?> ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনছে সামিট « NCBD – National Committee of Bangladesh

Thursday, September 8th, 2016

২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আনছে সামিট

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নতুন করে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সামিট গ্রুপ। আর তাতে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগ করছে একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে বহুজাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বিনিয়োগের ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দেশেও চলে এসেছে।

সামিট গ্রুপের কর্ণধার ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান জানান, বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো এত বিপুল অর্থ মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে মূলধন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), আইএফসির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, দুবাইভিত্তিক ইমা পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট, আইডিবি (ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক) অবকাঠামো তহবিল, বাহরাইনের আসমা ক্যাপিটাল পার্টনার্স এবং ডেলিম এনার্জি সম্মিলিতভাবে এ বিনিয়োগ করেছে, যার সিংহভাগ এরই মধ্যে দেশে চলে এসেছে।
সামিট গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিটের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল’-এর মাধ্যমে এ বিনিয়োগ দেশে এসেছে। সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সামিট গ্রুপ। নিজেদের সেই পুরোনো ব্যবসার সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করে মূলধন সংগ্রহে সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে নতুন করে গঠন করা হয় পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। যেটির ৫০ শতাংশ মালিকানা হস্তান্তরের মাধ্যমে আইএফসিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার মূলধন সংগ্রহ করা হয়।
জানা গেছে, সামিটের মালিকানাধীন পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালকে সিঙ্গাপুরের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশটিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে সাধারণ শেয়ারধারীদের কাছ থেকে আরও ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নতুন করে ২৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার বাকি অর্থের মধ্যে সামিট গ্রুপ ১০ কোটি ডলার এবং মূলধনের বিপরীতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাকি অর্থ ‘ঋণ’ হিসেবে বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে এ বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগের অর্থে চট্টগ্রামের মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল এবং প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার তিনটি আলাদা আলাদা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হবে এলএনজিভিত্তিক।
গত জানুয়ারিতে রাজধানীর র্যা ডিসন হোটেলে অনুষ্ঠিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে জ্বালানি খাতে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা দেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। তারই অংশ হিসেবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূলধন ও ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে গত সোমবার প্রথম আলোকে জানান তিনি।
গত সোমবার মুহাম্মদ আজিজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বেসরকারি খাত এখন অনেক শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানের। বড় ধরনের বিনিয়োগে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা শুধু নিজস্ব মূলধনে। সামিট গ্রুপকে এ মূলধন জোগান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী আইএফসিসহ বিশ্বখ্যাত আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।’
জানা গেছে, এলএনজিভিত্তিক নতুন যে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা হবে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে।
মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, সরকারের দিক থেকে দ্রুত অনুমোদন পেলে দুই বছরের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল ও তিন বছরের মধ্যে প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করা যাবে। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল ও তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশাবাদ তাঁর।
সামিট গ্রুপের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, এলএনজি সরবরাহের সুবিধার্থে জাতীয় সরবরাহ লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে মহেশখালীতে নিজস্ব টার্মিনাল থেকে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। সেই পাইপলাইন দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করা হবে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

http://www.prothomalo.com/economy/article/971494