![](https://ncbd.org/wp-content/themes/ncbd_tapon/images/corner-cap-news.png)
Wednesday, August 21st, 2019
হাইপ্রেশার জোনে কূপ খননে আগ্রহী শেভরন
স্থলভাগে নতুন করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন। সম্প্রতি স্থলভাগের ১১টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চলে (হাইপ্রেশার জোন) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে আগ্রহ জানিয়ে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছে শেভরন। প্রচলিত উৎপাদন বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) বাইরে পৃথক চুক্তির জন্যও প্রস্তাব দিয়েছে শেভরন।
বহুজাতিক এই কোম্পানিটি বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে যেতে চেয়েছিল। পিএসির মাধ্যমে প্রাপ্ত তিন গ্যাস ক্ষেত্রের শেয়ার বিক্রির বিষয়টিও চূড়ান্ত করেছিল। এ জন্য চীনের হিমালয়া নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও সই করে। কিন্তু পেট্রোবাংলা তা অনুমোদন করেনি। পরে শেভরন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সূত্র বলছে, শেভরন তাদের অংশের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও কম্প্রেসর স্থাপনে অনুমতি চেয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাজি না হওয়ায় মার্কিন কোম্পানিটি এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করা হলেও কম্প্রেসরের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমতি পাওয়ায় গ্যাস ক্ষেত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে শেভরন।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যেসব ব্লকে শেভরন অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর অনুমতি চেয়েছে সেগুলো হলো ১, ২এ, ২বি, ৩এ, ৩বি, ৮, ৯, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪। এই ব্লকগুলোর কয়েকটি এখনও কারও মালিকানায় নেই।। কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের (এসজিএফসিএল)। এ ছাড়া শেভরন তার নিজেদের তিনটি ব্লকের যেসব স্থানে আগে অনুসন্ধান চালানো হয়নি সেগুলোর হাইপ্রেশার জোনে অনুসন্ধান চালাতে চায়। শেভরন অনুসন্ধানে আগ্রহী ব্লকগুলোর মধ্যে সিজিএফএল ও বিজিএফসিএলের বিশেষ চিহ্নিত (রিং ফেন্স) স্থানও রয়েছে, যেগুলোতে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেতে বিজিএফসিএল, সিজিএফএল ও বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করতে চায় শেভরন। এ জন্য পেট্রোবাংলার অনুমতি চেয়েছে। সরকার এককভাবে শেভরনের হাতে জরিপের দায়িত্ব না দিয়ে বাপেক্সকে শেভরনের সঙ্গে রাখার পক্ষে বলে জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সমকালকে বলেন, স্থলভাগে গ্যাসের অনুসন্ধান আরও জোরদার করতে হবে। প্রচলিত জোনগুলোর বাইরেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য হাইপ্রেশার জোনের গভীরে অনুসন্ধান চালাতে হবে। আমরা এখন সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। শেভরন এ বিষয়ে আগ্রহী বলে জানান নসরুল হামিদ।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দেশের ভূতত্ত্ববিদ ও খনন প্রকৌশলীদের হাইপ্রেশার জোন সম্পর্কে তেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। কারণ বাংলাদেশে এই অঞ্চলে বলার মতো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি। ১৯৮৫-৮৬ সালে ফেঞ্চুগঞ্জে ৪ হাজার ৯৭৭ মিটার গভীরতায় একটি গ্যাস কূপ খনন করা হয়। যদিও কূপটি পাঁচ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা ছিল। এটিই দেশের সব থেকে গভীর গ্যাসকূপ।
বলা হয়ে থাকে সে সময় উচ্চচাপ এলাকা অতিক্রম করা হয়। এখানে তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়া যায়। বাপেক্স গঠনের আগে ফ্রান্সের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওই কূপ খননে পেট্রোবাংলাকে সহায়তা করে। এ ছাড়া মহেশখালীর কাঞ্চনে ভারতীয় কোম্পানি অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চলে কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। খনন কাজ এখরও শুরু হয়নি।
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, বাংলাদেশে হাইপ্রেশার জোনের অবস্থান একেক জায়গাতে একেক রকম। সাধারণ গ্যাস কূপগুলো দুই হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরতার হয়ে থাকে। এরও বেশি গভীরের অংশকে হাইপ্রেশার জোন বলে। এই জোনে গ্যাসের চাপও খুব বেশি হয়। তাই অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
সম্প্রতি পেট্রোবাংলা জালালাবাদ (ব্লক ১৩) ও মৌলভীবাজার (ব্লক ১৪) গ্যাস ক্ষেত্রের বিষয়ে শেভরনের সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছে। ফলে বহুজাতিক কোম্পানিটি এখন ২০২৯ পর্যন্ত এই দুটি গ্যাস ক্ষেত্রের মালিকানা ভোগ করবে। ব্লক ১২-তে অবস্থিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ২০৩৪ পর্যন্ত।
শেভরনের আওতাধীন তিন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দিনে ১৫৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়, যা দেশের মোট উত্তোলিত গ্যাসের ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে দেশের সব থেকে বেশি গ্যাস সরবরাহ হয় বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে, ১২৫ কোটি ঘনফুট। এ ছাড়া মৌলভীবাজার থেকে প্রায় এক কোটি এবং জালালাবাদ থেকে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন পেট্রোবাংলা ২৬৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে।