?> মানিকগঞ্জে ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চের প্রথম জনসভা « NCBD – National Committee of Bangladesh

Tuesday, September 24th, 2013

মানিকগঞ্জে ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চের প্রথম জনসভা

সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় কমিটি ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে লংমার্চ মানিকগঞ্জ জেলার  পৌছেছে। এখানে লংমার্চের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মালিকগঞ্জের শহীদ মিনারে জাতীয় কমিটির সুন্দরবন রক্ষার লংমার্চের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। লংমার্চ বহর জেলায় পৌছানোর পর এই জনসভায় জেলার হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয়। সেখানে সংস্কৃতি মঞ্চ, সমগীত, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, চারণসহ বিভিন্ন সাংকৃতিক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মানিকগঞ্জে জনসভা শুরু হয়। সভা পরিচালনা করেন মানিকগঞ্জ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আল জাহিদ।

সভার সুচনা বক্তা হসেবে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “সুন্দরবন ধ্বংস করে বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরীর পরিকল্পনা জাতীয় স্বার্থ বিরোধী।”

প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, “কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায় বলে সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ থেকে ২৫ কিমি এর মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়না। এজন্য গত কয়েকবছরে ভারতের কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়–তে তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসিকে বাংলাদেশে সুন্দরবনের যত কাছে পরিবেশ ধ্বংস কারী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে, তার নিজ দেশ ভারতে হলে সেখানকার আইন অনুযায়ী তা তারা করতে পারতো না!”

জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, “আমরা বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধীতা করছি না। আমরা শাশক সমাজের বিদ্যুত উৎপাদনের নামে লুটপাটের বিরোধীতা করছি। আমরা দেখেছি রেন্টাল কুইক রেন্টালের নামে এই সরকার কুইক লুটপাটের ব্যবস্থা করছে।”

জাতীয় কমিটির সদস্য সচীব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “সুন্দরবনের মাঝে যে শক্তি আছে তা কোন মানুষের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব না। সেই শক্তি করা সিডর-আইলার মত দূর্যোগ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে। বিদ্যুত উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, আমাদের সৌর শক্তি, আমাদের বায়ু শক্তি আমাদের বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা করে অনেক বেশি বিদ্যুত অনেক সস্তায় উৎপাদন অরা যায়। কিন্তু মাত্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যিত উতপাদনের কথা কলে সুন্দরবন ধ্বংসের আয়োজন করা হয়েছে।“

তিনি আর বলেন, “সুন্দরবনকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে, লক্ষ লক্ষ লোক তাতে যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারো সাধ্য নাই সেই জাগরণ কে মূল্য না দিয়ে সুন্দরবনে বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী করবে।”

মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট মক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহ আলম তার বক্তব্যে লংমার্চ কে মানিকগঞ্জ জেলায় স্বাগত জানান।

বাংলাদেশের ওয়ারকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হক তারা বলেন, “আমাদের দেশে বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে , তাই আমরা এই বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরীর সরকারী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারতাম। কিন্তু সুনরবন ধ্বংস করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাতে পারছিনা। কারণ সুন্দরবন আমাদের অস্তিত্বের অংশ। সব রকম ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে এইটি বাংলাদেশকে রক্ষা করে।”

ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কমরেড আব্দুস সাত্তার বলেন, “কয়লা দিয়ে ময়লা ঢাকা যায় না, আপনারা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে লোভ দেখিয়ে আপনাদের চার বছরের দুঃশাসন আড়াল করতে পারবেন না”

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল,  বাসদের কেন্দ্রিক কমিটির সদস্য জাহিদুল হক মিলু বলেন, “ভারত একটি সাম্রজ্যবাদী দেশ, ভারত তার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য এই অঞ্চলে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের মত একটি দূষন প্রবণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কারস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বাংলাদেশের মানূষ কোন কিছুর বিনিময়ে সুন্দরবন ধ্বংস হতে দিবে না। কারোন সুন্দরবন মায়ের মতন। মায়ের বুকে কয়লা জ্বালিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা যাবেনা।”

গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রিয় কমিটির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “এর মধ্যে উন্নয়ন নাই, এর মধ্যে যা আছে তা হল লুটপাট দুর্নীতি। তাই আমরা এই প্রকল্পকে না বলেছি। আপনারা এই লংমার্চকে ঠেকিয়ে দিতে চেয়েছেন কিন্তু লংমার্চ তার লক্ষ্যে অটল। সময় ঘনিয়ে আসছে, আপনাদের পায়ের তলায় মাটি নাই। লং মার্চ ঘোষণা দিচ্ছে, আপনাদের এই জমিদারী, আপনাদের তখতে তাজ উড়ে যাবে”

প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, “সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন সময় এরকম কয়লাবিদ্যুয় কেন্দ্র হয়েছে, কিনতি সেসবের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য ভাল নয়। একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে যখন কয়লা পোড়ানো হয় তখন বিষাক্ত বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক গ্যাস নিসৃত হয়। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব সুন্দরবনকে কেবল ধ্বংসই করবে না অর্থনৈতিক ভাবেও এই প্রকল্প আমাদের জন্য ক্ষতিকর।”

এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির নেতা, মানস নন্দী সহ আরো অনেকে।

লংমার্চকারীদের স্বাগত জানানোর জন্য মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি নানা রকম আয়োজন করে। সারাদিন বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান চলেছে। প্রতিবাদি গান, নাটক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে লংমার্চ বহর যাত্রা শুরু করে।  যাত্রা শুরুর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  বেলা দ্ধদ্ধটায় সভারে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম পথ সভা। সাভারে সংখিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানিকগঞ্জে রাত্রী যাপনের পর বুধবার লংমার্চ বহর ফরিদপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।

লংমার্চের কর্মসূচি :

২৪ সেপ্টেম্বর : যাত্রা শুরু সকাল ৯টা। প্রেসক্লাব, শাহবাগ, সাভার রানা প্লাজা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ধামরাই। জনসভা ও রাত্রিযাপন : মানিকগঞ্জ। ২৫ সেপ্টেম্বর : গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর। জনসভা ও রাত্রিযাপন : ফরিদপুর। ২৬ সেপ্টেম্বর : মধুখালি, কামারখালি, মাগুড়া, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ। জনসভা ও রাত্রিযাপন : যশোর। ২৭ সেপ্টেম্বর : ফুলতলা, দৌলতপুর, খালিশপুর। জনসভা ও রাত্রিযাপন : খুলনা। ২৮ সেপ্টেম্বর : বাগেরহাট, কাটাখালী, চুলকাঠি শেষে সমাপনী জনসভা ও সুন্দরবন ঘোষণা : দিগরাজ (সুন্দরবন)।  পথে পথে গান, নাটক, প্রদর্শনী।