?> ২০ কিমি পর্যন্ত এলাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে পেট্রোবাংলা « NCBD – National Committee of Bangladesh

Saturday, June 2nd, 2018

২০ কিমি পর্যন্ত এলাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে পেট্রোবাংলা

কক্সবাজারের কলাতলীর পশ্চিমে গভীর সমুদ্র থেকে মহেশখালী দ্বীপ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। আমদানিকৃত এলএনজি বহনকারী জাহাজ ও ভাসমান টার্মিনালের নিরাপত্তার স্বার্থে সমুদ্রের ওই এলাকায় মাছ ধরায় এ নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, মহেশখালী দ্বীপ থেকে সাড়ে তিন-চার কিলোমিটার দূর সমুদ্রে পেট্রোবাংলার ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের অবস্থান। সেখান থেকে ২ দশমিক ২৯ কিলোমিটার উত্তরে সামিট পাওয়ারের এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে। আর পেট্রোবাংলার এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং কলাতলী সৈকত থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে নোঙর করে রাখা হবে এলএনজিবাহী জাহাজ। ফলে জাহাজ নোঙর করার অবস্থান থেকে পেট্রোবাংলা ও সামিটের ভাসমান টার্মিনাল পর্যন্ত মোট ২০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে এলএনজি প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য কলাতলী থেকে মহেশখালী দ্বীপ পর্যন্ত মত্স্য শিকার বন্ধ করতে পেট্রোবাংলার কাছে অনুরোধ করেছে টার্মিনাল মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে এলএনজি নিয়ে আসা জাহাজ, সার্ভিস ভেসেল ও ভাসমান টার্মিনালের নিরাপত্তা বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই এলএনজি প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মত্স্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিতে পেট্রোবাংলার কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ২১ মে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পেট্রোবাংলা। 

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, এলএনজিবাহী জাহাজ চলাচলের সময় সাগরে জাল থাকলে জাহাজ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই ঝুঁকি এড়াতে এবং বিদেশী ভাসমান টার্মিনাল, পোর্ট সার্ভিস ভেসেল এবং টাগ বোটের নিরাপত্তায় মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এটা সব সময়ের জন্য নয়, কেবল জাহাজ চলাচলের সময় বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

দেশে ইলিশের পাঁচটি অভয়ারণ্যের একটি কক্সবাজারের মহেশখালী। এছাড়া শুঁটকি মাছের জন্যও বিখ্যাত দ্বীপ উপজেলাটি। বর্তমানে এখানে তিনটি শুঁটকিপল্লী রয়েছে। কৃষির পর মত্স্য শিকারই এখানকার জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা। উপকূলজুড়ে মত্স্য শিকার বন্ধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ পেশার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। সরবরাহ কমবে শুঁটকিসহ সামুদ্রিক মাছের।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হোসাইন জামাল বলেন, মত্স্যজীবীরা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা ঠিক। মাছ শিকার বন্ধ থাকলে সরকার জেলেদের নানা সুবিধা দিয়ে ক্ষতি মেটানোর চেষ্টা করে থাকে। এক্ষেত্রেও তেমনটি করা হলে সমস্যা হবে না। এছাড়া জাহাজ চলাচল কালে যেকোনো এলাকায় মাছের বিচরণ কম হয়। তাই এলএনজি এলাকায় যেহেতু জাহাজ আসা-যাওয়া হবে, তাই ওই এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে জেলেদের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক ৩৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। অর্থাৎ দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে। এ সংকট ক্রমেই বাড়ছে। এদিকে নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু না হওয়ায় সংকট তীব্র হচ্ছে। তাই ঘাটতি দূর করতে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয় জ্বালানি বিভাগ। এ লক্ষ্যে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ ও ব্যবহার বিষয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পেট্রোবাংলা ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে চুক্তি হয়। এরই মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) নির্মাণ শেষ করেছে এক্সিলারেট এনার্জি। ওই টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

গত মাসের শেষের দিকে এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে দেশের প্রথম টার্মিনাল থেকে ব্যয়বহুল এ গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। একই এলাকায় আরো ৫০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার অপর একটি টার্মিনাল স্থাপনে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করেছে সামিট। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ওই টার্মিনাল থেকেও জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের কথা রয়েছে।