?> শহীদের খুনে রাঙা পথে কোন বেঈমানের স্থান নেই-‘ফুলবাড়ী দিবস ২০১৪’-এর ডাক « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, August 10th, 2014

শহীদের খুনে রাঙা পথে কোন বেঈমানের স্থান নেই-‘ফুলবাড়ী দিবস ২০১৪’-এর ডাক

আগামী ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ী দিবস। ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থানের অষ্টম বার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে ফুলবাড়ীসহ ৬ থানার বাঙালি আদিবাসী নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিদেশি কোম্পানী এশিয়া এনার্জির (বর্তমান নাম গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট বা জিসিএম) উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জমায়েত হয়েছিলেন। লক্ষ মানুষের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণার পরও কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া সরকারি বাহিনী সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে পাইকারি গুলিবর্ষণ শুরু করে। শহীদ হন তিনজন তরুণ: আমিনুল, সালেকিন ও তরিকুল। গুলিবিদ্ধ হন ২০ জন, আহত হন দুই শতাধিক। স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন বাবলু রায়, এইকালের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। এরপর অঞ্চলে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের অসাধারণ পর্বে শরীক হন সারাদেশের মানুষ। ৩০ আগষ্ট ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় সূচিত হয়। কিন্তু চক্রান্ত থামেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার সত্ত্বেও এখনও সেই ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে চক্রান্তকারীদের ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকে।

ফুলবাড়ীর কয়লা খনির ওপর লন্ডনে এখনও শেয়ার ব্যবসা করছে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)। মাদক ব্যবসা, ফটকাবাজারী ও সন্ত্রাসীদের সাথে যুক্ত নানা তহবিল সংস্থা এর অংশীদার। আমরা এযাবতকালের সকল সরকারকে অবৈধ জালিয়াতিপূর্ণ বাংলাদেশবিরোধী এই অপতৎপরতা বন্ধ করবার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু বন্ধ না করে সব সরকারই জনগণ বিতাড়িত কোম্পানিকে পুনর্বাসন করবার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। শেয়ার ব্যবসার মুনাফার একাংশ ছড়িয়ে দেশে দালাল লুম্পেনদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার মুখচেনা কতিপয় কনসালট্যান্ট, সাংবাদিক, মন্ত্রী, আমলা আর দিনাজপুর জেলার কতিপয় দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী দেশের সর্বনাশ করে কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এরা জনশত্র“। এদের চিনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে গণআদালত গঠন করতে হবে। জনগণের রায় ঘোষণা করতে হবে।

এই জনশত্রু দালালরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের কথা বলে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তারা উত্তরবঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞ করবারই চক্রান্তে শরীক হয়েছে। এই ধরনের লোকেরাই উত্তরবঙ্গে গ্যাস না দিয়ে বাংলাদেশ থেকে গ্যাস ভারতে রফতানির জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। এরাই বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ পানির দামে  বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে প্রচারণার কাজ করেছে। উন্মুক্ত খনি করতে গিয়ে দেশের অমূল্য আবাদি জমি, পানি সম্পদ, মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংস হোক, উত্তরবঙ্গ মরুভূমি হোক, ধ্বংসযজ্ঞ করে কয়লা বিদেশে পাচার হোক তাতে তাদের কিছু আসে যায না। মুনাফা আর কমিশনই এদের লক্ষ্য; প্রতারণা, মিথ্যাচার ও জালিয়াতিই তাদের প্রধান অবলম্বন। ২০০৬ সালে এই দুর্বত্তদের হটিয়ে দিতে ফুলবাড়ীতে মানুষ জীবন দিয়েছেন। রক্তে লেখা ফুলবাড়ী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গণরায় হয়েছে: এই দেশের সম্পদের প্রতিটি কণা দেশের মানুষের, তাদের কাজেই লাগাতে হবে; কোন বিদেশি কোম্পানি আর দেশি লুটেরাদের জন্য দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সর্বনাশ আমরা হতে দেবো না।

–সারা দেশে উন্মুক্ত পদ্ধতি নিষিদ্ধ ও দেশ থেকে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) বহিষ্কারসহ রক্তে লেখা ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ অবিলম্বে পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ফুলবাড়ী অঞ্চলে তালাবন্ধ করে রাখা এশিয়া এনার্জির অবশেষ অবিলম্বে সরাতে হবে।

–বড়পুকুরিয়ায় পুনর্বাসনের নামে জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত সকল মানুষকে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, নিরাপত্তা বালু ভরাট ইত্যাদি নিশ্চিত করে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে নিরাপদে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। বড়পুকুরিয়া এলাকার পানি সংকট দূর করতে হবে।

–সমুদ্র ও স্থলভাগের গ্যাস সহ সকল খনিজ সম্পদ শতভাগ দেশের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ‘খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধ আইন’ প্রণয়ন করে উত্তরবঙ্গে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

–গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচি:

র‌্যালী ও শ্রদ্ধানিবেদন: ফুলবাড়ী শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ, সকাল ৯টা;

সমাবেশ:নিমতলী মোড় বেলা ১১টায়।

ঢাকা সহ সারা দেশে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী, আলোচনা, র‌্যালী ও প্রতিরোধের গান