?> ‘মায়ানমার বাংলাদেশের জন্য কোন মডেল হতে পারে না।’ « NCBD – National Committee of Bangladesh

Friday, June 27th, 2014

‘মায়ানমার বাংলাদেশের জন্য কোন মডেল হতে পারে না।’

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত ২৬ জুন বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, মার্কিন কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস বঙ্গোপসাগরে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে প্রচুর গ্যাস (৫-৭ ট্রিলিয়ন ঘণফুট গ্যাস) প্রাপ্তির সম্ভাবনা (বিলম্বে হলেও) স্বীকার করেছে। একইসঙ্গে তারা পিএসসি চুক্তিতে নির্ধারিত গ্যাস ক্রয়ের দাম মামারবাড়ির আবদারের মত ৪ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭ ডলার করা এবং প্রতিবছর তা ২ শতাংশ করে বাড়ানোর দাবি করেছে। সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কোম্পানির দাবির পক্ষে যুক্তি প্রদান করেছেন। কোম্পানি মায়ানমারের মতো সুবিধা চায় বলে তিনি বলেছেন, আগামি কয়েক বছরে যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারেও গ্যাসের দাম বাড়বে সুতরাং কনোকো-ফিলিপস এর গ্যাসের দাম বাড়ালে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না।

কোম্পানির দাবি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর যুক্তি তিন কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত: মায়ানমার দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীন একটি দেশ। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর লুন্ঠন ও সম্পদ পাচারের স্বার্থে সেখানে নীতি প্রণয়ন ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে আসছে। এই কারণে দীর্ঘদিন ধরে বহুজাতিক কোম্পানি সে দেশের বিপুল খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান-উত্তোলন ও রফতানিতে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র ও লোডশেডিং পরিস্থিতি বাংলাদেশের চাইতেও সেখানে খারাপ। কতিপয় সামরিক জেনারেলসহ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠি এবং কিছু বহুজাতিক কোম্পানি এই খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও রফতানির মাধ্যমে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছে বলে ধারনা করা যায়। কিন্তু সেই দেশের জনগণ বা অর্থনীতি এর কোন সুফল পায় নি। এই মায়ানমার বাংলাদেশের জন্য কোন মডেল হতে পারে না। বাংলাদেশের এই পরিণতি আমার মেনে নিতে পারি না।

দ্বিতীয়ত: আগামি কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়বে এটা নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারে না। কারণ গত এক দশকে গ্যাসের আন্তর্জাতিক দামে ওঠানামা দেখা যায়। কখনো কখনো এটা ৪ ডলারের নীচে নেমে এসেছে।

তৃতীয়ত: আন্তর্জাতিক বাজার দর যাইহোক না কেন চুক্তি করার পর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। গ্যাসের আন্তর্জাতিক গড় বাজার দর হিসাব করতে হবে শেভরণ ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য।  শুধুমাত্র গ্যাস সম্পদ বিনষ্টের জন্য যাদের কাছে আমাদের পাওনা ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা আদায় করবার ব্যাপারে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই।

বস্তুত: সরকারের আত্মসমর্পন ও প্রশ্রয় দানের ভূমিকার কারণেই কনোকো-ফিলিপস এই দাবি করার সাহস পাচ্ছে। এটা পূরণ হলে হাজির হবে শেভরণসহ অন্যরা। কিছুদিন আগেই ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি-কে বর্ধিত দামের সুবিধা দানের জন্য পিএসসি-২০১২ সংশোধন করা হয়েছে। এরফলে এই অবস্থা তৈরির সুযোগ হয়েছে। কোম্পানিগুলো পরিষ্কার দেখেছে জ্বালানি মন্ত্রনালয় সর্বদা তাদের স্বার্থ রায় নিয়োজিত। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে গোপন বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন আবদার নিয়ে হাজির হচ্ছে।

কনোকো-ফিলিপস এর সাথে ২০১১ সালে সরকার যে চুক্তি করেছে তা জাতীয় স্বার্থবিরোধী। কারণ এই চুক্তিতে শতকরা ৮০ ভাগ গ্যাস সম্পদের মালিকানা ও তা রফতানির অধিকার কনোকো-ফিলিপসকে দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু এই গ্যাস বাংলাদেশের ভিতরে আনার জন্য পাইপলাইনের যে খরচ বাংলাদেশকে করতে হবে তা মার্কিন কোম্পানির বিনিয়োগের চাইতেও বেশি। সেজন্য যে বিপুল গ্যাস সম্পদ বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যাচ্ছে তার সুফল বাংলাদেশ পাবে না। এরপর যদি বাংলাদেশের গ্যাসের দাম আরো বাড়ানো হয় বাংলাদেশ ভয়াবহ আর্থিক তির সম্মুখীন হবে।

কনোকো-ফিলিপস বলেছে, দাম না বাড়ালে তারা আর বিনিয়োগ করবে না! এই হুমকিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বে এনে প্রয়োজনে সাব-কন্ট্রাক্টর ও অভিজ্ঞ বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করতে হবে। এই নীতি গ্রহণ করলে আগামী কয়েক দশকে কম খরচে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নে বড় ধরনের অগ্রগতির মডেল তৈরি সম্ভব হবে। সুতরাং কনোকো-ফিলিপসসহ বিদেশি কোম্পানি ও তার কমিশনভোগীদেও স্বার্থ রার জন্য জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলী দেবার তৎপরতা বন্ধ করে জাতীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের প্রয়োজনীয় এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।