Thursday, May 19th, 2016
এনটিপিসি-ওরিয়নসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল, বাঁশখালী হত্যাকান্ডের বিচার, নির্যাতন ধরপাকড় বন্ধ এবং জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলনে পঠিত বক্তব্য
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে, সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল-ওরিয়ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলসহ বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে গত ১০-১৩ মার্চ ২০১৬ দ্বিতীয়বারের মতো আমরা ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রা সম্পন্ন করেছি। এই জনযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বকারী মানুষ। শুধু তাই নয় এই জনযাত্রায় যোগ দিয়েছেন ভারতের বিজ্ঞানী শিক্ষক পরিবেশবিদদের দল। এই জনযাত্রা সময়কালে এর সাথে সংহতি জানিয়ে লন্ডন, আমস্টারডামে, প্যারিসে, আটলান্টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জনযাত্রা শেষে সমাপনী সমাবেশে গৃহীত সুন্দরবন ঘোষণায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের দাবি জানিয়ে বলেছিলাম, ‘অবিলম্বে সুন্দরবন ধ্বংস করার সকল অপতৎপরতা বন্ধ করে সুন্দরবনকে সুস্থ ও পুনরুৎপাদনক্ষম অবস্থায় বিকশিত করার জন্য ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। …আগামী ১৫ই মে’র মধ্যে রামপাল-ওরিয়ন সহ সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করতে হবে। প্রয়োজনে এই সময়ের মধ্যে প্রকাশ্য আলোচনা বা বিতর্কে আসার জন্য আমরা আহবান জানাচ্ছি।’
কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম সুন্দরবন বিনাশে সরকার তার একগুঁয়ে বিবেচনাহীন জনবিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এইকারণে সুন্দরবন বিনাশী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও অন্যান্য অপতৎপরতা বেড়েছে। আমরা বুঝতে পারছি, কতিপয় দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর মুনাফা উন্মাদনা সরকারকে বধির করেছে। রামপাল প্রকল্প সামনে রেখে একে একে ওরিয়নের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শীপইয়ার্ড, সাইলো, সিমেন্ট কারখানাসহ নানা বাণিজ্যিক ও দখলদারী অপতৎপরতা বেড়েছে। এখানেই শেষ নয়, তেলজাহাজ কয়লাজাহাজ ডুবির পর গত এপ্রিল মাসেই চারবার আগুন লেগে সুন্দরবন আক্রান্ত হয়েছে। সুন্দরবনে একের পর এক অগ্নিকান্ড এবং সরকারের নির্লিপ্ত কিংবা দায়সারা ভূমিকা থেকে আমরা আশংকা করি যে, এসব অগ্নিকান্ড পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত। ‘কয়লায় পানি পরিষ্কার হয় এবং কয়লা ডুবিতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না’ মর্মে প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে সুন্দরবন আরও সুরক্ষিত হবে’ মর্মে জ্বালানী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতির ভাষ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র, এর অতুলনীয় ইকোসিস্টেম, পশুপাখি গাছ লতাসহ অসংখ্য প্রাণের বসতি, কয়েক কোটি মানুষের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাঁধ ইত্যাদি নিয়ে এর গুরুত্ব বুঝতে সরকারের অনীহা এবং অক্ষমতাই প্রকাশ করে। এসব বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিষ্ক্রিয় হতে এবং সুন্দরবন বিনাশী তৎপরতায় যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সক্রিয় হতে শক্তি যোগায়। সেজন্যই আমরা দেখি একের পর এক আগুন লাগার পরও বাংলাদেশের এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের কোন কার্যকর তৎপরতা নেই। ইতিমধ্যে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে, এই আগুন লাগানোর সাথে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। বস্তুত প্রশাসনের সক্রিয় সমর্থন বা দায়িত্বপালনে নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া কারও পক্ষে এধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
আমরা বহুবার সুন্দরবন বিনাশী সকল তৎপরতা বন্ধ করে এই বনের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। আমরা মনে করি, সুন্দরবন বিকাশে মানুষের হস্তক্ষেপ দরকার নাই, দরকার নাই বিশ্বব্যাংক ইউএসএআইডির প্রকল্প, দরকার সুন্দরবনকে মানুষের লোভী আগ্রাসন থেকে রক্ষা করবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সুন্দরবনের ঘাড়ের ওপর রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সরকারের একগুঁয়ে তৎপরতা সুন্দরবন বিনাশী তৎপরতায় নিয়োজিত স্থানীয়, জাতীয় ও বিদেশি সকল পক্ষকে আরও ধ্বংসাত্মক হতে উদ্বুদ্ধ করছে, এসব বিদ্যুৎ প্রকল্প দুর্বত্তদের জন্য একটি চৌম্বক আকর্ষণী শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
আমরা আবারও সরকারকে তাই মুনাফার অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চোখ খুলে সুন্দরবনের দিকে তাকাতে অনুরোধ করছি, এটি প্রকৃতির বিশাল সম্পদ, কাঠ বা জমি নয়। একইসঙ্গে সরকারের কাছে আবারও দাবি জানাচ্ছি রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবন বিনাশী সকল তৎপরতা বন্ধ করুন, দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করুন, সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচতে দিন। সারাবিশ্বে সুন্দরবন রক্ষার দাবি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে, সুন্দরবন ধ্বংসের ভ’মিকা নিয়ে বিশ্বের কাছে দেশকে কলঙ্কিত করবেন না।
সুন্দরবন ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে আমরা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে জাতীয় প্রতিরোধ জোরদার করবার আহবান জানাই। কেননা সুন্দরবন বহুভাবে বাংলাদেশকে রক্ষা করে, সুন্দরবন রক্ষা তাই আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে যথাযথ পথ অবশ্যই আছে এবং তা জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবিতেও বারবার বলা হয়েছে। সর্বজনের সম্পদে শতভাগ জাতীয় মালিকানা ও শতভাগ সম্পদ দেশের কাজে ব্যবহার, দুর্নীতি করবার দায়মুক্তি আইন বাতিল করে ‘খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন’ প্রণয়ন, পিএসসি প্রক্রিয়া বাতিল করে স্থলভাগে ও সমুদ্রে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ, ক্ষমতা ও বরাদ্দ প্রদান, বন্ধ বা পঙ্গু রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু, মেরামত ও নবায়ন, এশিয়া এনার্জিকে (জিসিএম) দেশ থেকে বহিষ্কার ও উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ সহ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, জাতীয় সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করবার জন্য জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ, পরিবেশ ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানী সম্পদের সর্বোত্তম মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি জ্বালানী নীতি প্রণয়ন করে তার জন্য প্রয়োজনীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ এবং জনশক্তি তৈরির কাজ শুরু, জনধ্বংসী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ওপর গুরুত্ব প্রদানই যথাযথ পথ। এইপথই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই, সুলভ, নিরাপদ এবং জনবান্ধব উন্নয়ন ধারা তৈরি করতে সক্ষম।
কিন্তু সরকার যাচ্ছে উল্টোপথে: ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ, বন-পানি-মানুষ-পরিবেশবিধ্বংসী, ঋণনির্ভর। এতে কিছু দেশি বিদেশি গোষ্ঠীর লাভ হলেও দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা, বিপদ ও বিপন্নতার দিকে। এগুলোকে যতোই উন্নয়ন বলে ঢোল পেটানো হোক, এগুলো মানববিধ্বংসী অস্ত্রের মতোই মানুষ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী প্রকল্প। এই কারণেই তা অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও জালিয়াতিতে ভরা। এর কারণেই তৈরি হয় দমনপীড়ন জোরজুলুম। একই চেহারা আমরা দেখেছি চারদলীয় জোট আমলে ফুলবাড়ীতে; এখন দেখছি সুন্দরবন, রূপপুরসহ নানাস্থানে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের তৎপরতা। বাঁশখালীতে তার চরম পরিণতিতেই রক্তক্ষয় হলো, এখনও ত্রাস অব্যাহত আছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
গত ৪ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশের হামলায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় চারজন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। গত ১০ মে সরকারি প্রশাসন গঠিত সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে। কমিটি এই হত্যাকান্ডের দায় আন্দোলনকারীদের ওপরই চাপিয়েছে। এটি খুবই বোধগম্য, কেননা এই ঘটনার কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর জ্বালানী উপদেষ্টা এরকমই বক্তব্য রেখেছিলেন। সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে গঠিত কমিটি এর বাইরে কথা কী করে বলবে?
প্রকৃতপক্ষে আইনকানুন নিয়মনীতি ভঙ্গ করে প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে একটি কযলাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবার চেষ্টা থেকেই এলাকায় অস্থিরতা শুরু হয়। কয়েকবছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকা গন্ডামারা বড়ঘোনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপকে সরকার অনুমতি দেয়। এর সাথে যুক্ত হয় চীনা কোম্পানি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এস আলম গ্রুপ চীনা কোম্পানির সাথে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। তার তিনবছর পর চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকার এস আলম গ্রুপের দুটো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করে। তিন বছর ধরে এসব চুক্তি সম্পাদিত হলেও এলাকার মানুষ এসম্পর্কে অবগত হন সম্প্রতি। এর মধ্যে জমিক্রয় ও দখল করা হয় বিভিন্ন কলকারখানার নামে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো পরিবেশ অভিঘাত সমীক্ষাও করা হয়নি। এই সমীক্ষা ছাড়া এরকম কোনো প্রকল্প কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বস্তুত, প্রথম থেকেই অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, জোরজবরদস্তি, ত্রাস দিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু।
প্রকল্পের স্থান নির্বাচন, জমি ক্রয় ও অধিগ্রহণসহ নানা অনিয়ম ও প্রতারণার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করে আসছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। সন্ত্রাসী ও দালালদের দাপট, বারবার হামলা হুমকির এক পর্যায়ে ৩ এপ্রিল এলাকার ৭জন মানুষ গ্রেফতার ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। তার প্রতিবাদেই ৪ এপ্রিলের সমাবেশ ডাকা হয়েছিলো।
এতোসব অনিয়ম, দমন পীড়ন সর্বোপরি চারজন নিরীহ গ্রামবাসী (মর্তুজা আলী ৬২, বর্গাচাষী ও লবণচাষী; জাকের আহমেদ ৬০, দিনমজুর; আনোয়ারুল ইসলাম আঙ্গুর ৫৫, লবণচাষী ও চিংড়ি চাষী; এবং জাকের হোসেন ৩৭, লবণচাষী) নিহত হবার পরও সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। উল্টো জ্বালানী উপদেষ্টা বললেন, ‘এই প্রকল্পের প্রতি সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে।’ তার মানে সরকারের সমর্থন পেয়েই এস আলম গ্রুপ কোন পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া মিথ্যা কথা বলে জমি ক্রয় আর দখল করেছে, একমাত্র ভ’মিহীনদের প্রাপ্য ১৭০০ একর খাসজমি একটি ব্যবসায়িক কোম্পানির নামে হস্তান্তরিত হয়েছে, পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী ঐক্যবদ্ধভাবে নিরস্ত্র মানুষ খুন আর গর্ভবতী নারীসহ বহু মানুষকে গুলিতে আহত করবার পরে পুলিশ উল্টো নিহত ও জখম ৩ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, হাসপাতালে আহত মানুষদের হাতকড়া পরিয়ে রাখে, আর হয়রানি চালাতে থাকে। তারপরও সন্ত্রাস থামেনি।
ঘটনার বারোদিন পর গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভাতে জেলা প্রশাসকও স্বীকার করেছেন, ‘গন্ডামারায় জমির মালিকরা প্রকৃত মূল্য পায়নি। মাঝখান থেকে কিছু বাটপার দালাল টাকা নিয়ে গেছে। ফলে এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভ জন্মেছে।’ জেলা প্রশাসক সেদিন আরও বললেন ‘পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার করবে না। যারা গ্রেফতার আছে তাদের জামিন চাইলে জামিনের ব্যবস্থাও করা হবে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।’
অথচ এরকম প্রতিশ্রুতি দেবার পরও আবারও দরিদ্র, অপুষ্ট শিশু বৃদ্ধ নারীপুরুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে শতশত জবরদস্ত সশস্ত্র পুলিশ। দিনের পর দিন সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গত সপ্তাহে ঢাকা ও বাঁশখালী থেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের পর গন্ডামারায় একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে গত ১৪ মে থেকে। নিজেরাই গুলি করে ৮০ বছরের বৃদ্ধের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে অস্ত্র। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অনেকে। লুটপাট হয়েছে বিভিন্ন ঘরে। কীভাবে সরকারি প্রশাসনকে বিশ্বাস করবে মানুষ?
উপক’লীয় অঞ্চল বাঁশখালীর অধিকাংশ মানুষ গরীব, নিরক্ষর। কিন্তু তাঁরা সাবালক হিসেবেই জালিয়াতি আর প্রতারণার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন কয়লা বিদ্যুতের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে। সেগুলোর উত্তর না দিয়ে গুলি হামলা মামলা চালিয়ে জবরদখলের তৎপরতার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাই এসব অপতৎপরতা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ পথে বিষয়টি সমাধান করুন। সেজন্য প্রথমত, হত্যাকান্ডের বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনুন। দ্বিতীয়ত, জোর জুলুম গ্রেফতার নির্যাতন মিথ্যা মামলা বন্ধ করুন। এবং তৃতীয়ত, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন করা এবং জনসম্মতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের সকল কাজ বন্ধ রাখুন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমরা তাই আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আবারও দাবি জানাচ্ছি-
* সুন্দরবনবিনাশী এনটিপিসি-ওরিয়নসহ সকল প্রকল্প বাতিল করতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবারও দাবি, আপনারা যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করুন এবং দুদেশের সুন্দরবন বিকাশে কর্মসূচি নিন।
* বাঁশখালী হত্যাকান্ডের বিচার, নির্যাতন ধরপাকড় অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন করা এবং জনসম্মতি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের সকল কাজ বন্ধ রাখতে হবে। খাসজমি ভ’মিহীনদের ফেরৎ দিতে হবে।
* জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকতে হবে।
* রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের মধ্যে যেভাবে দুনিয়ার মধ্যে সবচাইতে ব্যয়বহুল, উচ্চ ঋণনির্ভর প্রকল্প হতে যাচ্ছে তাতে তা সারা দেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বোঝা ও ঋণগ্রস্ততা তৈরি করবে। এছাড়া পারমাণবিক বর্জ্যসহ যেসব ঝুঁকি জনবহুল এই দেশে অনেক বেশি তার সম্পর্কে সরকারের ব্যাখ্যাও অসন্তোষজনক। আমরা সরকারের কাছে জবাব চাই কেনো কম ব্যয়ে, কম ঝুঁকিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জনগণকে আর্থিক এবং অস্তিত্বের বিপদে ফেলা হচ্ছে?
এই সব দাবিতে
* আগামী ২৯ মে দেশব্যাপী দাবি দিবস পালন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এইদিন আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
* ২০ মে থেকে ৩০ জুলাই সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে জনসংযোগ, সভা, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। এছাড়া
* আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সকল অনুষ্ঠানে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনধ্বংসী সকল অপতৎপরতা বন্ধের দাবি সামনে আনার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
* আগামী ১৪ জুন মাগুড়ছড়া দিবস। মাগুড়ছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদ ধ্বংসের জন্য শেভ্রন ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সুন্দরবন রক্ষাসহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবি নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
আমরা বারবার বলি: ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই’, ‘যা দেশকে বিপন্ন করে তা উন্নয়ন নয়’, ‘দেশধ্বংসী রামপাল, রূপপুর, বাঁশখালী প্রকল্প নয়, বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে’।
ধন্যবাদ।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি
মুক্তি ভবন, ১৯ মে ২০১৬