?> সরকারের একগুঁয়েমী ও কালক্ষয় বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী « NCBD – National Committee of Bangladesh

Tuesday, September 27th, 2016

সরকারের একগুঁয়েমী ও কালক্ষয় বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য
সচিব অধ্যাপক আনুমুহাম্মদ আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন- রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য যে বিনাশী হবে,
বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দেশ-বিদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও সরকার এখনও
এই প্রকল্প বাতিলে কালক্ষয় করছে। এতে সুন্দরবনের ক্ষতি বাড়ছে, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে, বাংলাদেশ ভারতের
সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতীয় কমিটি থেকে আমরা বহুবার সরকারকে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করে দেখিয়েছি যে, কোম্পানি
যে দূ ষণ দূর করার কাহিনী বলছে দুনিয়ায় তার কোনো গ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত নেই। এসব প্রযুক্তি ব্যবহার দরপত্র ও
অন্যান্য দলিলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ থেকেই দেখা যায় যে, এতে দূষণ বিপদমুক্ত মাত্রায় দূর
হবে না, অনেকক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হবে মাত্র। তাছাড়া এগুলো ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় ও দাম বহুগুণ
বৃদ্ধি পাবে, যে তথ্য গোপন করা হচ্ছে,  এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসেবেও তা আর্থিকভাবে খুবই অযৌক্তিক হবে। সরকারের
তদারকির কার্যকরিতা নিয়েও আমরা প্রশ্ন তুলে বলেছি, যেখানে সচিবালয় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বুড়িগঙ্গা
দূষণে প্রায় মৃত সেখানে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে সরকারি তদারকি ঠিকঠাকভাবে কাজ করবে এটা কে বিশ্বাস
করবে? সুন্দরবন এলাকায় তেল ও কয়লার জাহাজডুবির পর সরকারের ভ’মিকাও আমাদের স্মরণে আছে। উপরন্তু
সুন্দরবন এমন একটি অতুলনীয় সম্পদ যাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য নয়।

সম্প্রতি ইউনেস্কো টিম বাংলাদেশে এসে সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে
সরকারকে প্রদত্ত রিপোর্ট দেখিয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা রামপাল বিদ্যুৎ
কেন্দ্র সহ সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ সব বাণিজ্যিক তৎপরতা বন্ধ করতে বলেছেন। ইউনেস্কো টিম যখন বাংলাদেশ
সফর করে তখন তাঁদের পরিকল্পনা ছিলো, দুইপক্ষের কথাই তাঁরা শুনবেন। কিন্তু সরকার নানা বাহানা সৃষ্টি করে
আমাদের সাথে কোনো সভা করবার সময় রাখেনি। তারপরও তাঁরা স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ সিদ্ধান্তে
এসেছেন। কোম্পানি, ভ’মিগ্রাসী ও বনগ্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত না হলে, নির্মোহ বিচার বিশ্লেষণ করলে সরকারও
যে একই সিদ্ধান্তে আসবে সেটা আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি।

ইউনেস্কোর সর্বশেষ রিপোর্টের তাগিদ থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার যদি আগের মতোই এসব
গুরুতর বিষয় উপেক্ষা করে তাহলে সুন্দরবন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে বিষয়টি এভাবে
উপস্থিত হবে যে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা প্রকৃতিপ্রদত্ত এক অসাধারণ সম্পদ ধরে রাখার যোগ্যতা রাখে না,
এদেশের মানুষের সেই সক্ষমতা বা পরিপক্কতা নেই। সুন্দরবনবিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্প তাই শুধু দেশকে বিপর্যস্ত করবে
না, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক বিনষ্ট করবে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে কলঙ্কিতও করবে। কাজেই সরকারের
উচিৎ হবে একগুঁয়েমী ত্যাগ করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, বিশেষজ্ঞ মত ও ক্রমবর্ধমান জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে অবিলম্বে রামপাল চুক্তি বাতিলসহ সুন্দরবনবিনাশী বনগ্রাসী সব তৎপরতা বন্ধ করা। আর সেইসঙ্গে ‘সুন্দরবন নীতিমালা’ গ্রহণ করে এর বিকাশে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ। একাজে সরকার যতো দ্রুত এগিয়ে আসবে ততো আমরা বিবিধ ক্ষতি কমাতে পারবো।