Monday, February 17th, 2014
ওএনজিসি ও কনোকো-ফিলিপসের সাথে আত্মঘাতী সর্বনাশা চুক্তি করবেন না
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সরকার আজ সংশোধিত ‘পিএসসি ২০১২’ অনুযায়ি ভারতের ওএনজিসির সাথে বঙ্গোপসাগরের ২টি গ্যাসব্লক এবং এই মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কনোকো-ফিলিপসের সাথে ১টি গ্যাস ব্লক চুক্তি করতে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের গ্যাসসম্পদ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানী নিরাপত্তার প্রধান অবলম্বন। অথচ এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তাহীন করে, বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ যোগান দেবার অর্থ দাঁড়ায় দেশের গ্যাস সম্পদ যেন বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ।
পিএসসি ২০০৮ এ রফতানির বিধান নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম, জনপ্রতিরোধ ও জনমতের চাপে পিএসসি ২০১২ তে রফতানির বিধান রাখা হয়নি। এটি জনগণের আন্দোলনের বিজয় বলে আমরা মনে করি। কিন্তু সংশোধিত পিএসসি ২০১২-তে বিদেশি কোম্পানির অধিকতর মুনাফার স্বার্থে গ্যাসের ক্রয়মূল্য আগের চুক্তির তুলনায় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর গ্যাসের দাম শতকরা ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, ব্যয় পরিশোধ পর্বে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব শতকরা ৫৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৭০ ভাগ করা হয়েছে। চতুর্থত, যথেচ্ছ দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পুঁজির অভাবের কথা বলে এরকম চুক্তি করা হচ্ছে, অথচ এতে ওএনজিসি যে বিনিয়োগ করবে তার দ্বিগুণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অলস পড়ে আছে। এইরকম মডেলে চুক্তি স্বাক্ষর করলে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ যে শুধু বিদেশি কোম্পানির দখলে চলে যাবে তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নের জন্য গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগানোও সম্ভব হবে না। আমদানি করা গ্যাসের চাইতেও বেশি খরচ হবে নিজ দেশের গ্যাস ক্রয়ে। উপরন্তু চুক্তির কারনে বাংলাদেশের আর্থিক বোঝাও সীমাহীন হবে। আমরা সরকারকে এই ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। পরিবর্তে জাতীয় সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রয়োজনে সাবকন্ট্রাক্টের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এই ধরনের পিএসসি প্রক্রিয়া-সরকার নির্বিশেষে বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেবার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখিন হতে যাচ্ছে। জনগণকে বঞ্চিত করে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেশের সম্পদ উজাড় করে দেওয়ার এইসব ঘোর অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা দেশবাসীকে আবারো প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।