?> প্রতিক্রিয়া:আন্দোলনকারীরা দেশ ও মানুষের জন্য গ্যাস কয়লা তুলতে বা সর্বোত্তম ব্যবহারের কথা বলে « NCBD – National Committee of Bangladesh

Friday, June 20th, 2014

প্রতিক্রিয়া:আন্দোলনকারীরা দেশ ও মানুষের জন্য গ্যাস কয়লা তুলতে বা সর্বোত্তম ব্যবহারের কথা বলে

গত ২২ মে ২০১৪ ইং তারিখে দৈনিক বণিক বার্তায় বর্তমান বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ এর বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এটি পড়ে আমি তাঁর বক্তব্যে কিছু অংশের প্রতিক্রিয়া জানানো আমার দায়িত্ব মনে করি।

ড. সামাদ বলছেন, ‘মাটির নিচের এসব ( তেল-গ্যাস-কয়লা) সম্পদ উত্তোলন না করা হলে একসময় আর তা ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। তার পরও তারা কেন এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে দিচ্ছেনা, তা বোঝা যাচ্ছে না’। তিনি নাম না বললেও যে কেউ বুঝবেন তিনি তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল নির্দেশ করেছেন। আমি এই কমিটির কাগজপত্র দেখেছি, ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ সময়কালে তেল-গ্যাস কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের বহু লেখালেখি দেখেছি, তাঁদের নানান কর্মসূচির সাথে অবরোধ, হরতাল, দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত রোড মার্চ, লং মার্চ ইত্যাদির বক্তব্য লক্ষ্য করেছি। মৌখিক কি লিখিত কোথাও কোন বক্তব্যেই তো এরকম দেখি নাই যে তাঁরা বলছেন, “তেল-গ্যাস-কয়লা আমরা তুলতে দেব না।” এই সাক্ষাৎকার পড়বার পর আমি আবার এই অভিযুক্ত আন্দোলনকারীদের ওয়েবসাইট (www.ncbd.org) দেখলাম, সেখানে তাঁদের ৭ দফা দাবিসহ অন্যান্য লেখালেখি দেখলাম। কোথাও দেশের “তেল গ্যাস কয়লা তুলতে দেবো না” এরকম কোন বক্তব্য পেলাম না। পেলাম যা তার মধ্যে আছে, “দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে এমনভাবে তুলতে হবে যাতে সে সম্পদের প্রতিটি বিন্দু দেশের উন্নয়নের কাজে লাগে।” এজন্য খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধ করবার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় সক্ষমতা বিকাশসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। পঙ্গু না করে জাতীয় সংস্থার শক্তি ও ক্ষমতা  বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই জাতীয় সংস্থা দুনিয়ার যে কোন সংস্থার চাইতে কম খরচে এবং দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস তোলার সক্ষমতা দেখিয়েছে। স্বল্প মূল্যে গ্যাস বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে কর দেয়ার পরও সংস্থাগুলো লাভজনক অবস্থায় আছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মানুষ জীবন দিয়ে এশিয়া এনার্জির ভয়াবহ প্রকল্প ঠেকিয়েছেন। জনাব সামাদ হয়তো এরকম বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু তারা কী চেয়েছিলো? তারা বাংলাদেশকে শতকরা মাত্র ৬ ভাগ রয়ালটি দিয়ে পুরো কয়লা খনি দখল করতে চেয়েছিলো, চেয়েছিলো শতকরা ৮০ ভাগ কয়লা রফতানি করে দেশকে সম্পদ শুণ্য করতে। আর এই কয়লা তারা এমন পদ্ধতিতে তুলতে চেয়েছিলো যাতে দেশের পানি সম্পদ ও আবাদী জমি এক ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়তো। এরকম বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে দেশের উন্নয়নের কী অবস্থা কী হয় তার প্রমাণ আফ্রিকার বহু দেশ। আন্দোলনকারীরা এরকম ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন বরং।

কোন দেশে বিদেশি বিনিয়োগ হলেই যে সেদেশের উন্নয়ন হয় না তার বহু উদাহরণ এই কমিটির ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এখানে চুক্তি ও বিনিয়োগের শর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় দেখি, কাফকোতে বিদেশি বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশের মোট আর্থিক ক্ষতি হবে ১১,৫০০ কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে বড় বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী শেভরনেকে দেয়ার ফলে কয়েকবছরে তারা ১৬,০০০ কোটি টাকায় আমাদের কাছে যে পরিমাণ গ্যাস বিক্রি করেছে তা জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে পেতে গেলে মাত্র ২,০০০ কোটি টাকায় সম্ভব ছিলো। কয়েক বছরে শেভ্রন প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে। এই বিপুল পরিমান অর্থ দেশের শিক্ষা চিকিৎসাসহ অন্যান্য কাজে লাগানো যেত এবং দেশের মানুষ কম দামে গ্যাস পেত। বিদেশি কোম্পানি (অক্সিডেন্টাল, নাইকো) আমাদের দুইটা গ্যাসক্ষেত্র (মাগুড়ছরা, টেংরাটিলা) জ্বালিয়ে দিলো, যার বর্তমান গ্যাসের বাজার মূল্য ৫০ হাজার কোটি টাকা, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ পায় নাই। এপর্যন্ত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ পর্যালোচনা করলে বিনিয়োগের নামে লুন্ঠনের চেহারাটাই ভেসে আসে।

চেয়ারম্যান সাহেব এরকম হাস্যকর কথাও বলেছেন যে, এই সম্পদ নাকি কিছুদিনের মধ্যেই পুরনো মুদ্রার মতো অচল হয়ে যাবে। এরকম দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল বক্তব্য আমি আশা করেছিলাম। আমাদের বিনিয়োগ দরকার কিন্তু যে বিনিয়োগ “সম্পদ সৃষ্টি করে, নতুন সম্পদ যোগ করে, মানুষের জীবন সহজ করে, উৎপাদনশীল খাতের সম্প্রসারণে সহায়ক হয়, দেশের সক্ষমতা বাড়ায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সৃষ্টি করে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ জগৎ”, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সেরকম বিনিয়োগ চাই। চেয়ারম্যান সাহেব তার উল্টো কথা বলছেন।