Sunday, November 30th, 2014
এশিয়া এনার্জি প্রধানের আগমনের প্রতিবাদে উত্তাল ফুলবাড়ী
এশিয়া এনার্জি প্রধানের আগমনের প্রতিবাদে উত্তাল ফুলবাড়ী:
এশিয়া এনার্জির অফিস ও গাড়ি ভাঙচুর, সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ পালন!
৩ ডিসেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ
২৭ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে মহাসমাবেশ
এশিয়া এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি এন লাই এর ফুলবাড়ি আগমন এবং উন্মুক্ত কয়লা খনির পক্ষে স্থানীয় দালালদের সাথে গোপন সভা করার প্রতিবাদে গত ২৬ নভেম্বর বুধবার এশিয়া এনার্জির কার্যালয় ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে স্থানীয় লোকজন। গ্যারি লাই এর গ্রেফতার ও বিচার, উন্মুক্ত খননের সকল চক্রান্ত বন্ধ সহ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের দাবীতে ফুলবাড়ী জাতীয় কমিটির ডাকে ফুলবাড়ীতে ২৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা অবরোধ পালিত হয়।
২৬ নভেম্বরের প্রতিরোধ: গত ২৬ নভেম্বর সকালে গ্যারি লাইয়ের গোপন সভা করার খবর ফুলবাড়ী পৌর বাজারে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার নেতা-কর্মীসহ শতশত বিক্ষুব্ধ ফুলবাড়ীবাসি শহরের নিমতলা মোড়ে অবস্থান নেন। ড্রাম ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে তৈরী হয় জনগণের ব্যারিকেড। একপর্যায়ে ফুলবাড়ী পৌর মেয়র মর্তুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে ফুলবাড়ী সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনও আন্দোলনে যোগ দেয়। উপস্থিত সমাবেশ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে গ্যারি লাইকে ফুলবাড়ী ত্যাগ করার আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ের পরও গ্যারি লাই ফুলবাড়ী না ছাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা এশিয়া এনার্জির রাজারামপুরের কার্যালয় ও কার্যালয়ের বাইরে গ্যারি লাইকে বহনকারী দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় গ্যারি লাই সহ এশিয়া এনার্জির কর্মকর্তারা পুলিশের সহায়তায় দিনাজপুর পালিয়ে যায়।
গ্যারি লাইয়ের আগমনের প্রতিবাদে ফুলবাড়ীর জনগণের প্রতিরোধ, ছবি: সামিউল ইসলাম চৌধুরি
এরপর বিকেল সাড়ে চারটায় নিমতলা মোড়ে ফুলবাড়ী জাতীয় কমিটি এক সভা আয়োজন করে। সভায় এশিয়া এনার্জি প্রধান গ্যারি লাই এর গ্রেফতার ও বিচার, উন্মুক্ত খননের সকল চক্রান্ত বন্ধ সহ ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ন বাস্তবায়নের দাবীতে ফুলবাড়ীতে ২৭ নভেম্বর সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা অবরোধের ডাক দেয়া হয়।
ফুলবাড়ীর জনগনের সাথে সংহতি জানিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় কমিটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, বিকাল ৪.৩০ এ সমাবেশ করে।
উল্ল্যেখ্য এর আগেও গ্যারি লাই এভাবে ফুলবাড়ীর জনগণের ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। গত ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গ্যারি লাই দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, বিরামপুর এলাকায় কম্বল বিতরণের নামে পাবলিসিটি ও স্থানীয় দালালদের সাথে বৈঠকের পরিকল্পনা করে। কিন্তু ফুলবাড়ি-বিরামপুর-পার্বতিপুরের মানুষের কালো পতাকা ও লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রতিরোধের কারণে আর ফুলবাড়ির দিকে যাওয়ার সাহস করেনি, দিনাজপুর শহর থেকেই ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
২৭ নভেম্বর- অবরোধে অচল ফুলবাড়ী: তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী শাখার ডাকে ২৭ নভেম্বরের অবরোধে অচল হয়ে যায় গোটা ফুলবাড়্।ী জাতীয় কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে এ সময় রাস্তায় নেমে আসে সম্মিলিত পেশাজীবি সংগঠন ও ফুলবাড়ীর সর্বস্তরের জনতা।
সকাল থেকেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। অবরোধের কারণে সেখানে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।
২৭ নভেম্বর ফুলবাড়ী অবরোধ, ছবি: শাহরিয়ার সানি
অবরোধ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মর্তুজা সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ শেষে নিমতলা মোড়ে আসে। এখানে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য দেন সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক পৌর মেয়র মর্তুজা সরকার মানিক, সদস্যসচিব সাংবাদিক শেখ সাবীর আলীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
বেলা তিনটার দিকে নিমতলা মোড়ে জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খুরশিদ আলম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, সদস্যসচিব জয়প্রকাশ গুপ্ত প্রমুখ।
২৭ নভেম্বর অবরোধ শেষে জাতীয় কমিটির সমাবেশ, ছবি: শাহরিয়ার সানি
সভায় ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নসহ এশিয়া এনার্জির অফিস উচ্ছেদ ও এশিয়া এনার্জি প্রধান গেরিলাইকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। সভা থেকে জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ১ থেকে ১২ ডিসেম্বর ৮টি ইউনিয়নে সমাবেশ, ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৭ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।