?> প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি লাঠিচার্জ, টিআর গ্যাস নিক্ষেপ, ৬ জন গ্রেফতার, অর্ধশতাধিক আহত « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, July 28th, 2016

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি লাঠিচার্জ, টিআর গ্যাস নিক্ষেপ, ৬ জন গ্রেফতার, অর্ধশতাধিক আহত

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী ও দেশধ্বংসী সকল চুক্তি বাতিল এবং বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজ ২৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। একাধিকবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল বাংলামোটরের মোড়ে যাওয়ার আগে পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিচার্জ, টিআর গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় বিনা কারণে পুলিশ ৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিপিবির ডমিনিক ক্যাডেট, ছাত্র ইউনিয়নের তাহসিন মল্লিক, তানভীর আহমেদ তানিম, ছাত্র ফেডারেশনের তাহারাত লিওন, রূপক রায় ও শওকত হোসেন। এছাড়া গুরুতর আহত মনিরুদ্দিন পাপ্পু, আব্দুল্লাহ আল নোমান, তানভীর ইসলাম, নুরুজ্জামান, সামিনুল শুভ, কিশোর কুমার সরকার, তৃষা বড়ুয়া, মোস্তাকিম, আহমেদ বিন নবীন, আরিফ হোসেন নয়ন, আতিয়া ফেরদৌসী, মিনহাজ হক নাহিদ, হাবিবা বেনজির, শরীফুল চৌধুরী, রুবাইয়া আন্নি, ওমর ফারুক, রবীন চৌধুরী, নুরুন্নাহার, বিলকিস আক্তার, আলআমিন হোসেন মৃধা, মুক্তা বারই, মিজানুর রহমান, সুলতানা আক্তার, শাওলিন, রিফাত বিন সালাম সহ অন্তত পঞ্চাশ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

micchil-2

 pollice-attack tear-gas

arrest

জাতীয় কমিটির মিছিল, পুলিশী হামলা ও গ্রেফতার, ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় প্রেসক্লাবের সমাবেশ
সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স। টিপু বিশ্বাস, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকী, কামরুল আহসান, মোশরেফা মিশু, মোশারেফ হোসেন নান্নু, মানস নন্দী, ইয়াসিন মিয়া, শামসুল আলমসহ বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি পাঠ করেন। খোলা চিঠিতে কয়লাভিত্তিক তাপ প্রকল্পের দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা ও দেশের বিভিন্ন গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবন বাঁচানো যাবে না। খোলা চিঠিতে বলা হয় ‘আপনার উপদেষ্টারা আপনাকে কাঠ কয়লা ও খনিজ কয়লার পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করেনি। তাদের হাতেই জিম্মি হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। এটি আমাদের উদ্বেগের একটি বড় কারণ।’ খেলা চিঠিতে বলা হয় ‘সারাদেশের সকল প্রকারের মানুষ এই সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্পের বিরুদ্ধে। আপনার যদি কোনো সংশয় থাকে আপনি গণভোট দিন।’ খোলা চিঠিতে আরও বলা হয় ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে আপনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার পেয়েছেন সেজন্য আপনার হাত দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ হতে পারে না। আমরাও তাই বলি। সেজন্যই আমরা দাবি জানাই আপনি অবিলম্বে সুন্দরবনবিনাশী এই প্রকল্প বাতিল করুন। আমরা চাই না ইতিহাসে পরিবেশধ্বংসী হিসেবে আপনার পরিচয় থাকুক, সেই পরিচয়ে বিশ্ববাসী আপনাকে অভিহিত করুক। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের উপায় কী? আপনার অবগতির জন্য আমাদের বিকল্প ৭ দফা প্রস্তাব আপনার সামনে পেশ করছি। প্রয়োজনে এর বিস্তারিত আমরা আপনার কাছে উপস্থাপন করতে পারি।’

বিভিন্ন সংগঠনের শত শত মানুষ ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এই সমাবেশে যোগ দেন। হাজারও মানুষের এই সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে রওনা হয়।

জাতীয় কমিটির প্রেস ব্রিফিং
পুলিশি হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনার পর বেলা ৩টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিং-এ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই হামলার মাধ্যমে সরকার দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষার দাপট দেখালো। জনগণের আন্দোলনের গণজাগরণের মধ্য দিয়েই আমরা সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষা করব। গ্রেফতার নির্যাতন করে আন্দোলন থেকে পিছু হটানো যাবে না।

তিনি গ্রেফতার নির্যাতনের প্রতিবাদে ৩০ জুলাই শনিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন। প্রেস ব্রিফিং-এ গ্রেফতারকৃত ৬ জন ও আহত ৪৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রেস ব্রিফিং-এ জাতীয় কমিটির সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাইফুল হক, বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকী, অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, মোশাহিদা সুলতানা, মোশারেফ হোসেন নান্নু, কামরুল আহসান, মানস নন্দী, শামসুল আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিং শেষে নেতৃবৃন্দ ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহতদের ও রমনা থানায় গ্রেফতারকৃতদের দেখতে যান।