Tuesday, March 1st, 2016
লিফলেট: ১০-১৩ মার্চ ২০১৬ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুন্দরবন অভিমুখি জনযাত্রা
বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, কিন্তু সুন্দরবনের বিকল্প নাই
সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল-ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ ও
বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে
১০-১৩ মার্চ ২০১৬ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে
সুন্দরবন অভিমুখি জনযাত্রা
অসংখ্য প্রাণের সমষ্টি মহাপ্রাণ সুন্দরবন আজ উপর্যুপরি আক্রমণের মুখে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্য এই সুন্দরবন তার অসাধারণ জীববৈচিত্র দিয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে, লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার সংস্থান করে, আবার প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাঁচায়। সুন্দরবন বিনষ্ট হওয়া মানে বহুলক্ষ মানুষের জীবিকা হারানো, উপক’লীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষকে মৃত্যু ও ধ্বংসের হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া। দেশবাসীর প্রতিবাদ, ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা উপেক্ষা করে একদিকে রামপাল ও ওরিযন বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে এই অনবায়নযোগ্য বিশাল আশ্রয় সুন্দরবন হত্যার আয়োজন চলছে, অন্যদিকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সামনে রেখে দেশের ভূমিদস্যুদের নানারকম প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। মুনাফালোভী আগ্রাসনে এখন প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। শীপইয়ার্ড, সাইলো, সিমেন্ট কারখানাসহ নানা বাণিজ্যিক ও দখলদারী অপতৎপরতা বাড়ছে। দেশ বিশেষত উপক’লীয় অঞ্চল যখন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে তখন রামপাল মাতারবাড়ী সহ উপক’লীয় অঞ্চল জুড়ে নেয়া বিভিন্ন অবিবেচক প্রকল্প এই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের কথা বলেই এসব সর্বনাশা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে যথাযথ পথ গ্রহণে সবসময়ই দাবি করে আসছি, জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবিতে তার সমাধানের পথও দেখিয়েছি। জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবী অনুযায়ী সর্বজনের সম্পদে শতভাগ মালিকানা ও শতভাগ সম্পদ দেশের কাজে ব্যবহার, দুর্নীতি করবার দায়মুক্তি আইন বাতিল করে খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন, পিএসসি প্রক্রিয়া বাতিল করে স্থলভাগে ও সমুদ্রে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ, ক্ষমতা ও বরাদ্দ প্রদান, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু, মেরামত ও নবায়ন, এশিয়া এনার্জিকে (জিসিএম) দেশ থেকে বহিষ্কার ও উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ সহ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, জাতীয় সম্পদের উপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করবার জন্য জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ, পরিবেশ ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানী সম্পদের সর্বোত্তম মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি জ্বালানী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, জনধ্বংসী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ওপর গুরুত্ব প্রদানই যথাযথ সমাধানের পথ। কিন্তু সরকার এসব কম ব্যযবহুল, নিরাপদ, টেকসই এবং জনপরিবেশ অনুক’ল পথে না গিয়ে দেশি-বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থে তার উল্টোযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ এই দেশের মানুষের, দেশি বিদেশি লুটেরাদের জিম্মি হবার জন্য বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। দেশের সম্পদ শতভাগ দেশের মানুষের কাজে লাগাতে হবে, সুন্দরবন ও বাংলাদেশ লুন্ঠন ও মুনাফার বলি হবে না। লুন্ঠন ও সম্পদবিনাশী নীতি পরিবর্তন, জনস্বার্থে উন্নয়ন নীতি গ্রহণ এবং জাতীয় সম্পদে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার, ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জাগরণ দরকার।
সেই লক্ষ্যেই সুন্দরবনবিনাশী ও জনধ্বংসী বিভিন্ন প্রকল্প, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতাযুক্ত জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি ও চুক্তিসমূহ বাতিল করে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে:
* আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সারা দেশে প্রতিবাদ ও দাবি সমাবেশ হবে।
* ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ ২০১৬ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। এবং
* আগামী ১০ থেকে ১৩ মার্চ ২০১৬ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সুন্দরবনমুখি জনযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
১০ মার্চ ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিন্নভিন্ন ভাবে সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রা শুরু হবে। পথে পথে যোগ দেবেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। আর এছাড়াও ১০ থেকে ১৩ মার্চ জনযাত্রা চলাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্লাব, পাঠাগার, পাঠচক্র সুন্দরবনধ্বংসী তৎপরতার বিরুদ্ধে গান, নাটক, কবিতা, সমাবেশ, মিছিলসহ নানা আয়োজন করবেন।
আমরা আশা করি দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষ সুন্দরবনসহ দেশের সম্পদ ও জনস্বার্থ রক্ষায় এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন এবং ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলবেন:
সুন্দরবনধ্বংসী এনটিপিসি ও ওরিয়নের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল কর
ভূমিদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ কর
জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি ও চুক্তি বাতিল কর। দায়ী দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের শাস্তি চাই
স্থলভাগ ও সমুদ্রবক্ষের শতভাগ সম্পদ দেশের কাজে লাগাও
বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে
রক্তে ভেজা ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই
জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে সামগ্রিক উদ্যোগ নিতে হবে
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি