?> সম্পদের উপর জনগণের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, June 15th, 2008

সম্পদের উপর জনগণের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে

সংবাদপত্রের সা¤প্রতিক খবরে জানা গেছে (এ মাসের ৪ তারিখে Financial Express এবং ৯ তারিখে New age -এ) যে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আহুত ২৮টি ব্লকের দরপত্রের ভিত্তিতে আগামী অক্টোবরে ১০টি ব্লক ইজারা দেবার জোর তৎপরতা চলছে। ১০টি ব্লকের মধ্যে ৯টি পেতে যাচ্ছে USA -এর Conoco Phillips ও বাকি ১টিতে সফল দরদাতা আয়ারল্যান্ডে-এর Tullow । জনগণের সম্পদ তাদের মতামত না নিয়ে নিজেরা মালিক সেজে এই অনির্বাচিত সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচিত সরকার আসার মাত্র ২ মাস আগেই এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ কাজটি সাঙ্গ করতে চাচ্ছে। দেশে চরম জ্বালানী সঙ্কট ও গ্যাস সঙ্কট – তার মুখে এই অমূল্য সীমিত ধন বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক (৮০% পর্যন্ত) পাচারের ষড়যন্ত্র এই ইজারা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চরিতার্থ হবার পথে।

বাংলাদেশের জনগণ বহুদিন ধরে জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে সম্পদ পাচারের আন্দোলন ঠেকিয়েছে। এবারও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে জনগণ তার সম্পদ রক্ষা করবে।

জনগণের পক্ষে তাই কমিটি দাবী জানায় –

১. অবিলম্বে সমুদ্রসীমা যথাযথভাবে নির্ধারণ ও তার উপর দেশের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. ভবিষ্যতে কোন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দরপত্র আহ্বানের পূর্বে আগের সকল চুক্তি প্রকাশ ও অসম লুণ্ঠনভিত্তিক চুক্তি বাতিল বা সমতা ভিত্তিক করতে হবে। যারা অতীতে এসব জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি প্রণয়নে জড়িত ছিলেন যথা Ñ মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আমলা, দালাল বুদ্ধিজীবী Ñ তাদের বিচারের ও দণ্ড দানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. সংবিধানসূত্রে যে জনগণ সকল খনিজ সম্পদের মালিক তাদের অগোচরে, তাদের সম্পত্তির তোয়াক্কা না করে, জনগণের পরিবর্তে নিজেরাই মালিক সেজে যারা মডেল পিএসসি অনুমোদন করে তার ভিত্তিতে ইজারা দেবার চক্রান্ত করছে তাদের এই চক্রান্ত নস্যাৎ করতে হবে। জনগণের অনুমোদন ও সম্মতির ভিত্তিতেই মডেল পিএসসি করতে হবে ও ইজারা দানের প্রক্রিয়া চালাতে হবে। যারা অসাংবিধানিকভাবে ও অবৈধভাবে জনগণের সম্পদ বেদখল করার চক্রান্ত করছে বিশেষ করে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও তার বিশেষ সহকারী ড. ম. তামিম আহমদ, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদের একটি বিন্দুও কোন আকারে বা প্রকারে রপ্তানি করা যাবে না। সম্পদ উত্তোলনের হার আমাদের স্বচ্ছন্দ চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এর আগে বর্তমান অবদমিত চাহিদাকে বাড়িয়ে স্বচ্ছন্দ চাহিদাতে উন্নীত করার লক্ষ্যে নতুন সার, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫. বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠান পঙ্গু করার নীতি পরিত্যাগ করে তাদের কারিগরি দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করার পথে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

৬. সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে দক্ষতা ও যোগ্যতা তৈরীর জন্য সব ব্লকে বাপেক্সকে যুক্ত রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৭. বাংলাদেশের তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে হবে শুধু দেশের মানুষের প্রয়োজনে, বিদেশী কোম্পানির মুনাফা বা বিদেশে রপ্তানির জন্য নয়।

৮. বিদেশী কোম্পানির যে উৎপাদন ব্যয় বাংলাদেশ কর্তৃক পরিশোধযোগ্য হবে তার হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে ও জাতীয় সংস্থা কর্তৃক যথাযথভাবে পরীক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিসমূহকে সতর্ক করা হচ্ছে, যদি তারা আমাদের দেশের সংবিধান ও আইন লংঘন করে কোন চুক্তি করেন তবে সে সব চুক্তি বিনা ক্ষতিপূরণে অবৈধ ঘোষণা করা হবে, সরকারে তখন যারাই থাকুন না কেন।

আমাদের এইসব দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মিছিল, সভা, মানব বন্ধন, ঘেরাও, হরতাল, কুশপুত্তলিকা দাহসহ সকল ধরণের সংগ্রাম করা হবে। যদি জরুরী আইন বলবৎ রেখে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করে কোন জনস্বার্থবিরোধী অবৈধ চুক্তি করার যড়যন্ত্র করা হয় তবে জরুরী আইন ভঙ্গ করে দেশের স্বার্থ জনগণ রক্ষা করবে।

[১৫ জুন ২০০৮ তারিখে জাতীয় কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পঠিত]