?> যৌথ বিবৃতি: ভারতে আবারো অভিযুক্ত এনটিপিসি দিয়ে সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল কর « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, March 20th, 2014

যৌথ বিবৃতি: ভারতে আবারো অভিযুক্ত এনটিপিসি দিয়ে সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল কর

বাংলাদেশে যখন সুন্দরবনের সন্নিকটে ভারতের এনটিপিসি সরকারের অতিউৎসাহী সহযোগিতায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে এগিয়ে যাচ্ছে তখন গত ১৩ মার্চ ২০১৪ তারিখে ভারতের ন্যাশনাল গ্রীণ ট্রাইবুনাল কর্ণাটক রাজ্যে ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল করপোরেশন(এনটিপিসি) এর প্রস্তাবিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত করে দিয়েছে। কর্ণাটক রাজ্যের বিজাপুর জেলার কুজ্জি গ্রামে এনটিপিসি’র ২৪০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিতের কারণ হিসেবে আদেশে বলা হয়েছে: (১) এনটিপিসি পরিবেশছাড় পত্র পাওয়ার জন্য প্রকল্প এলাকার জমি সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে, দুই ফসলী কৃষি জমিকে অনুর্বর ও পাথুরে জমি বলে চালিয়ে দিয়েছে; (২) এনটিপিসি কর্তৃক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়ণের আগেই পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। (৩) পরিবেশ সমীক্ষার শর্ত অনুসারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত বায়ুর  সম্ভাব্য গতিপথে মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করে সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষণের বিদ্যমান মাত্রা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর সম্ভাব্য মাত্রা এবং আশপাশের পরিবেশের উপর তার প্রভাব হিসেব করা উচিত ছিল। কিন্তু এনটিপিসি পরিবেশ সমীক্ষার এই শর্ত সঠিক ভাবে পালন করেনি। (৪) গণশুনানির সময় স্থানীয় জনগণ কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগ গুলোর উপযুক্ত জবাব না দিয়েই এই ছাড়পত্র দেয়া হয়।

এনটিপিসি’র বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ নতুন নয়- বিভিন্ন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুর্নবাসন, ক্ষতিপূরণ ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অভিযোগ তো আছেই, খোদ ভারতীয় কর্তৃপক্ষই বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে এনটিপিসি’র এসব কাজে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তেল-গ্যাস-খনিজ  সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ভারতে এনটিপিসির বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেও তার সত্যতা পেয়েছে।

যে সকল গুরুতর অভিযোগের কারণে ভারতের গ্রীণ ট্রাইবুনাল এনটিপিসির কর্ণাটকের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ ছাড়পত্র স্থগিত করেছে, বাংলাদেশের রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে এরচেয়ে গুরুতর প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও এনটিপিসি ও পিডিবি’র যৌথ বিনিয়োগের এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ‘অগ্রাধিকার’ প্রকল্প হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কর্ণাটক রাজ্যের ঐ প্রকল্পের মতো বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাশে রামপাল প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অনিয়ম, তথ্য গোপন, ভুল তথ্য প্রদান, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ আছে যেমন:

ক) পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন করার আগেই জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের কাজ শুরু। লোক দেখানো গণশুনানি আয়োজন এবং গণশুনানিতে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে না নেয়া; (২) ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি কর্তৃক ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তরের গাইড লাইন অনুসারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫ কিমি এর মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করার নিয়ম ভঙ্গ করা; (৩)সুন্দরবনকে পরিবেশগত স্পর্শকাতার এলাকার বদলে আবাসিক ও গ্রাম্য এলাকা বলে দেখিয়ে সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাসের সম্ভাব্য ক্ষতিকে সহনীয় মাত্রায় দেখানোর চেষ্টা; (৪) সমীক্ষার শর্তানুসারে সবক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ও প্রাথমিক ডাটা ব্যাবহারের বদলে সুবিধা অনুযায়ী পুরাতন ও সেকেন্ডারি ডাটা ব্যাবহার করা। (৫) সারাবছর বাতাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দিকে প্রবাহিত হবেনা বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের  নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা; (৬) আশপাশের কৃষিজমি, নদী-নালা ও সুন্দরবনের উপর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাই, ছাই ধোয়া পানি, ছাইয়ের মধ্যে থাকা বিষাক্ত ভারী ধাতুর ক্ষতিকর প্রভাব অস্বীকার; (৭) সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে কয়লা পরিবহনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দেখানো;

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম সুন্দরবন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে এমনিতেই বিপর্যস্ত। এই বিপর্যস্ত সুন্দরবনকে রক্ষার প্রকল্প নেয়ার বদলে উল্টো এনটিপিসির মতো একটি বিতর্কিত ও পরিবেশ বিষয়ে বিপদজনক ট্র্যাক রেকর্ড সম্পন্ন একটি কোম্পানির সাথে যৌথ বিনিয়োগে সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিমি এর মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নি:সন্দেহে সুন্দরবন ধ্বংস নিশ্চিত করবে। আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবী জানাই এবং সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর সবধরনের তৎপরতা বন্ধ করবার আহবান জানাই।

স্বাক্ষরদানকারী :

তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. নাসিম আখতার হুসাইন, মির্জা তসলিমা, স্বাধীন সেন ও সায়েমা খাতুন, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন, আইন ও সালিস কেন্দ্রের হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ, ড. মোহাম্মদ তানজিমউদ্দীন খান, ফাহমিদুল হক ও মোসাহিদা সুলতানা, লেখক ও কলামিস্ট রেহনুমা আহমেদ, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা ও শ্যামলী শীল, গবেষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, আলোকচিত্রশিল্পী ও সংগঠক তাসলিমা আখতার, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, উন্নয়ন কর্মী শিপ্রা বোস, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্লগার ও রাজনীতিক বাকী বিল্লাহ, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, লেখক ও শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী ফিরোজ আহমেদ,লেখক ও গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বিডি রহমতুল্লাহ।