভায় জানানো হয় প্রস্তাবিত খসড়া উন্মুক্ত থাকবে যে কেউ এ বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন এবং জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষজ্ঞসহ দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করা হবে।
** জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনার খসড়া রুপরেখাটি ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে এবং সারসংক্ষেপ পড়া যাবে এখান থেকে।
*** জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা বিষয়ক লিফলেটটি ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে।