?> বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি বরাবর চিঠি « NCBD – National Committee of Bangladesh

Tuesday, October 13th, 2009

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি বরাবর চিঠি

১৩ অক্টোবর ২০০৯

মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুঁইয়া

সভাপতি

বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

প্রিয় মহোদয়,

আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। গত ১২.১০.০৯ ইং তারিখে (স্মারক নং:আসপত্র নং-২০০৯/০২) দেয়া চিঠির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ১২.১০.০৯ তারিখে প্রেরিত আমাদের চিঠিতে আলোচনা অর্থবহ করার জন্য আমরা কয়েকটি প্রস্তাব করেছিলাম। যার মধ্যে দু’টো বিষয়ে আপনি জ্বালানী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির অপারগতার কথা উল্লেখ করেছেন। চুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করা সংসদীয় কমিটির এখতিয়ার বহির্ভূত বলে আপনি যে কথাটি উল্লেখ করেছেন সেটি জেনে আমরা বিস্মিত নই। কিন্তু আপনি সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে জ্বালানী মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলাকে চুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য পরামর্শ/নির্দেশ প্রদান করতে পারেন, এই এখতিয়ার আপনার আছে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বসার আগে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন বলে আমরা আশা করি।

দ্বিতীয়ত: আপনি বলেছেন, সংসদীয় কমিটিতে বসে যে কোন আলোচনা উন্মুক্ত রাখা বা সরাসরি স¤প্রচার সংসদীয় কার্যপ্রণালীতে উল্লেখ নেই। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ সুতরাং জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখার জন্য সরাসরি স¤প্রচারে কোন বাধা নেই বলে আমরা মনে করি। সুতরাং মতবিনিময় সভাটি সরাসরি স¤প্রচার করার প্রস্তাবটি আপনারা গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

এছাড়া আমাদের প্রস্তাবিত অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য আপনারা আগ্রহী জেনে পুনরায় আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা মনে করি আলোচনা অর্থবহ করবার জন্য যেসব প্রস্তাব আমাদের তরফ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে তা আপনি গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে আপনার ইতিবাচক উত্তর একান্তভাবে কামনা করছি।

১. যেহেতু বাংলাদেশে শিল্পায়নের জন্য আমাদের গ্যাস প্রয়োজন এবং জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগামী ৫০ বছরের মজুদ রাখার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সে কারণে মডেল পিএসসি ২০০৮ অনুযায়ী সমুদ্রবক্ষের গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রেখে পেট্রোবাংলা যে চুক্তি করতে যাচ্ছে আমরা তার বিরোধী।

২. মডেল পিএসসি ২০০৮ জনগণের মালিকানা, জাতীয় প্রয়োজন এবং ভবিষ্যৎ জ্বালানী নিরাপত্তার কোন গুরুত্ব দেয়নি। এবং এই মডেল পিএসসি বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে করা হয়েছে। সেখানে জাতীয়ভাবে আলোচনা করে করা হয়নি। আইওসি-র প্রণয়ন করা এই চুক্তিতে অস্বচ্ছতা, স্ববিরোধীতা আছে।

৩. সুতরাং জ্বালানী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির এখন প্রধান কাজ হলো চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য জ্বালানী মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ/পরামর্শ প্রদান করা।

৪. চুক্তিতে উল্লেখিত যে সব ধারার কারণে আমরা তার বিরোধী সেগুলো হলো:Ñ

(i) ১৫.৪ – স্বীকৃত রিজার্ভার ম্যানেজমেন্ট প্র্যাক্টিস অনুসারে কন্ট্রাক্টর প্রতি বছর প্রতি গ্যাস ক্ষেত্রের প্রমাণিত মজুদের শতকরা ৭.৫ ভাগ গ্যাস উত্তোলন করতে পারবে। সোসাইটি অব পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার্স এবং ওয়ার্ল্ড পেট্রোলিয়াম কংগ্রেস ১৯৭৭ এবং এর পরবর্তীতে সংশোধিত সংজ্ঞা অনুসারে “প্রমাণিত মজুদ” সংজ্ঞায়িত হবে (বি.দ্র. অফসোর ব্লকের ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলার সম্মতিক্রমে শতকরা ৭.৫ ভাগের চেয়েও বেশী গ্যাস উত্তোলন করা যাবে)।

(ii) ১৫.৫.১ – ১৫.৫.৪, ১৫.৫.৫, ১৫.৬ ধারায় বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে কন্ট্রাক্টর ১৫.৫.২ ধারায় বর্ণিত হিসাব অনুসারে কন্ট্রাক্টর চুক্তিকৃত এলাকায় উৎপাদিত যে কোন পরিমাণ মার্কেটেবল গ্যাস এলএনজি হিসেবে রপ্তানির অধিকার পাবে। রপ্তানিতব্য প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে:

(ক) কন্ট্রাক্টর-এর কস্টরিকভারি গ্যাস,

(খ) কন্ট্রাক্টর-এর প্রফিট গ্যাস,

(গ) পেট্রোবাংলার প্রফিট গ্যাস অথবা যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে ক্ষেত্রে ১৫.৫.৪ ধারায় বর্ণিত শর্তে  প্রাপ্ত পেট্রোবাংলার সীমিত প্রফিট গ্যাস।

(iii)  ১৫.৫.৪ – যেক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা স্থানীয় চাহিদা মিটাতে প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা (পাইপলাইন) স্থাপন করতে পারবে সেক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা তার অংশের প্রফিট গ্যাস রাখার অধিকার প্রাপ্ত হবে, তা কোন মতেই মার্কেটেবল গ্যাসের ২০% এর বেশী হবে না। প্রতিমাসে পেট্রোবাংলা যে পরিমাণ গ্যাস স্থানীয় ব্যবহারের জন্য রাখতে চায় কন্ট্রাক্টরকে এলএনজি রপ্তানি চুক্তির আগে জানাতে হবে, এবং প্রতিমাসে সংরক্ষিত গ্যাসের পরিমাণ এলএনজি রপ্তানি চুক্তির পূর্ণ মেয়াদকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পেট্রোবাংলার অনুরোধে ১১তম বছরের শুরু থেকে উপরে বর্ণিত সংরক্ষিত গ্যাসের পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ ভাগ পর্যন্ত করা যাবে।

(iv) ১৫.৫.৫ – এলএনজি রপ্তানি মূল্য বা রপ্তানি মূল্যের ফর্মূলা পেট্রোবাংলা কর্তৃক অনুমোদনের আগে কন্ট্রাক্টর এলএনজি রপ্তানির কোন চুক্তি করবে না। কন্ট্রাক্টর যদি দেখাতে পারে যে, এলএনজি রপ্তানির মূল্য বা মূল্য নির্ধারণী ফর্মূলা ন্যায্য, তাহলে পেট্রোবাংলা তার অনুমোদন আটকে রাখবে না। রপ্তানিতব্য এলএনজি পরিমাণ, যে ভৌগোলিক এলাকায় রপ্তানি করা হবে তার নাম ও প্রকৃতি এবং রপ্তানির স্থান থেকে বাজার পর্যন্ত পরিবহন ব্যয় পেট্রোবাংলার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

(v) ১৫.৬ (এ) – কন্ট্রাক্টর তার প্রাপ্য কস্টরিকোভারি গ্যাস এবং প্রফিট গ্যাস বিক্রয়ের জন্য পেট্রোবাংলাকে প্রস্তাব দেবে। পেট্রোবাংলা সে প্রস্তাব গ্রহণ করবে অথবা তার এফিলিয়েটেড কোম্পানি উক্ত গ্যস ক্রয় করবে। চুক্তিভূক্ত এলাকার বাইরেও যদি অতিরিক্ত গ্যাস মজুদ আবিষ্কৃত হয় সেক্ষেত্রেও উৎপাদন এলাকা থেকে গ্যাস সরবরাহের বাধ্যবাধকতা হ্রাস পাবে না। ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অনুমোদনের সময় গ্যাস ক্রয় এবং বিক্রয়ের জন্য চুক্তির শর্তসমূহ ১৫.৭ ধারায় বর্ণিত আর্থিক হিসাব অনুসারে প্রণয়ন করতে হবে।

১৫.৬ (বি) – ৮.৫ ধারা অনুসারে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিলের ৬ মাসের মধ্যে পেট্রোবাংলা যদি লিখিতভাবে গ্যাস বাজারজাত করার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান না করে সে ক্ষেত্রে কন্ট্রাক্টর ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশের বাজার খুঁজে নিতে পারবে। পেট্রোবাংলা এক্ষেত্রে কন্ট্রাক্টরকে গ্যাস বিক্রিতে সহযোগিতা করবে।

১৫.৬ (সি) – কন্ট্রাক্টর তার প্রাপ্য অংশের গ্যাস প্রথমত: পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রির প্রস্তাব দেবে পেট্রোবাংলা যদি ক্রয় করতে অস্বীকার করে সে ক্ষেত্রে কন্ট্রাক্টর সে গ্যাস দেশের অভ্যন্তরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে।

উপরোল্লেখিত ধারাগুলো পর্যালোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে এই চুক্তিতে কোনভাবেই দেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। সুতরাং আমরা দাবী করছি-

১. মডেল পিএসসি ২০০৮-এর চুক্তি প্রক্রিয়া বন্ধ; বাতিল করতে হবে।

২. নতুন নীতিমালার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের মডেল পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে পিএসসি প্রণয়ন করতে হবে।

৩. শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করবার জন্য তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের যে কোন উদ্যোগ জাতীয় সংস্থার কর্তৃত্বে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৪. জাতীয় সক্ষমতার বিকাশে বিভিন্ন মেয়াদে জরুরী ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

৫. ৫০ বছরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য গ্যাস, কয়লা রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে হবে।

৬. এই কারণে একইসঙ্গে ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করে শতভাগ দেশীয় মালিকানায় পরিবেশ অনুকূল পদ্ধতি দিয়ে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।