?> ফুলবাড়ী মহাসমাবেশ: দালালদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি, দাবী পূরণ না হলে ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ি অবরোধ « NCBD – National Committee of Bangladesh

Sunday, December 28th, 2014

ফুলবাড়ী মহাসমাবেশ: দালালদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি, দাবী পূরণ না হলে ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ি অবরোধ

 ২৭ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী মহাসমাবেশ থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি’র মধ্যে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এশিয়া এনার্জির প্রধান গ্যারি এন লাইকে গ্রেপ্তার ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিকে উন্মুক্ত করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করা না হলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

বেলা দুইটায় প্রতিবাদী গানের মাধ্যমে মহাসমাবেশের কর্মসূচী শুরু হয়। গণসঙ্গীত পরিবেশন করে বিবর্তন ও চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সহ স্থানীয় শিল্পীগণ ।এর আগে দুপুর ১২টা থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল-সমাবেশ আসতে থাকে। দুপুর দুইটা নাগাদ ফুলবাড়ী পৌর শহর জনারণ্যে পরিণত হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সাইফুল ইসলাম জুয়েল।বক্তব্য রাখেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ শহীদল্লাহ্, সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ সহ বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(মার্কসবাদী), গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যফোরাম,গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ফুলবাড়ী আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণ করা বাবলু রায়।


সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, এশিয়া এনার্জি (বর্তমান নাম গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট বা জিসিএম) দেশের আবাদী জমি পানি ও মানুষের সর্বনাশ করে মাত্র শতকরা ৬ ভাগ রয়্যালটি দিয়ে তারা দেশের কয়লা বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিলো। ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট লক্ষ মানুষের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া সরকারি বাহিনীর পাইকারি গুলিবর্ষণে শহীদ হন তিনজন তরুণ: আমিনুল, সালেকিন ও তরিকুল। গুলিবিদ্ধ হন ২০ জন, আহত হন দুইশতাধিক।  ৩০ আগষ্ট ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় সূচিত হয়।  কিন্তু চক্রান্ত থামেনি। এই চুক্তির পক্ষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার সত্ত্বেও এখনও সেই ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার বদলায় কিন্তু দেশি বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে লুটেরা চক্রান্তকারীদের ভূমিকার কোন পার্থক্য দেখা যায় না।

সমাবেশের বক্তারা বলেন, ফুলবাড়ীর কয়লা খনির নামে বেআইনীভাবে এখনও লন্ডনে শেয়ার ব্যবসা করছে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)। এ যাবতকালের সকল সরকারকে অবৈধ জালিয়াতিপূর্ণ বাংলাদেশবিরোধী এই অপতৎপরতা বন্ধ করবার দাবি জানানোর পরও সব সরকারই এই জালিয়াত কোম্পানিকে পুনর্বাসন করবার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেছে। শেয়ার ব্যবসার মুনাফার একাংশ ছড়িয়ে দেশে দালাল লুম্পেনদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার মুখচেনা কতিপয় কনসালট্যান্ট, সাংবাদিক, মন্ত্রী , আমলা আর দিনাজপুর জেলার কতিপয় দুর্নীতিবাজ মাদকসেবী সন্ত্রাসী দেশের সর্বনাশ করে কোম্পানির স্বার্থরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এরা জনশত্রু।

এদের ওপর ভর করেই এশিয়া এনার্জি বা জিসিএম বারবার ফুলবাড়ী বিরামপুরে অশান্তি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে। ২০১২ সালে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে কোম্পানির প্রবেশ সুগম করতে চেয়েছিলো। জনপ্রতিরোধে ভেসে গেছে ১৪৪ ধারা। ২০১৩ সালে কোম্পানি কর্তা গ্যারী লাই ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করতে চেয়েও জনগণের প্রতিরোধে ফিরে গেছে। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর চোরের মতো ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করেছিলো গ্যারী লাই। জনগণ স্বতস্ফ’র্তভাবে প্রতিরোধে শামিল হয়েছেন। জনগণের তাড়া খেয়ে পুলিশ পাহারায় তাকে জান নিয়ে পালাতে হয়েছে। চক্রান্ত যেমন চলছে তেমনি প্রতিরোধও অব্যাহত আছে। সমাবেশ থেকে এশিয়া এনার্জির দালালদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, এখনও সময় আছে, তওবা পড়ে ভালো হয়ে যান, নইলে পালানোর পথ পাবেন না।

সমাবেশ থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আন্দোলনকারী নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এশিয়া এনার্জির প্রধান গ্যারি এন লাইকে গ্রেপ্তার, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিকে উন্মুক্ত করার ষড়যন্ত্র বন্ধ সহ ফুলবড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়। নইলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ীতে অবরোধ সহ আরো কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এই সময়কালের মধ্যে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে, আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হলো জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে সমাবেশ থেকে জানানো হয়।

দিনব্যাপি কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সন্ধ্যা থেকে চলে প্রতিবাদী গান সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অভিনীত হয় সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নির্মিত বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠীর নাটক- ‘সুন্দরী উপাখ্যান’।