Wednesday, November 13th, 2013
ঢাকায় জাতীয় কমিটির সমাবেশ ও বিক্ষোভ: সুন্দরবন ধ্বংসকারী ও অসম চুক্তির রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন- বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প পথ আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নেই। তাই সুন্দরবন ধ্বংস করে অসম চুক্তির রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখা যেকোন সচেতন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। জাতীয় কমিটি এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন- বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরে দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। লংমার্চের অংশগ্রহণ ও সমর্থনকারী কোটি জনতার মতামতের কোন মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। বরং দেশি-বিদেশি আমলা, ব্যবসায়ী, ও কমিশনভোগীদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এর পরিণাম মোটেই শুভ হবে না।
আজ ১৩ নভেম্বর বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ-র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশিদ ফিরোজ, রাগিব আহসান মুন্না, জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক, শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আব্দুস সাত্তার, সিদ্দিকুর রহমান, মোসাহিদ আহমেদ, শহিদুল ইসলাম সবুজ, আবু তাহের, সুবল সরকার, মহিনউদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই প্রকল্প শুধু সুন্দরবনকেই ধ্বংস করবে না, এটি জীবন-জীবিকা, পানি সম্পদ ও ঐ অঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যের যে মাত্রায় ক্ষতি করবে- তা পূরণীয় নয়। সুন্দরবন ধ্বংসের কারণে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, কয়লাভিত্তিক অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পে যেখানে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা খরচের কথা বলা হয়েছে, সেখানে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ ৮.৮৫ টাকা হবে বলে বলা হচ্ছে। ধারণা করা যায়, খরচ আরো বেশি হবে। এটি হলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বাবদ জনগণের ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষতির হিসাব তো আলাদা।
নেতৃবৃন্দ এই প্রকল্প বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তাসহ অন্যান্য অনেক বিষয়ে ভারতীয় কোম্পানির আধিপত্য থাকছে, তাই প্রয়োজনে এটি ভারতেই স্থাপন করা হোক। আমরা প্রয়োজন হলে আরেকটু বেশি মূল্য দিয়ে ঐ বিদ্যুৎ কিনবো, কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস হতে দিবো না।
বক্তারা বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রীয় বন্ধ বিদ্যুৎ প্লান্টসমূহ মেরামত-নবায়ন, গ্যাসভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
বক্তারা বলেন, ভারতের রাজস্থানে ৫ হাজার মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে খরচ পড়বে ৫.৩০ রুপি। ভারত পারলে, আমরা কেন তা পারবো না।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এখন দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। অথচ, ১০ হাজার মেগাওয়াটের গল্প শোনানো হচ্ছে। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ অনেক কম খরচেই উৎপাদন করা যেত। সেটি না করে জনগণের কাঁধে বোঝা চাপিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হয়েছে। অথচ এ ক’বছরে বিবিয়ানা ও ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। পরিকল্পিতভাবে গ্যাস উত্তোলন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সরবরাহ করা হয়নি। বন্ধ প্লান্টসমূহ মেরামত করা হয়নি।
বক্তারা বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ (সাত) দফা বাস্তবায়নের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।