?> সুন্দরবন রক্ষায় ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কনভেনশন এবং ১১ থেকে ১৬ মার্চ সুন্দরবন অভিমুখে জনঅভিযাত্রা « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, January 11th, 2015

সুন্দরবন রক্ষায় ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কনভেনশন এবং ১১ থেকে ১৬ মার্চ সুন্দরবন অভিমুখে জনঅভিযাত্রা

৯ জানুয়ারি ২০১৫ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে “সুন্দরবনে তেল বিপর্যয়ের একমাস: মাঠ গবেষণা ও অনুসন্ধান রিপোর্ট- প্রস্তাবনা ও কর্মসূচি” শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ড.আব্দুল্লাহ হারুণের গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। এছাড়া সুন্দরবনের পরিস্থিতির উপর তৈরীকৃত দুটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী অনুপম সৈকত শান্ত ও শিল্পী আনুশেহ আনাদিল। ১১ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর সময়ে পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে পানিতে ও মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত তেলের উপস্থিতি পাওযা যায়। এছাড়া পানির অস্বচ্ছতা, কম উৎপাদনশীলতা, ফাইটোপ্লাংকটন এবং জুয়োপ্লাংকটন এর আশঙ্কাজনকভাবে কম উপস্থিতি ও বৈচিত্রহীনতা ইত্যাদি লক্ষণ নির্দেশ করছে যে সুন্দরবনের ঐ অঞ্চলটি মারাত্মক তেল দূষণের শিকার হয়েছে। সর্বমোট ১২০০ বর্গ কিমি গবেষণা এলাকার মধ্যে ৫০০ বর্গ কিমি এর বেশি এলাকা তেল দূষণের শিকার হয়েছে বলে দেখা গেছে। ০৯ ডিসেম্বরের এই দূষণের ফলে সুন্দরী গাছের পুর্নজন্ম বা রিজেনারেশান, মাডস্কিপার-কাকড়া-শামুক-গুইশাপ, জোয়ার ভাটা প্লাবিত অঞ্চলের পাখি (বিপন্ন প্রজাতির মাস্ক ফিন ফুট), বক-মাছরাঙা ইত্যাদি পাখি, উদবিড়াল, ভোদড়, ডলফিন ও কুমিড়ের বসতি, সংখ্যা ও প্রজাতি বৈচিত্র নানা মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে।এছাড়া তথ্য চিত্রে সুন্দরবন অঞ্চলের পরিবেশ, মৎসজীবী ও বনজীবীদের উপরে তেল বিপর্যয়ের ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সন্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ইউএনডিপিকে সরকার কিংবা দেশী-বিদেশী কোম্পানির প্রভাব মুক্ত হয়ে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রণয়ণের দাবী জানান। তিনি আরও বলেন ‘সর্বজনের সম্পদ সুন্দরবন দেশী বিদেশী কোম্পানির হাতে বিক্রি করার অধিকার সরকারের নাই।’ প্রকৌশলী ম.ইনামুল হক তার বক্তব্যে অবিলম্বে ঘষিয়াখালী চ্যানেল খুলে দিতে জরুরি ভিত্তিতে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে জোর তাগিদ দেন।
সুন্দরবন রক্ষায় জাতীয় কমিটি সরকারের কাছে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করে:
১) প্রাকৃতিক পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা নির্বিঘ্ন করতে হবে। কোন ধরনের কথিত উন্নয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তা বাধাগ্রস্থ করা যাবে না।
২) তেল দূষণের বর্জ্য নিরাপদে উচ্চতাপে পুড়িয়ে ফেলার(Inceneration) ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) তেল নি:সরণের জন্য যাদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেসকল মৎসজীবী বনজীবীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪) ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগণকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে মনিটরিং করতে হবে।
৫) সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র ও জলজ বাস্তুসংস্থানের উপর তেল দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে নিরুপন করতে হবে ও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।
৬) শেলা নদী, পশুর নদী সহ সুন্দরবনের সকল নদী পথেই তেল-কয়লা সহ সকল ধরনের কার্গো জাহাজ চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৬ মাসের মধ্যে ঘষিয়াখালী চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করতে হবে। পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার জন্য স্থানে স্থানে বাধ অপসারণ করতে হবে।
৭) এনটিপিসি ও অরিয়নের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী সকল কথিত উন্নয়ন তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৮) ভবিষ্যতে নদী বা সাগরে যে কোন ধরণের তেল দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব সীমিত করণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে, দ্রুত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হবে।

প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জাতীয় কমিটির নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করেন:

১) ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে বিজ্ঞানী, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে সুন্দরবন রক্ষায় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।

২) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে ফুলবাড়ী কমিটির ডাকে ঐ অঞ্চলে অবরোধ এবং দেশব্যাপী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

৩) ১১-১৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে ঢাকা থেকে সুন্দরবন অভিমুখে সুন্দরবন রক্ষায় জনঅভিযাত্রা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ড.স্বপন আদনান, মোশাহিদা সুলতানা,  সিদ্দিকুর রহমান, টিপু বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী,সাইফুল হক, মোশারফ হোসেন নান্নু, জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গির আলম ফজলু,  মোশতাক হোসেন, শামসুল আলম।