?> ইউনেস্কো সভার প্রাক্কালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রতি জাতীয় কমিটি- “একগুঁয়েমী ও কালক্ষয় থেকে সরে আসুন: অবিলম্বে সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প বাতিল করুন” « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, July 2nd, 2017

ইউনেস্কো সভার প্রাক্কালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রতি জাতীয় কমিটি- “একগুঁয়েমী ও কালক্ষয় থেকে সরে আসুন: অবিলম্বে সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প বাতিল করুন”

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন: “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে যুক্তিহীন, মানুষ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী একগুঁয়েমী দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনধ্বংসী রামপাল প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হতে থাকায় বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশ অচিরেই বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকা থেকে বাদ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা তৈরি হয়েছে। এর ফলে এর বিনাশে দেশি বিদেশি দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর তৎপরতা আরও সহজ হবে, বাংলাদেশ পুরো অরক্ষিত হয়ে পড়বে, দুদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে বিপদগ্রস্ত হবেন। ইউনেস্কো এর আগে বহুবার বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সুন্দরবন বাঁচাতে এই প্রকল্প থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছে। কিন্তু দুইদেশের সরকার একগুঁয়েমী করতে থাকায় আজ থেকে শুরু হওয়া ইউনেস্কোর সভায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কোনো যুক্তি না শুনে বারবার বলে যাচ্ছেন কোনো ক্ষতি হবে না। জনগণের অর্থ খরচ করে সরকারি নানাদল ইউনেস্কোকে বোঝানোর নাম করে ইউরোপে আনন্দ সফর করছে। অথচ আমরা অঞ্চলে সরেজমিনে দেখেছি, প্রকল্পের জমি ভরাট করতে নদী ড্রেজিং করাতে এর মধ্যেই নদী ভাঙন ও দূষণ দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে।

“জাতীয় কমিটি থেকে আমরা বহুবার সরকারকে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে দেখিয়েছি যে, কোম্পানি যে দূষণ দূর করার কাহিনী বলছে দুনিয়ায় তার কোনো গ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত নেই। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার দরপত্র ও অন্যান্য দলিলের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকেই দেখা যায় যে, এতে দূষণ বিপদমুুক্ত মাত্রায় দূর হবে না, অনেকক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হবে মাত্র। তাছাড়া এগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ও দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে, যে তথ্য গোপন করা হচ্ছে, এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবেও তা আর্থিকভাবে খুবই অযৌক্তিক হবে। সেজন্য ভারত নিজেই এই পথ থেকে সরে আসছে। সরকারের তদারকির কার্যকরিতা নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলে বলেছি, যেখানে সচিবালয় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দূষণে প্রায় মৃত সেখানে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে সরকারি তদারকি ঠিকঠাকভাবে কাজ করবে এটা কে বিশ্বাস করবে? সুন্দরবন এলাকায় তেল ও কয়লার জাহাজডুবির পর সরকারের ভূমিকাও আমাদের স্মরণে আছে। উপরন্তু সুন্দরবন এমন একটি অতুলনীয় সম্পদ যাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য নয়।

“সুন্দরবন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেলে বিশ্বজুড়ে বিষয়টি এভাবে উপস্থিত হবে যে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা প্রকৃতিপ্রদত্ত এক অসাধারণ সম্পদ ধরে রাখার যোগ্যতা রাখে না, এদেশের মানুষের সেই সক্ষমতা বা পরিপক্কতা নেই। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার ধিকৃত হবে। সুন্দরবিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্প তাই শুধু দেশকে বিপর্যস্ত করবে না, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক বিনষ্ট করবে এবং বিশ্ব দরবারে দুদেশের সরকারকে কলঙ্কিতও করবে। কাজেই সরকারের উচিৎ হবে একগুঁয়েমী ত্যাগ করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, বিশেষজ্ঞ মত ও ক্রমবর্ধমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে রামপাল চুক্তি বাতিলসহ সুন্দরবনবিনাশী বনগ্রাসী সব তৎপরতা বন্ধ করা। আর সেইসঙ্গে ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ গ্রহণ করে এর বিকাশে সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ।

“আমরা আবারও সরকারকে ক্ষমতা ও মুনাফার অন্ধত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চোখ খুলে সুন্দরবনের দিকে তাকাতে অনুরোধ করছি, এটি প্রকৃতির বিশাল সম্পদ, কাঠ বা জমি নয়। একইসঙ্গে দুদেশের সরকারের কাছে আবারও দাবি জানাচ্ছি রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবন বিনাশী সকল তৎপরতা বন্ধ করুন, দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করুন, সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে বাংলাদেশসহ দুদেশের উপক’লীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ ও সর্বপ্রাণকে বাঁচতে দিন। বাংলাদেশের মানুষ এই সর্বনাশ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”