Saturday, August 8th, 2015
সর্বত্র ফুলবাড়ী দিবস পালন করুন: ‘শহীদের খুনে রাঙা পথে দালাল বেঈমানের ঠাঁই নাই’
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ’ ফুলবাড়ী দিবস উপলক্ষে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য এক বিবৃতিতে বলেছেন, আগামী ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থানের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
২০০৬ সালের এইদিনে পানিসম্পদ, আবাদী জমি ও মানুষ বিনাশী ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাঙালি আদিবাসী নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধসহ সকল মানুষের সম্মিলিত ও ধারাবাহিক প্রতিবাদ বিশাল আকার নিয়েছিলো। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফুলবাড়ী সহ ছয় থানায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ উচ্ছেদ করে, আবাদী জমি, ভূগর্ভস্থ ও নদীনালার পানি বিনাশ করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের আয়োজন করেছিলো অনভিজ্ঞ ভুইফোঁড় কোম্পানি এশিয়া এনার্জি। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী মাত্র ৬ শতাংশ রয়্যালটির বিনিময়ে কোম্পানি পুরো খনির মালিকানা তারা পেয়ে যেতো এবং শতকরা ৮০ ভাগ বিদেশে রফতানির মাধ্যমে নিজেরা বিপুল মুনাফা লাভ করতো। বাংলাদেশ হারাতো আবাদী জমি, বিনষ্ট হতো অমূল্য পানি সম্পদ, লক্ষ লক্ষ মানুষ উচ্ছেদ হতেন জীবিকা ও সমাজ থেকে, আবার হারাতো কয়লা সম্পদও। এই জালিয়াত কোম্পানি বহিষ্কার ও সম্পদ-জীবিকা বিধ্বংসী এই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে লক্ষ মানুষের সমাবেশে সরকারি বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে, গুলি চালায়। সাথে সাথে তিনজন তরুণ নিহত হন, গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দুই শতাধিক। এরপর পুরো অঞ্চলের নারীপুরুষেরা গণঅভ্যুত্থানের এক অসাধারণ পর্ব তৈরি করেন, সারাদেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এরই এক পর্যায়ে ৩০ আগষ্ট ২০০৬ চারদলীয় জোট সরকার জনগণের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। সারাদেশে উন্মুক্ত খনি নিষিদ্ধ ও এশিয়া এনার্জি বহিষ্কারের ধারাসহ এই চুক্তি ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ হিসেবে খ্যাত।
৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ফুলবাড়ীসহ ৬ থানার মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে ফুলবাড়ী চুক্তির প্রতি পূর্ণ সংহতি জানান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় গেলে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করেছিলেনও। চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিএনপি এবং প্রকাশ্য অঙ্গীকারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এই চুক্তি বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ। রক্তে লেখা সেই ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন এখন তাই রাষ্ট্রের দায়। এর অন্যথা করার কোনো পথ নাই।
কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই মেয়াদে সাত বছর পার হলেও এখনও সেই চুক্তির মূলধারাগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। কোন বৈধ অনুমোদন না পেলেও ফুলবাড়ীর কয়লা খনির ওপর লন্ডনে এখনও বেআইনীভাবে শেয়ার ব্যবসা করছে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)। শেয়ার ব্যবসার মুনাফার একাংশ ছড়িয়ে দেশে দালাল মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, কনসালট্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত খনি নিয়ে অতিতৎপরতা, পত্রপত্রিকা ও টিভিতে এর সপক্ষে মিথ্যাচার ও বিকৃত তথ্য মিশ্রিত অপপ্রচার এই জালেরই অংশ। চক্রান্ত চলছে, কিন্তু জনপ্রতিরোধও জারি আছে। এবারের ফুলবাড়ী দিবসের মূল শ্লোগান তাই, ‘শহীদের খুনে রাঙা পথে দালাল বেঈমানের ঠাঁই নাই।’
আমরা বারবার বলেছি, জাতীয় সম্পদের ওপর শতভাগ জাতীয় মালিকানা, খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধ করে শতভাগ দেশের কাজে লাগানো এবং জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের জন্য সামগ্রিক উদ্যোগই কেবল জনস্বার্থে দেশের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করেই এই পথে অগ্রসর হতে হবে।
আগামী ২৬ আগষ্ট সারাদেশে ফুলবাড়ী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দিনব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে ফুলবাড়ীতে। সেখানে কর্মসূচি শুরু হবে সকাল ৭ টায়। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারাদেশে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন আলোচনা সভা, র্যালী এবং প্রতিরোধের গানসহ নানা আয়োজন থাকবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধানিবেদন ও জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায়।
আমরা দেশবাসীর প্রতি সর্বত্র ফুলবাড়ী দিবস পালন করে দেশি-বিদেশি লুটেরাদের প্রতিহত করে জনস্বার্থে উন্নয়নের পক্ষে জনগণের শক্তি জোরদার করবার আহবান জানাই।