?> ১৮ অক্টোবর সমাবেশ ও দূতাবাস অভিমূখে মিছিল করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘খোলা চিঠি’ দেবে জাতীয় কমিটি « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, October 6th, 2016

১৮ অক্টোবর সমাবেশ ও দূতাবাস অভিমূখে মিছিল করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘খোলা চিঠি’ দেবে জাতীয় কমিটি

১৮ অক্টোবর সমাবেশ ও দূতাবাস অভিমূখে মিছিল করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘খোলা চিঠি’ দেবে জাতীয় কমিটি

‘ভারতবিরোধিতা নয়, সুন্দরবন রক্ষাই আমাদের এজেন্ডা’

সুন্দরবন ধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পর এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা চিঠি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। আগামী ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়ে ভারতীয় দূতাবাস অভিমূখে মিছিল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ‘খোলা চিঠি’ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আজ ৬ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১১টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজুলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকী, আজিজুর রহমান, মোর্শেদা মিশু, বহ্নি শিখা জামালী, মোশরেফ হোসেন নান্নু, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, রাজেকুজ্জামান রতন, উজ্জ্বল রায়, শামসুল আলম, মাহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার কারণ হলো, এই প্রকল্পের মুখ্য ভূমিকা ভারতের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি, ভারতের রাষ্ট্রীয় নির্মাণ কোম্পানি ভেল, ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এক্সিম ব্যাংক, ভারতের কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোল ইন্ডিয়ার। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে এসব প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে সুন্দরবনের বিনিময়ে। আর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবন আক্রান্ত হলে ভারতের দিকের সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ভারতবিরোধিতা আমাদের এজেন্ডা নয়, সুন্দরবন রক্ষাই আমাদের এজেন্ডা’। সুন্দরবন রক্ষায় ভারত-বাংলাদেশের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইউনেস্কো বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি সরকারকে দেখিয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ সব বাণিজ্যিক তৎপরতা বন্ধ করতে বলেছে। ইউনেস্কো টিম যখন বাংলাদেশ সফর করে তখন তাদের পরিকল্পনা ছিলো, দুইপক্ষের কথাই তারা শুনবে। কিন্তু সরকার নানা বাহানা সৃষ্টি করে আমাদের সাথে কোনো সভা করবার সময় রাখেনি। তারপরও তারা স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ সিদ্ধান্তে এসেছে। কোম্পানি, ভূমিগ্রাসী ও বনগ্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত না হলে, নির্মোহ বিচার বিশ্লেষণ করলে সরকারও যে একই সিদ্ধান্তে আসবে সেটা আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।

জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, ইউনেস্কো থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার যদি আগের মতোই এসব গুরুতর বিষয় উপেক্ষা করে তাহলে সুন্দরবন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে বিষয়টি এভাবে উপস্থিত হবে যে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা প্রকৃতিপ্রদত্ত এক অসাধারণ সম্পদ ধরে রাখার যোগ্যতা রাখে না, এদেশের মানুষের সেই সক্ষমতা বা পরিপক্কতা নেই। সুন্দরবিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্প তাই শুধু দেশকে বিপর্যস্ত করবে না, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে কলঙ্কিতও করবে। কাজেই সরকারের উচিৎ হবে একগুঁয়েমী ত্যাগ করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, বিশেষজ্ঞ মত ও ক্রমবর্ধমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে রামপাল চুক্তি বাতিলসহ সুন্দরবনবিনাশী বনগ্রাসী সব তৎপরতা বন্ধ করা। আর সেইসঙ্গে ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ গ্রহণ করে এর বিকাশে সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ কাজে সরকার যতো বিলম্ব করবে ততোই ক্ষতি বাড়তে থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয় সরকার যে যুক্তিতে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এর দ্বিতীয় প্রকল্প বাতিল করেছে ঐ একই যুক্তিতে ১ম প্রকল্প ও বাতিল করাই হবে যুক্তিযুক্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুন্দরবন বিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের জন্য দেশে বিদেশে বিশেষজ্ঞ ও জনমতের দাবি অভূতপূর্ব মাত্রা লাভ করলেও সরকার একদিকে এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একগুয়েমীর সাথে কালক্ষেপন করছে এবং অন্যদিকে বিজ্ঞাপনী ভাড়াটে মিথ্যাচারের পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনের উপর দমনপীড়ন বৃদ্ধি করেছে। সুন্দরবনের উপর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যুক্ত হবার কারণে গবেষককে হয়রানি করার ঘটনাও ঘটছে। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী এবং প্রশাসনকে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের গ্যাস সমস্যার সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে দায়মুক্তি আইন ব্যবহার করে, বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদ নিয়ে জাতীয় স্বার্থবিরোধী আরও চুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানির কর মওকূফ করা হচ্ছে। গ্যাসের উপর তাদের কর্তৃত্বের অনুপাতও বাড়ানো হচ্ছে। কস্ট রিকভারি হিসেবে তাদের মালিকানা শতকরা ৫৫ ভাগের স্থলে করা হচ্ছে ৭০ ভাগ। রফতানির ধারা যোগ করে চুক্তির পক্ষে যাচ্ছে সরকার। একেদিকে গ্যাসের সংকটের কথা বলে সুন্দরবনবিনাশী দেশধ্বংসী নানা প্রকল্প জায়েজ করবার চেষ্টা অন্যদিকে নিজেদের গ্যাস সম্পদ বিদেশ থেকে আমদানি দামের চাইতেও বেশি দামে ক্রয় এবং রফতানির লক্ষ্যে চুক্তি এককথায় অবিশ্বাস্য মাত্রায় জনগণের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

এছাড়া, বাপেক্স ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহের লক্ষ্যে ১০৮ টি কূপ খননের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, মন্ত্রণালয় তাদের কাজে বাধা দিয়ে বেশি খরচে রাশিয়ার কোম্পানি গাজপ্রমের হাতে তুলে দিচ্ছে। বাপেক্সের প্রতিটি কূপখননের ব্যয় ৭০-৮০ কোটি টাকা, পক্ষান্তরে গ্যাজপ্রমের কর্তৃক ব্যয় তিনগুণেরও বেশি, ২৫০ কোটি টাকা। বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ দেখতে গিয়ে জিম্মি হচ্ছে বাংলাদেশ, বারবার বাড়ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম, পুরো দেশ ও অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদে বোঝা বাড়ছে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে জাতীয় স্বার্থে সমুন্নত রেখে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানান হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রূপপুরেও সরকার বিপুল ঋণ নির্ভরতায় দেশকে আটকে এক মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেয়া এবং পরিশোধনের বিষয়ে কোন স্পষ্ট বিধান না রেখে সরকার রাশিয়ার সাথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সাধারণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে গতকাল সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নেয়ার বিষয়ে রাশিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করায় সাধারণ চুক্তির পরবর্তী ৪টি চুক্তি জুন মাসের মধ্যে স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এমন সংবাদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ এবং জনবহুল এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য আরও বিপদের বার্তা দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানান হয় আগামী ২৪-২৬ নভেম্বর ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি সামনে রেখে ১৩ অক্টোবর বরিশাল, ১৪ অক্টোবর: সিলেট ও রংপুর, ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী, ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ১৭ অক্টোবর খুলনার প্রতিনিধি সভা হবে এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সভা সমাবেশ ও পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।