Tuesday, April 18th, 2017
সুন্দরবন রক্ষায় ২০ এপ্রিল খুলনায় উপকূলীয় মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান
সুন্দরবন রক্ষায় আগামী ২০ এপ্রিল খুলনায় উপকূলীয় মহাসমাবেশকে সামনে রেখে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত সম্মেলনে বলা হয়েছে, “সকল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী অপতৎপরতায় পুরো বাংলাদেশই অরক্ষিত হবে, ভয়াবহ মাত্রায় বিপদাপন্ন হবে। তবে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, ভোলা, বরিশালসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ হবে সবচাইতে বেশি। এই ক্ষতি নদীর পানি ও বায়ু দূষণের মাধ্যমে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তীব্রতর করবার মাধ্যমে দেশের আরও বহু অঞ্চলে আঘাত করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, “জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সাথে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। যৌথ প্রকল্প বলা হলেও এই ঋণের পুরো দায়ভার বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে ‘সার্বভৌম গ্যারান্টি’ দিয়ে। এই ঋণের টাকায় যেই ভারতীয় কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে তাকেও সবরকম শুল্ক ও দায় থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সরকার একদিকে ঋণের বোঝা জনগণের কাঁধে ফেলে অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নামে, অন্যদিকে আরও ঋণের বোঝা জনগণের কাঁধে ফেলেবাংলাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুন্দরবন ধ্বংসের চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এগুলি জনগণের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা ও নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। আর্থিক বোঝা, বেশি দামে বিদ্যুৎ সর্বোপরি সুন্দরবন বিনাশ করেও রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকারের এই ভূমিকা অবিশ্বাস্য মাত্রায় জাতীয় স্বার্থবিরোধী। আমরা সরকারের এই ভূমিকায় আবারও ধিক্কার জানাই।বাংলাদেশের মানুষ এই দেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুন্দরবন ও নদী বিনাশ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।“
আজ ১৮ এপ্রিল সকাল ১১টায় ২, কমরেড মণি সিংহ রোডস্থ মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। জাতীয় কমিটির সংগঠক টিপু বিশ্বাস, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকী, সাইফুল হক, শুভাংশু চক্রবর্তী, মোশারেফ হোসেন নান্নু, শহিদুল ইসলাম সবুজ, নাসির উদ্দিন নাসু, মাহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, প্রকৌশলী মাহবুব সুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সম্মেলনে আরো বলা হয়, “বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের মুখোশ দিয়েই এ্ সর্বনাশা প্রকল্প জায়েজ করবার চেষ্টা চলছে। অথচ এরচাইতে কম দামে পরিবেশসম্মতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক পথ আছে। যেমন, বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ আগামি কয়েক দশকে প্রধান অবলম্বন হতে পারে। এই সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারের যথাযথ নীতি গ্রহণ করলে সুন্দরবিনাশী বা দেশধ্বংসী কোনো প্রকল্পের যৌক্তিকতা দেখানো যায় না।বরং গ্যাসসম্পদের ব্যবহার করে সুলভে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোও সম্ভব হয়, উৎপাদনশীল খাতও ব্যাপক গতি পেতে পারে। অথচ সরকার উল্টোযাত্রা করছে, নিজস্ব সম্পদ দেশের কাজে শতভাগ ব্যবহারের নীতিমালা গ্রহণ না করে উচ্চ দামে এবং রফতানি মুখি ধারা রেখে বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হচ্ছে। এতে এই সম্পদ দেশের কাজে লাগানো সম্ভব হবে না বরং এই চুক্তির কারণে দেশের ওপর আরো আর্থিক বোঝা বাড়বে। সম্পদও হারাবে দেশ।”
সংবাদ সম্মেলনে, উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা ও কমপক্ষে ৫ কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য হুমকি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল এবং সুন্দরবনবিনাশী অপতৎপরতা বন্ধ, পাটশিল্পের বিকাশ, মৎস্যজীবী ও বনজীবীদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি বান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, এবং উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের ঘরে ঘরে সুলভে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে জনমুখি উন্নয়ন ধারা সৃষ্টির জন্য গ্যাস রপ্তানির চুক্তি বাতিলসহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে ২০ এপ্রিল বেলা ৩.৩০মিঃ এ খুলনা শহীদ হাদিস পার্কের মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান জানানো হয়।