Tuesday, August 27th, 2019
সুন্দরবনের কাছে ৩ এলপিজি প্ল্যান্টের পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ
bdnews24বাগেরহাটের মংলায় সুন্দরবনের ‘প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন’ এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি কোম্পানিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) বোতলজাতকরণ কারখানা নির্মাণের পরিবেশগত ছাড়পত্র দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস), বারাকা এলপিজি লিমিটেড এবং ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডকে ৬০ দিনের মধ্যে এই ছাড়পত্র দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই তিন কোম্পানির রিট আবেদনে এর আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।
রুল নিষ্পত্তির পাশাপাশি রায়ে দুটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত বলেছে, সুন্দরবন রক্ষার জন্য ভবিষ্যতে সরকার যদি মোংলা শিল্পাঞ্চল এলাকায় শিল্প-কারখানা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এ রায় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
তাছাড়া ওই এলাকায় কী ধরনের কতগুলো শিল্পকারখানা স্থাপন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ সরকারের।
মোংলা শিল্পাঞ্চলের কিছু এলাকা সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা অর্থাৎ সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পড়েছে। আর কিছু এলাকা এর বাইরে।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, বারাকা এলপিজি লিমিটেড ও ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডের প্রস্তাবিত প্রকল্প মোংলা শিল্পাঞ্চলে হলেও তা পড়েছে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে।
আদালতে ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শফিক আহমেদ ও আইনজীবী মাহবুব শফিক। ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ এবং বারাকা এলপিজি লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মুনিরুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আইনজীবী মুনিরুজ্জামান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঠেঙ্গামারা মহিলা সমিতি ‘এলপিজি বটলিং প্লান্ট’ নির্মাণের জন্য পাঁচ বছর আগে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৬ একর জমি কেনে, যা সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় পড়েছে।
সরকারের অন্যান্য দপ্তর থেকে ওই প্রকল্প স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ২০১৮ সালে পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য অবেদন করে।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর সে আবেদনের নিষ্পত্তি না করায় তাদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে রিট করে ঠেঙ্গামারা মহিলা সমিতি।
আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, বারাকা লিমিটেড ২০০৬ সালে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি লিজ নেয়। গত বছর মার্চে তারা সেখানে এলপিজি বটলিং প্ল্যাণ্ট করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সে অবেদনটিও আটকে রাখলে গত বছরের ১১ জুন হাই কোর্টে রিট করে বারাকা লিমিটেড।
একই কারণে ডেল্টা এলপিজি লিমিটেডও আলাদাভাবে একটি রিট আবেদন করে। সে সময় তিনটি রিটে আলাদাভাবে রুল জারি করে আদালত।
ছাড়পত্র দিতে আবেদনের নিষ্পত্তি করতে পরিবেশ অধিদিপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন পরিবেশগত ছাড়পত্র দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে।
আইনজীবী মুনিরুজ্জামান বলেন, তাদের যুক্তি ছিল, ওই এলাকায় এর আগে আরও কয়েকটি কোম্পানি পরিবেশ ছাড়পত্র পেলেও তাদের আবেদনের নিষ্পত্তি না করে আটকে রাখা হয়েছে।
“তিনটি পৃথক রিট একীভূত করে রুল শুনানি হয়েছে। আদালত রুল নিষ্পত্তি করে একটি নির্দেশনা ও দুটি পর্যবেক্ষণসহ রায় দিয়েছে।”
সুন্দরবনের প্রতিবেশগত অবস্থা যাতে ঠিক থাকে তা খতিয়ে দেখতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়েছিলেন।
বিচারক তখন বলেন, “আজ আমাজান পুড়ছে। বিশ্বের মানুষ আমাজানকে রক্ষায় সচেষ্ট। আমাজান যেমন পৃথিবীর ফুসফুস, ঠিক তেমনি সুন্দরবনও বাংলাদেশের ফুসফুস। তাই সুন্দরবনকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।”