?> জনপ্রতিরোধই এশিয়া এনার্জির সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সুন্দরবন ধ্বংসী প্রকল্প রুখে দেবে « NCBD – National Committee of Bangladesh

Monday, December 8th, 2014

জনপ্রতিরোধই এশিয়া এনার্জির সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সুন্দরবন ধ্বংসী প্রকল্প রুখে দেবে

সুন্দরবনধ্বংসী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল, বঙ্গোপসাগরের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বিদেশি বেনিয়াদের হাতে তুলে দেবার প্রক্রিয়া বন্ধ এবং জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আগামি ২২ ডিসেম্বর দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল এবং এশিয়া এনার্জি বহিস্কার; অনুপ্রবেশ, উস্কানি ও দুর্নীতি-সন্ত্রাস বিস্তারের দায়ে গ্যারী লাইকে গ্রেফতার ও বিচার; এবং ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’র পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে ২৭ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

ফুলবাড়ীর এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)এর সন্ত্রাসী তৎপরতা, সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পিপিএসসি ২০১৫ বিষয়ে আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর মুক্তি ভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ। সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সংগঠক ও সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। প্রকৌশলী বি.ডি রহমতউল্লাহ, রাজনীতিক খালেকুজ্জামান, সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, সাইফুল হক, টিপু বিশ্বাস, সিদ্দিকুর রহমান, শুভ্রাংশু চক্রাবতী, মোশরেফা মিশু, জোনায়েদ লাকী, রজলুর রশীদ ফিরোজ, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, আব্দুস সাত্তার, আহসান হাবীব লাবলু, শামসুল আলম, মহিন উদ্দিন চৌধুরী, নাসির উদ্দিন নাসু, মাসুদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০০৬ সালে গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ফুলবাড়ী থেকে এশিয়া এনার্জি বিতাড়িত হলেও চক্রান্ত থামেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জরুরি অবস্থার সুযোগে কোম্পানি আবারো এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা চালায়। ফুলবাড়ী আন্দোলন সংগঠকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হুমকি, হয়রানি এবং সেইসঙ্গে সংগঠিত মিথ্যা প্রচারণা কোনকিছুই জনগণকে হঠাতে পারেনি। গত ২০১২ সালের নভেম্বরে সরকার দশ থানার পুলিশ আনিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে কোম্পানির প্রবেশের রাস্তা পরিস্কার করবার চেষ্টা করে। জনপ্রতিরোধ সেই চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেয়। ২০১৩ সালে বস্ত্র বিতরণের প্রতারণামূলক প্রচার করে গ্যারী লাই গং এলাকায় প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিল, তখনও জনপ্রতিরোধের মুখে পুলিশের আশ্রয়ে পালিয়েছিলো। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বরেও তাদেরকে জনতাড়া খেয়ে পালাতে হয়েছে। চক্রান্ত আছে, জনপ্রতিরোধও জারি আছে। এই অবিরাম প্রতিরোধের মাধ্যমে ফুলবাড়ীসহ ছয় থানার মানুষ শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, পুরো বাংলাদেশকে অচিন্তানীয় এক ধ্বংযজ্ঞ থেকে রক্ষা করছেন। তিনি বলেন ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এরা চক্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানী ছাড়াও মার্কিন দূতাবাস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের তৎপরতাও আমরা জানি। বহু অপরাধ এই ভুইফোঁড় জালিয়াত কোম্পানির। সেগুলোর মধ্যে আছে: ১. দেশের পানি সম্পদ আবাদী জমি ও উত্তরবঙ্গের ধ্বংসযজ্ঞের একটি প্রকল্পকে ঘুষ আর কমিশন দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে প্রচার। ২. কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ফুলবাড়ী কয়লা খনি দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে লন্ডনে এই কোম্পানির শেয়ার ব্যবসা অব্যাহত রাখা। ৩. সেই মুনাফার টাকায় এই দেশে কতিপয় মন্ত্রী, আমলা, কনসালট্যান্ট, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ভাড়া করে মিথ্যাচার চালানো। ৪. সমর্থক গোষ্ঠি তৈরির চেষ্টায় এলাকায় দুর্নীতি ও মাদকদ্রব্যের বিস্তার ঘটানো। ৫. সম্পদ লুণ্ঠনের প্রয়োজনে খুন সন্ত্রাস জখমের নতুন চক্রান্ত ও অপতৎপরতা। এসব অপরাধে এই কোম্পনির কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বিচার এবং কোম্পানিকে বহিস্কার অবশ্য করনীয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ও বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বছর ঢাকা থেকে সুন্দরবন লংমার্চ ছাড়াও বহুবার আপনাদের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রকাশনার মধ্য দিয়ে এমনকি সরকারের কাছে লিখিতভাবে ও আনুষ্ঠানিক বৈঠকে, কেনো এই কেন্দ্র বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী, সুন্দরবন ও মানববিধ্বংসী, তা আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ তথ্য যুক্তিসহ তুলে ধরেছি। ভারতীয় কোম্পানি (এনটিপিসি)নিজদেশের আইন ভঙ্গ করে বাংলাদেশের জন্য সর্বনাশা এই প্রকল্পে চালকশক্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য ও যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছে যে, প্রাকৃতিক রক্ষাবম হিসেবে বাংলাদেশর মানুষ ও প্রকৃতিকে যে সুন্দরবন রক্ষা করে, অসাধারণ জীববৈচিত্রের আধার হিসেবে যা প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে সেই সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে এই প্রকল্প।

সরকার এসব যুক্তির প্রতি কর্ণপাত না করে প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে, উপরন্ত বাংলাদেশের ওরিয়ন নামে আরেকটি কোম্পানিকে সুন্দরবনের আরও নিকটবর্তী স্থানে আরও একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ করে দিয়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলে সরকারি ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জমি দখল করে সুন্দরবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আরও বনজমি দখলের তৎপরতা এখন জোরদার। বিশ্বব্যাংক ও ইউএসএইডের তহবিলে তৈরি হচ্ছে নানা প্রকল্প। বলাইবাহুল্য সরকারের এসব ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ইতিমধ্যে ইউনেস্কো এবং রামসার পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণ-বৈচিত্রের অসাধারণ আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচাইতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষা বর্ম সুন্দরবন ঘিরে একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ বিভিন্ন মুনাফামুখি তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আমরা বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে যথাযথ পথ গ্রহণে সবসময়ই দাবি করে আসছি, জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবিতে তার সমাধানের পথও দেখিয়েছি। জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবী অনুযায়ী রেন্টাল পাওয়ারের চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু, মেরামত ও নবায়ন করা, খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন করে শতভাগ গ্যাস ও কয়লা বাংলাদেশের শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার, জনবিরোধী পিএসসি প্রক্রিয়া বাতিল করে স্থলভাগে ও সমুদ্রে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ, ক্ষমতা ও বরাদ্দ প্রদান, বিদ্যুৎকে গণপণ্য হিসেবে বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশীয় মালিকানায় বিদ্যুৎ খাতকে শক্তিশালী করবার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ইত্যাদি কাজে অগ্রাধিকার প্রদান করার মধ্যই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের প্রকৃত সমাধান নিহিত।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারকে এসব গণবিরোধী তৎপরতা বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে। জনপ্রতিরোধেই এশিয়া এনার্জির সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সুন্দরবনধ্বংসী প্রকল্প রুখে দেবে।