?> তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, February 1st, 2007

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ায় আমরা তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ হতে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশা করি আপনি ও আপনার সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। অতি সম্প্রতি আপনার টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্য আমাদের আশান্বিত করেছে। তারই আলোকে আমরা অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তথা মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আপনার সদয় মনোযোগ আকর্ষণ করছি। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি যে, দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচার করে অবৈধ বিত্ত অর্জনের লক্ষ্যে এই সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেবার জন্যে একটি দুষ্টচক্র রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে দুর্নীতি ও অনিয়মের এক ভয়ঙ্কর তৎপরতাজাল তৈরি করেছে। সেসব যথাযথভাবে সনাক্ত করে বিধি মোতাবেক নিরসনের উদ্যোগ নিতে আপনারা সক্ষম হবেন বলে আমরা আশা করি।

পক্ষান্তরে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির গত নভেম্বর ১০, ২০০৬ এবং জানুয়ারি ১৬, ২০০৭ তারিখের সভায় গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী আপনার ও আপনার সরকারের অবগতি ও যথাযথ উদ্যোগের জন্য জাতীয় সম্পদ রক্ষার নিমিত্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার সদয় সমীপে উপস্থাপন করছি।

এক,

অতি মূল্যবান, সীমিত এবং দ্রুত নিঃশেষযোগ্য জ্বালানী সম্পদ তথা প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা, যার মালিক সংবিধানের ১৪৩ ধারা মতে জনগণ, সেই সম্পদ জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সম্পূর্ণ গোপনে বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী-আমলা-দালাল উপদেষ্টারা বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য একের পর এক অসম চুক্তি করেছে। এই সীমিত জ্বালানী সম্পদ দেশের উন্নয়নে ব্যবহার না করে, দেশকে বঞ্চিত রেখে, বিদেশে রপ্তানি করার চিন্তা জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়ন বিরোধী। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশী প্রকল্প কাফকোর মাধ্যমে ভর্তুকি দেয়া গ্যাস থেকে উৎপাদিত সার রপ্তানিতে বাংলাদেশের নীট ক্ষতির পরিমাণ ৩০১ মিলিয়ন ডলার। বিদেশী কোম্পানিগুলোর সাথে সম্পাদিত গ্যাস চুক্তিগুলো নানাভাবে আমাদের ক্ষতির কারণ হয়েছে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস রপ্তানির চেষ্টা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে জনগণ প্রতিহত করে। এখন চলছে বিদেশী বিনিয়োগের আড়ালে মূল্যবান কয়লা পাচার এবং গ্যাস ও কয়লা থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির।

দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যুৎ, সার, গ্যাস ও জ্বালানী তেল সঙ্কট জাতীয় জীবনকে ভীষণভাবে বিপর্যস্ত করে আসছে। এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে এসব জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি, লুণ্ঠন ও দুর্নীতির কারণে। উল্লেখ্য যে, বিগত ১১ বছরে বিদ্যুৎ ও সার তথা জ্বালানীর দাবীতে এবং উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উৎপাদন প্রস্তাব এবং রপ্তানি বন্ধের দাবিতে প্রাণ দিতে হয়েছে ৩৭ জন নিরীহ মানুষের। তন্মধ্যে ১৯৯৫ সালে ১৭ জন এবং ২০০৬ সালে ২০ জন।

দুই,

খনিজ সম্পদ বা তার থেকে উৎপাদিত পণ্য পাচার ও লুটপাটের যে অসম চুক্তি তা কোনদিনই আমাদের মতো দেশে সুফল বয়ে আনতে পারে না, বরং অশেষ দুর্দশার সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক উন্নতির পথ রুদ্ধ করে। বিশেষজ্ঞদের  ধারণা, বড় ধরণের  দুর্নীতি ছাড়া জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক এসব চুক্তি সম্পাদনের আর কোন কারণ নেই। বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেশের মানুষ  ইতোমধ্যেই প্রমাণ পেয়েছে যে, দেশের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তির সাথে সরকারের মন্ত্রী, আমলা, উপদেষ্টা ও দেশী-বিদেশী কোম্পানি এবং কনসালট্যান্টরা জড়িত।

তিন,

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, জাতীয় জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের মানুষ এই জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সম্পদ রক্ষার আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষ অতীতে ভারতে গ্যাস রপ্তানি প্রতিহত করেছে, দেশের জন্য ক্ষতিকর টাটার বিনিয়োগ প্রকল্প সরকারকে স্থগিত করতে বাধ্য করেছে, দেশের মানুষ-অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক এশিয়া এনার্জির চুক্তি বাতিল ও উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লাখনি না করার চুক্তি করতে বাধ্য করেছে। এসব দৃষ্টান্ত জ্বালানী খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আপনার সরকার সহায়তা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই সেই লক্ষ্যে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমরা আপনার নিকট নিম্নরূপ প্রস্তাব পেশ করছি :

সামগ্রিক বিষয়:

১. সামগ্রিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে গ্যাস ও কয়লা খাতে পুরোনো প্রকল্প নবায়ন বা নতুন কোন প্রকল্প চুক্তির চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

২. ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প বাতিলের জন্য বিগত সরকার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় কমিটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা নিছক আনুষ্ঠানিকতা বিধায় আপনার সরকারের পক্ষ থেকে সেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টেও এই প্রকল্প বাতিল করবার সুপারিশ করা হয়েছে।

৩. যেহেতু বিশেষজ্ঞ কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর অদৃশ্য চাপের মুখে বেআইনিভাবে বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই অস্থায়ীভাবে ১ বছরের জন্য ছাড়পত্র দেয় এবং উক্ত ছাড়পত্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, সেহেতু উক্ত ছাড়পত্রের মেয়াদ বৃদ্ধি করবার তৎপরতা বন্ধের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়ার জন্য এইসঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি।

৪. এই খাতে সকল দূর্নীতি উদ্ঘাটন ও নিম্নোক্ত বর্ণিত অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ দুর্নীতির সাথে যুক্ত ও হোতা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদে জরুরী ভিত্তিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

৫. গ্যাস সেক্টরে প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পি এস সি)-র আওতায় সম্পাদিত চুক্তিসমূহ অসম এবং অযৌক্তিক বলে জাতীয় কমিটি অভিহিত করেছে। উক্ত চুক্তিসমূহ একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কারিগরি কমিটি দ্বারা রিভিউ করে কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি।

৬. পত্রিকা সূত্রে আমরা অবহিত হয়েছি যে, আপনার সরকারের একজন অন্যতম সদস্য টাটার জনসংযোগের দায়িত্বে রয়েছে। বর্তমানে টাটার প্রস্তাব বিবেচনা সরকার স্থগিত রেখেছে। এমতাবস্থায় সাবেক উপদেষ্টা বিচারপতি ফজলুল হকের এশিয়া এনার্জির প্রস্তাবের ব্যাপারে তৎপরতা এবং পত্রিকার এ সংবাদ আমাদের শঙ্কিত না করে পারে না। তাই চলমান পরিস্থিতিতে কোনভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জনগণের বিরুদ্ধে এশিয়া এনার্জি ও টাটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত না করা যায় সেজন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ ও সক্রিয় ভূমিকা কামনা করছি।

দায়ী দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের প্রসঙ্গ

জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদনে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে জাতীয় কমিটি যাদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সারসংক্ষেপ নিচে পেশ করা হল :

(ক) সাবেক জ্বালানী সচিব জনাব তৌফিক এলাহীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে অন্যতম:

১. মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ডের বিস্ফোরণ ঘটনা তদন্তে অক্সিডেন্টাল দায়ী হলেও সে তদন্ত প্রতিবেদন গোপন রেখে তিনি অক্সিডেন্টালকে বিচারের উর্ধ্বে রাখেন এবং দেশ ত্যাগে সহায়তা করেন। এমনকি তিনি এক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ লঙ্ঘন করতেও দ্বিধা করেননি।

২. নাইকো পিএসসি’র বিডিং এ অযোগ্য ঘোষিত হলেও টেংরাটিলাসহ ৩টি গ্যাসফিল্ড নাইকোর প্রস্তাব মতে একতরফাভাবে প্রান্তিক/পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড হিসেবে দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে নাইকোর হাতে তুলে দেবার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিনি নাইকোকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে সহায়তা করেন।

(খ) সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জনাব মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের অন্যতম:

১. তিনি স্ব-উদ্যোগে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নাইকোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নাইকোর হাতে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে টেংরাটিলা ও ফেনী গ্যাসফিল্ড দুইটি তুলে দিয়ে নাইকোকে আর্থিকভাবে লাভবান করেন।

২. নাইকো’র নিকট হতে ১টি মূল্যবান গাড়ী উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেন।

৩. টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণের জন্য দায়ী হলেও তিনি সে দায় থেকে নাইকোকে আড়াল করেন।

(গ) সাবেক জ্বালানী উপদেষ্টা জনাব মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে অন্যতম:

১. সরকারের একাধিক তদন্তে নাইকো টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণের জন্য দায়ী হলেও সেসব তদন্ত রিপোর্ট স্বীয় বিবেচনায় তিনি গোপন করেন। নাইকো গ্যাস উৎপাদনে অযোগ্য, অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ হওয়ার কারণে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে বিস্ফোরণ ঘটে। এ তথ্য তদন্তে উদ্ঘাটিত হলেও  তিনি তা গোপন করে নাইকোকে বিচার ও জবাবদিহিতা থেকে আড়াল করেছেন। তাছাড়াও নাইকো’র সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বেআইনি হলেও তিনি তা বাতিল না করার জন্য বিভিন্নভাবে তৎপর থেকেছেন।

২. টাটা’র কয়লা এবং গ্যাস ও কয়লাজাত পণ্য রপ্তানিমুখী প্রকল্পের ১ম প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নে নাকচ হয়। তিনি স্বীয় বিবেচনায় ২য় প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে তথাকথিত সচিব কমিটির মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণ করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। সরকার গণপ্রতিরোধের মুখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকে। তিনি টাটার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন।

৩. তিনি এশিয়া এনার্জির সাথে সম্পাদিত ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প চুক্তি বে-আইনী ও দেশের স্বার্থবিরোধী বলে অভিহিত করলেও তা বাতিল করা যাবে না বলে প্রচারণা চালান। তাছাড়া এশিয়া এনার্জির সাথে চুক্তি বাতিল এবং সারাদেশে কোথাও উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা খনি হবে না এই মর্মে জোট সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি জোট সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা হয়েও তিনি বিরোধীতা করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে উক্ত চুক্তিমতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ আসলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন।

৪. তাছাড়াও ফুলবাড়ী কয়লা খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, এশিয়া এনার্জির চুক্তি সম্পূর্ণ বেআইনী এবং উক্ত খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব বিধিমালা ও পরিবেশ সম্মত নয়। তিনি উক্ত মুল্যায়ন প্রতিবেদন উপেক্ষা করেন।

৫. উক্ত খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব মতে খনি উন্নয়নে প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। আইন অনুযায়ী উক্ত প্রস্তাব দাখিলের সময় ৩% ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তিনি এই ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই উক্ত খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব গ্রহণ করে তা প্রক্রিয়াকরণ করেছেন।

৬. সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন আড়ালে রেখে এশিয়া এনার্জির উক্ত খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে প্রকাশ, সাবেক আইন উপদেষ্টা বিচারপতি ফজলুল হক উক্ত প্রস্তাব অনুমোদনের ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন।

(ঘ) সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ ও সাবেক বিদ্যুৎ সচিব আ ন হ আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে অন্যতমঃ

সকল প্রকার প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আইন অনুযায়ী পাওয়ার সেলের ভূমিকা মুখ্য হলেও জ্বালানী মন্ত্রণালয় থেকে তাঁরা উভয়েই সে কর্তৃত্ব গ্রহণ করে দুর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে নিয়োজিত ছিলেন। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে সরকারি অর্থ তসরুপের সুযোগ সৃষ্টি করেন। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ্যÑ

১. ভাড়াভিত্তিক ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়াকরণ;

২. মেঘনা ঘাটে ৪৫০ মে.ও. ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়াকরণ;

৩. খুলনা (গোয়ালপাড়া) ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বরাদ্দ প্রক্রিয়াকরণ;

৪. কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বরাদ্দ প্রক্রিয়াকরণ;

৫. টিইবি কর্তৃক ২শ কোটি টাকার দুর্নীতি;

৬. নিয়ম বহির্ভূতভাবে বেসরকারি খাতে ১০-৩০ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়াকরণ এবং

৭. অনুমোদিত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দলীয় পরিচয়ে প্রকৌশলী পদে নিয়োগ।

উপরে বর্ণিত ব্যক্তিবর্গকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ তসরুপ এবং দেশের জ্বালানী সম্পদ জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত ছিলেন বলে জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত করা হল।

আমরা আশা করি আপনার সরকার দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে দেশের অমূল্য জ্বালানী সম্পদ রক্ষা ও তা দেশের স্বার্থে ব্যবহারের বাধা দূর করবে, জ্বালানী সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের তৎপরতা বিষয়ে সতর্ক নজর রাখবে এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোন পদক্ষেপ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা আরও আশা করি এই সরকার তার সীমিত সময়কালেই এ ব্যাপারে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে যা প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনয়নে সহায়তা করবে।

[বি:দ্র: সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে এর অনুলিপি প্রেরিত হয়]