Wednesday, April 13th, 2016
সরেজমিনে গন্ডামারা, বাঁশখালী। ৪টি মর্মান্তিক মৃত্যু
৫ এপ্রিল জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাঁশখালির আহতদের দেখতে যান। প্রথম কিছুক্ষন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । কারন যেসব ওয়ার্ডে আহত লোকজন আছে বলে জানা গেছে, বাস্তবে গিয়ে দেখা গেল সেখানে কেউ নেই। অনেক্ষন খোজার পর টের পাওয়া গেল যে গ্রেফতারের ভয়ে লোকজন পরিচয় দিতে চাচ্ছেনা । ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৬০০০ জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে বাঁশখালি হত্যাকাণ্ডের আহত এবং নিহতদের আত্মীয় পরিজনের নামেই মামলা দেয়া হয়েছে। এখন যাকে যেখানে পাওয়া যাচ্ছে তাকেই গ্রেফতারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেদিনই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় অনেকে গ্রেফতার হন। সেকারনে জাতীয় কমিটিকে দেখে প্রথমে কোন পক্ষের লোক তা নিশ্চিত হতে না পেরে হাসপাতালের আহত এবং তাদের স্বজনরাই পরিচয় গোপন করে। ২৬, ২৭, ২৮, ১৯, ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের নার্স রুমে কথা বলে কিছু রোগীর নাম ঠিকানা পাওয়া যায়।। বলা হল যাদের হাতে পায়ে মাথায় নতুন ব্যান্ডেজ, হাতে হ্যান্ড কাফ আর মাথার দুই দিকে দুইজন করে পুলিশ দেখবেন ওরাই বাঁশখালির আহত রোগী। সেইভাবে নতুনভাবে অনুসন্ধান করা হলে ৫ জনকে পাওয়া গেল। নুরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মুজিব, আউয়াল এবং আব্দুল আলিম। কারো পায়ে, পিঠে, গলায়, পেটে গুলি লেগেছে। কারো অপারেশন করে গুলি বের করা হয়েছে, কারো এখনো গুলি বের করা হয়নি। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। তারা এত অসুস্থ যে তাদের পক্ষে নিজের পায়ে ২ কদম হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। অথচ এদের একহাতে হাত কড়া, কোমরে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে হাসপাতালের বিছানায় ফেলে রাখা হয়েছে। আর শিয়রে দুইজন পুলিশ। মুজিব নামের একজনের গলা দিয়ে গুলি ঢুকে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এখনও রক্তক্ষরণ চলছে। সাথে তার বড় ভাই, কিছুক্ষণ পর পর তুলা দিয়ে মুখের রক্ত মুছে দিচ্ছিল । আধা শোয়া অবস্থা থেকেই হাত উঁচু করে ইশারায় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন যে তিনি আমাদের চিনতে পেরেছেন।
গত ২৫ মার্চ ২০১৬ এস আলম গ্রুপের কয়েকটি গাড়ি পুড়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীর উপর পুলিশের লাঠি চার্জ এবং হালকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাঁশখালির অধিবাসী আমানুল ইসলাম (প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, যুব ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম), এডভোকেট ইকবাল, আবু বকর, অমৃত কারন (সংগঠক বাসদ – মার্কসবাদী) সহ গন্ডামারা ইউনিয়নের বেশ কিছু ছাত্র শিক্ষকের আহ্বানে গন্ডামারা জাতীয় কমিটির প্রতিনিধি দল গন্ডামারা ইউনিয়নে যায়। বাঁশখালিতে ঢুকার পর সেদিন যে পরিস্থিতি দেখা গেছে তা এক কথায় আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গিরনের আগের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের প্রথমে তারা চিনতে না পেরে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। কয়েকজন বলতে থাকেন আপনারা এস আলম গ্রুপের লোক হলে আজকে এখান থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের নিশ্চিত করার জন্য বলা হল আপনাদের মত আমরাও কয়লা বিদ্যুতের বিপক্ষে। বলল (পরীক্ষা করে দেখছিলেন) আচ্ছা বলেনতো কেন আপনারা কয়লা বিদ্যুতের বিপক্ষে? উত্তরে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হল – কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে জমি নষ্ট হবে মাটি নষ্ট হবে পানি দুষিত হবে, মানুষের ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি সহ নানান অসুখ বিসুখ বাড়বে- এরকম হাজারো ঘটনা ঘটবে। এই দফায় চায়ের দোকানে প্রতিনিধি দলকে ঘিরে ধরা লোকজনের মুখের পেশি আস্তে আস্তে শিথিল হওয়া শুরু করল। একজন বলল আপনারা আমাদের পক্ষে কথা বলসেন, এই জন্য আপনাদের আমরা চা খাওয়াব। নাইলে আপনার আজকে খবর নিয়া ছাড়তাম। বাঁশখালি মানুষের এরকম তেজ সেদিন উপস্থিত সবাইকেই বিস্মিত করেছিল।
গত দুই মাস ধরেই চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা ও অন্যান্য সুত্রে শোনা যাচ্ছিল যে এস আলম গ্রুপ চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলার ৯ নম্বর গন্ডামারা ইউনিয়নে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্থানীয় জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং কোথাও কোথাও জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে জমি দখল করছে। বাঁশখালি এবং গন্ডামারা এলাকার কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট, পত্রিকা সহ নানান উৎস থেকে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিকর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারেন। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সুন্দরবন নিয়ে জাতীয় কমিটির লং মার্চ এবং আরো অনেক ধরনের পরিবেশগত প্রচার প্রচারনা থেকে তারা নিশ্চিত হয় এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের নিঃস্ব করে দিবে। পরিবেশ এবং কয়লা বিদ্যুৎ নিয়ে তাদের সাধারণ জ্ঞান এবং সচেতনতার স্তর অবাক করার মত। ফলে বাঁশখালি গন্ডামারার অধিবাসীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই ১/ জীবিকা হারনোর আশঙ্কায় ২/ ভিটা-মাটি হারানোর আশঙ্কায় ৩/ পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। প্রথম দিকে এই বিরোধিতা চায়ের দোকানগুলোতে সিমাবদ্ধ ছিল। ক্রমান্বয়ে তা সারা গন্ডামারা ইউনিয়ন এবং পুরো বাঁশখালিতে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গন্ডামারা ইউনিয়নে ‘ভিটা মাটি রক্ষার আন্দোলন’ নামে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের গনজমায়েত এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেসব সমাবেশে ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল বলে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়। মার্চ মাস পর্যন্ত কিছুকিছু সমাবেশে পুলিশের গুলি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং হতাহতের খবর চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হতে থাকে।
এস আলম গ্রুপের আয়োজনে অন্য এক সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন ‘কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে তেমন কোন পরিবেশ দূষণ হবেনা এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে’। বক্তৃতায় তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন যে কোন স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করতে গেলে যদি নির্মাণস্থলে একটি দুটি আম গাছ পড়ে, সেই আম গাছটিকে কেটে ফেলতে হয়। এরকম ঘটনায় তেমন কোন পরিবেশ দূষণ হবেনা এবং ৮০% লাভের জন্য ২০% ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। এ ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করায় এলাকাবাসী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায়।
নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাইনবোর্ড, ছবিঃ মিজানুর রহমান
২৫ মার্চ গন্ডামারা ইউনিয়নে ঢুকলে দেখা যায় চারপাশের প্রায় সকল জমিতে এস আলম গ্রুপ তাদের দখল চিহ্নিত করে খুটি গেঁড়ে রেখেছে। স্থানীয় লোকজনের মতে অল্প কিছু জমি এস আলম গ্রুপ ক্রয় করেছে। ক্রয় প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজনকে তারা বলেছিলেন এখানে রফতানি যোগ্য তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা এবং সেসব রফতানি করার জন্য সমুদ্র বন্দর স্থাপন করা হবে। যার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এলাকার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের আশায় স্থানীয় লোকজন কিছু জমি এস আলম গ্রুপের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই ‘এস এস পাওয়ার ১ লিমিটেড এবং এস এস পাওয়ার ২ লিমিটেড’ নামের সাইনবোর্ড দিয়ে এস আলম গ্রুপ নির্মাণ কাজ শুরু করলে এলাকাবাসী বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে তাদের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে । বিভিন্ন সুত্র থেকে জানতে পারেন যে গোপনে এস আলম গ্রুপ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আরিফুল্লার সাহায্যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জোরপূর্বক জমি দখল এবং সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চট্টগ্রাম শহরের মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ সহ অন্যান্য কলেজে অধ্যায়ন এবং কর্মরত গন্ডামারার ছাত্র শিক্ষকরা পত্র পত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারেন যে এস আলম গ্রুপের করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনে তারা ক্রমান্বয়ে ভূমিহীন এবং এখানে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ হবে। এসব জানতে পেরে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তারা এস আলম গ্রুপের কাছে আর জমি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ইতিমধ্যে যেসব জমি এস আলম গ্রুপের হাতে গিয়েছে সেসব ফেরত চায়। প্রতিক্রিয়ায় এস আলম গ্রুপের নাসির গং ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বেশ কিছু জমি জোরপূর্বক খুঁটি গেঁড়ে দখল করে। আশেপাশের লোকজনকে হুমকি দেয় যে তাদেরকেও ক্রমান্বয়ে এলাকা ছাড়া করা হবে।
এস আলম গ্রুপের এসব কাজে সহায়তা করে জামাতে ইসলামি থেকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আরিফুল্লা এবং স্থানীয় ভুমি প্রশাসনের দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীগন। পরবর্তীতে ভুমি প্রশাসনে গন্ডামারার জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি প্রক্রিয়ায় জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায় যে গত ২/১১/২০১৫ ইং তারিখে সার্ভেয়ার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং কানুনগো টিনোদ বিহারি চাকমা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য এস আলম গ্রুপের পক্ষে নতুন করে ৩১০০ একর জমি ক্রয়ের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। যেখানে ইতিমধ্যে ৬৬০ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং এর বাইরে আরো ৭০০ একর সরকারী খাস জমি এস আলম গ্রুপের নামে বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ জানান।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় এস আলম গ্রুপ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বরগনা, পশ্চিম বরগনা এবং গন্ডামারা এই তিনটি মৌজায় ৪৪০০ একর জমি নেয়ার চেষ্টা করছে। এই পুরো এলাকায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশী মানুষের বাস। সরকারী ভোটার তালিকার লিপিবদ্ধ ভোটারের সংখ্যা ২৮ হাজারের বেশী। যেখানে ৭ হাজারের বেশী পরিবারের বাস করে সেখানে কানুনগো টিনোদ বিহারি চাকমা মাত্র ১৫০ টি পরিবার দেখিয়ে এই ১৫০ পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়ে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ভুমি ক্রয়, অধিগ্রহনের এবং বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেন। এই তিনটি মৌজায় আরও আছে প্রায় ৭০টি মসজিদ, মক্তব, বেশকিছু কবরস্থান এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান, ১টি কারিগরি স্কুল, ১টি হাই স্কুল, ৫টি কওমি মাদ্রাসা, ২টি আলিয়া মাদাসা, ৮টি প্রাইমারী স্কুল, ৫টি বাজার, ২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১টি জেটি। একইসাথে যা প্রায় ৫০০ একর জুড়ে লবনের ঘের, ১৮০০ একর ধান চাষের জমি এবং বর্ষা মৌসুমে ৫০০ একর জমির চিংড়ি ঘের এবং প্রায় ১৫০০ একর ম্যানগ্রোভ বনভুমি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
গন্ডামারা এলাকায় গিয়ে প্রথমেই দেখা যায় প্রায় ১৩টি সিএনজিতে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ করতে আসা শ্রমিকরা তাদের কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য মাল পত্র নিয়ে সাইট থেকে চলে যাচ্ছেন। কিছুটা দূরে এস আলম গ্রুপের একদল লোকের সাথে দেখা হয়। সেখানে এস আলম গ্রুপের মামুন সহ আরো বেশ কয়েকজন স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। তারা অনুসন্ধানকারীদের পরিচয় জিজ্ঞেস করেন এবং একপর্যায়ে বলেন ‘কোন পরিবেশ দূষণ হবেনা’, ‘এসব কথার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই’। অনুসন্ধানকারীদের জানান যে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছেন এবং দেখেছেন যে সেসব জায়গায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে সেখানে কোন দূষণ নাই। কথা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কোন কোন দেশে গিয়েছেন। জবাবে জানান মালি, সেনেগাল এবং কঙ্গো সহ কয়েকটি দেশে তিনি সফর করেন। উল্লেখ্য আফ্রিকার দরিদ্রতম এসব অধিকাংশ দেশেই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই। যেসব দেশে আছে সেখানে আবার সবার ঢুকার অনুমতি নেই। এ প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে ‘আপনি কি কোন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে পরিদর্শন করেছেন?’ জবাবে তিনি ‘না’ বলেন। তাহলে আপনি যেসব কথা বলছেন যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবেনা এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে তার ভিত্তি কি? জবাব না দিয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন যে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে যে পরিবেশের ক্ষতি হবে তার ভিত্তি কি? এর উত্তরে তাকে বলা হল “আপনার মোবাইল সহ এখানে সবার মোবাইলে ইন্টারনেট আছে। একটু কস্ট করে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাল মন্দ কি? তথ্য এখন সবার কাছে আছে।”
পরবর্তীতে কয়লা বিদ্যুতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ছাত্র সাদ্দাম, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, আব্দুস সালেক সহ স্থানীয় শিক্ষক মোহাম্মদ জালাল চৌধুরী, কফিল উদ্দিন আহাম্মদ, এডভোকেট ইকবাল এবং আমানুল ইসলাম সহ সাধারণ লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, গন্ডামারা ইউনিয়নের বেশীরভাগ শ্রমজীবী। কিছু জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। তবে বেশিরভাগের আয় বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি আরোহণ এবং বছরের বাকি সময়ে লবন চাষ। এখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে প্রথমত তারা ভূমিহীন হবেন, দ্বিতীয়ত তারা তাদের কর্মসংস্থান হারাবেন। তাদের পক্ষে বাপ দাদার ভিটা মাটি কবর ছেড়ে উপজেলা শহরে কিংবা আরো দূরে গিয়ে বাড়ি, জমি ক্রয় করা সম্ভব নয়। কয়েকদিন আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন যে এস আলম গ্রুপ একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উঠানো শুরু করেছে। যার প্রভাবে ইতিমধ্যে সারা গন্ডামারা ইউনিয়নে টিউবওয়েলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যদি এস আলম গ্রুপ এখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে এবং প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার পানি উঠায় তাহলে এলাকাবাসীর বেঁচে থাকাটাই কঠিন হবে। সেকারনে প্রান থাকতে তারা এস আলম গ্রুপকে এখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে দিবেনা। জামাত থেকে নির্বাচিত ইউনিউয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আরিফুল্লাহ, কানুনগো টিনোদ বিহারি চাকমা, এস আলম গ্রুপের স্থানীয় প্রতিনিধি নাসির, মামুনদের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে এলাকার লোকজন ক্রমেই আরো বেশী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। এস আলম গ্রুপের কাউকে এমনকি কোন কিছুকেই এলাকার মানুষ সহ্য করতে পারছিলেন না।
হাজি মোহাম্মদ ইউনুস, রশিদ আহাম্মদ, মুন্সি মিয়া, হাসন আহাম্মদ, নুর আশা, মোহাম্মদ আজিজ এবং অন্যান্য গ্রামবাসীর ভাষ্যঃ ১ এপ্রিল ২০১৬, শুক্রবার এস আলম গ্রুপের মালিক মাসুদ সাহেবের বড় ভাই ১৫ থেকে ২০ টি মোটর সাইকেল, ১০ থেকে ১৫ টি জিপ মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের প্রকল্প এলাকায় এসেছিলেন। সেদিন গ্রামবাসী মাসুদ সাহেবের বড় ভাইকে তার গাড়ি নিয়ে স্ব-সম্মানে চলে যেতে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সাথে আসা মোটর সাইকেল আরোহীরা মূলত এস আলম গ্রুপের গুন্ডা-বাহিনী ছিল। তারা এলাকার সাধারণ ক্ষিপ্ত মানুষের ভেতর ঢুকে পড়ে লোকজনকে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে আরও উত্তেজিত করে তোলে এবং একপর্যায়ে নিজেরাই কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। সেদিন রাতে এস আলম গ্রুপের চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহাদুর আলম হিরণ বাদী হয়ে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরের শনিবার এবং রবিবার দুই দিনে ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রামবাসী বুঝতে পারেন এটি ছিল গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষকে থানা, পুলিশ, জেল, জরিমানায় হয়রানি করার জন্য একটি পরিকল্পিত ঘটনা। তারা ইতিমধ্যেই ভিটা, মাট, কবরস্থান রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে বিষয়টি জানান। লিয়াকত আলী এই অন্যায় ও পরিকল্পিত ভাংচুর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারের এর প্রতিবাদে ৪ এপ্রিল বিকালে সমাবেশ আহ্বান করেন। সেই সমাবেশস্থলে যখন গ্রামবাসী জড় হচ্ছিল তখন ১৫/২০ টি মোটরসাইকেলে চড়ে এস আলম গ্রুপের গুন্ডারা এসে বলতে থাকে যে এখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তার কিছুক্ষন পরই পুলিশ এসে জড় হওয়া মানুষের উপর গুলি চালায়। এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষ বিপক্ষের অর্থাৎ দুই পক্ষের গ্রামবাসী ছিলনা। ছিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধের গ্রামবাসী একপক্ষ আর পুলিশ, এস আলম গুন্ডারা মিলে এক পক্ষ। পুলিশের গাড়িবহরে কেউ বাধা দেয়নি। বরং পুলিশ এসে প্রথমে সমাবেশ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ক্রমাগত টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে, তার পর ২শত রাউন্ডের মত ফাঁকা গুলি চালায়, শেষে মানুষ লক্ষ করে গুলি চালায়।
৬ এপ্রিল, ২০১৬ চট্টগ্রাম শহর থেকে জাতীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের সাথে গনমুক্তি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ নাসু, সিপিবির জেলা সম্পাদকমন্ডলির সদস্য অশোক সাহা, গনসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্য সচিব অপু দাশ গুপ্ত, বাসদ নেতা আল কাদরি জয়, সিপিবির জেলা সম্পাদকমন্ডলির সদস্য অমৃত বড়ুয়া, মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশানের আহ্বায়ক ছিদ্দিকুল ইসলাম, গবেষক লেখক প্রকৌশলী মাহবুব সুমন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনের শিক্ষক নৃবিজ্ঞানী নাসরিন সিরাজ, যুব নেতা আনামুল ইসলাম, বাসদ (মার্কসবাদী) বাঁশখালীর সংগঠক অমৃত কারন, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি শিমুল কান্তি বৈষ্ণব, ছাত্র ফেডারেশন চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি ফরহাদ জামান জনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতিম নন্দি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আরিফ মইনুদ্দিন সহ আমরা আবার গন্ডামারা ইউনিয়নে যাই।
ছবিঃ মাহবুব সুমন
ঐতিহাসিক জলকদর খালের উপর নির্মিত ব্রিজ পার হতেই দূর থেকে দেখা যায় গন্ডামারার অগুনিত মানুষ উৎসুক হয়ে দূর থেকে তাকিয়ে আছে। উদ্দেশ্য তাদের আন্দোলনের পক্ষের লোক হলে ঢুকতে দিবে। কাছে গিয়ে পরিচয় দিলাম, বললাম আমরা আপনাদের দেখতে এসেছি। আমাদের ১২/১৩ জনকে তারা সাদরে গ্রহন করে নিয়ে চলল ঘটনাস্থলের দিকে। পথের মধ্যে গুলি খাওয়া অনেক আহত মানুষ দেখলাম ব্যান্ডেজ পরে আমাদের সাথেই হেটে কিংবা স্লোগান দিয়ে চলছে। বাজার পারহয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটার পর একটা মাটির বাড়ি। দেয়ালে গুলির দাগ। শফিউল আলম জানালেন তার স্ত্রী কুলসুমা বেগম (৩২) সাড়ে তিন বছরের ছোট বাচ্চাকে আগলে ধরে ঘরের মধ্যে বসে ছিল। পুলিশের পোশাক পরা এস আলমের লোকেরা (পুলিশ নয়) বাইরে থেকে দৌড়ে এসে কুলসুমা বেগমকে পাঁজরে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে দেয়। জিজ্ঞেস করলাম আপনি কিভাবে বুঝলেন তারা পুলিশ নয়? বললেন এদেরকে আমরা আগে থেকেই চিনি, এরা এলাকার লোক। এস আলমের পক্ষে কাজ করছে। এরা পুলিশে চাকরি করেনা। বাড়ির উঠানে দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখতে দেখতে আমরা স্কুল মাঠের দিকে রওয়ানা দিলাম। যেখানে সমাবেশ এবং মূল গোলাগুলি হয়েছিল।
ছবিঃ ফরহাদ জামান জনি
সমাবেশস্থলে এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি। আমাদের দেখে অনেক মানুষ ছুটে আসলো। সবাই তাদের সেদিনকার রোহমর্ষক অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেদিন নিরস্ত্র মানুষদের লক্ষকরে এক হাজারের বেশী গুলি এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। এস আলমের গুন্ডা বাহিনী নাকি তাদের মালিককে দেখাতে চেয়েছিল তারা কত ভাল কাজ করে। এখানে জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন বক্তৃতা দেয়ার পর আমরা মাওলানা বশির সাহেবের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম। পথে পথে বহু লোক, বহু নারী আমাদের দেখে দাড়িয়ে কথা বলল, তাদের শরীরে গুলির দাগ, ব্যান্ডেজ দেখাল। বলল টিভিতেও আমাদের খবর ঠিক মত দেখাচ্ছেনা, আমাদের কথাও শুনাচ্ছেনা। আপনারা দয়া করে আমাদের কথাগুলা পৌঁছে দিবেন। তাদের কথা শুনলাম। সব ঘটনার প্রায় একই বর্ণনা। সমাবেশ উপলক্ষে সবাই জড় হয়েছিল। ১৪৪ ধারার কোন পূর্ব ঘোষণা মাইকিং কিছুই হয়নি, হঠাৎ সমাবেশ লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। যেখানে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হন।
যাই হোক এখান থেকে সামনে মাওলানা বশিরের বাড়ির দিকে এগুতে থাকলাম। সেখানে আরো হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ৪ তারিখের গুলি বর্ষণে মাওলানা বশিরের আপন দুই ভাই এবং তার ভাস্তি জামাই নিহত হন। প্রথমে তার বড় ভাইকে গুলি করা হয়, তাকে বাঁচানোর জন্য অন্য ভাই ছুটে গেলে তাকেও গুলি করা হয়, তাকে বাঁচানোর জন্য তার মেয়ের জামাই ছুটে গেলে তাকেও গুলি করা হয়। তিনজনই ঘটনাস্থলে নিহত হন। তিনজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। আসার সময় আমারা আলাপ করছিলাম কয়লা ফুলবাড়িতে মানুষের প্রান নিয়েছিল, এখানেও মানুষের প্রান নিল। ভবিষ্যতে না জানি আরো কত নিরীহ মানুষকে কয়লার জন্য প্রান দিতে হয়।
৮ এপ্রিল ২০১৬ পুলিশের গুলিতে নিহত মুর্তজা, আনোয়ার, জাকেরদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ৮ এপ্রিল ২০১৬ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, প্রকৌশলী মাহবুব সুমন, নৃবিজ্ঞানী নাসরিন সিরাজ, প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা, গায়ক সংস্কৃতি কর্মী অরুপ রাহী এবং গনসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের বাম প্রগতিশীল প্রায় সব রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ গন্ডামারার ঘটনাস্থলে যান। জাতীয় কমিটি গন্ডামারা ইউনিয়নে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাথে কথা বলেন, আহত এবং নিহতদের পরিবারেকে সমবেদনা জানিয়ে, বিকেলে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বাঁশখালী হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য রওয়ানা হন।
ছবিঃ ফরহাদ জামান জনি
একটি স্থানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে সে স্থান সহ তার চারপাশের ২০ থেকে ২৫ কিমি পর্যন্ত এলাকার পানিতে, বাতাসে ফ্লাই অ্যাশের বিষ ছড়িয়ে পড়ে, বটম অ্যাশের বিষে মাটি বিষাক্ত হয়ে যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্গত সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বাতাসের জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে এসিড বৃষ্টি হয়, তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম মিশে মানুষ সহ সকল প্রাণীর ক্যান্সার হয় এবং মহামারি আকারে স্থানীয় জনগনের এজমা, হাঁপানি দেখা দেয়। গাছপালা, সবজি, গুল্ম বিষাক্ত হয়ে পড়ে, ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফুসফুসের ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি, বন্ধ্যাত্য, গর্ভপাত, সহ ভয়ানক সব রোগের ঝুকি বাড়ে । বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনে ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি লিটার সুপেয় পানি উত্তোলন করার কারনে আশেপাশের বিশাল এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহৃত গরম পানি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়ার কারনে পুরো এলাকার মৎস্য সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়। সার্বিক বিচারে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে। এধরনের একটি ক্ষতিকর প্রকল্প করার জন্য চিনা কোম্পানি SEPCOIII Electric Power Construction Corporation এর সাথে বাংলাদেশের এস আলম গ্রুপের চুক্তি সম্পাদন, নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করা এবং তার ফলশ্রুতিতে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীর উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, হত্যার তীব্র নিন্দা এবং একই সাথে বিচার বিভাগিয় তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাই।