?> সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির দায় জনগণ বহন করবে না « NCBD – National Committee of Bangladesh

Saturday, March 1st, 2014

সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির দায় জনগণ বহন করবে না

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের আবারো দামবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়লে তো বিদ্যুতের বেশিদাম দিতেই হবে।’ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় যদি যুক্তিযুক্ত কারণে বৃদ্ধি পায় তাহলে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির যৌক্তিকতা আমরা মেনে নিতে রাজি। কিন্তু সরকারের দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে কেনো জনগণ তার দায় বহন করবে?

আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি, বিভিন্ন ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ প্লান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বিল আদায়, অচল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাবদ বিপুল ব্যয়, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার বাবদ ব্যয়ের কারণে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে যার সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন সম্পর্ক নেই। এসব ব্যয় হিসাব করলে কতিপয় কোম্পানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম কখনো কখনো ৯০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। স্বল্পমেয়াদে আনার কথা বললেও সরকার এইসব রেন্টাল ও কুইক-রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্ট মেরামত না করে ১০ গুণ বেশি দামে বিদ্যুৎ পাবার জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ফাঁদে দেশকে ফেলে ইতিমধ্যেই দেশের অর্থনীতির উপর ভয়াবহ বোঝা তৈরী করেছে সরকার। এর খেসারত হিসেবে গত মেয়াদে পাঁচ বার বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হয়েছে, তারপরও হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকীর বোঝা কমেনি। কুইক রেন্টালের মেয়াদ এখন ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার অর্থ হলো এই বোঝা আরো বাড়ানো এবং আবারো বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হওয়া।

উল্লেখযোগ্য যে, আমদানিকৃত তেলের দামও এখন বৃদ্ধি পায়নি। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী জনস্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কতিপয় বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী ও কমিশনভোগীদের স্বার্থে কথা বলছেন। সামগ্রিকভাবে ‘দায়মুক্তি আইন’কে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে সরকার যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি বিদেশি কতিপয় গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনগণের বোঝা বাড়ছে। যার ফলাফল হলো একদিকে সংকট ও অনিশ্চয়তা বহাল থাকা অন্যদিকে বারবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি। দেশি-বিদেশি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দেশের মানুষ কেন এই বোঝা বহন করবে? কেন সমগ্র অর্থনীতি এই বোঝা বহন করবে? বিদ্যুৎ দাম না বাড়িয়ে লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ এবং উৎপাদন খরচ কমাতে যথাযথ নীতি গ্রহণ করতে আমরা আবারো সরকারের কাছে দাবি জানাই ।

আমরা বিদ্যুৎ সংকটের টেকসই সমাধানে জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নে আবারো দাবি জানাচ্ছি। রেন্টাল পাওয়ারের চুক্তি বাতিল করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু, মেরামত ও নবায়ন করা, ‘খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন’ প্রণয়ন, পিএসসি প্রক্রিয়া বাতিল করে স্থলভাগে ও সমুদ্রে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সুযোগ, ক্ষমতা ও বরাদ্দ প্রদান, বিদ্যুৎকে গণপণ্য হিসেবে বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দেশীয় মালিকানায় বৃহৎ বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন, শতভাগ গ্যাস ও কয়লা বাংলাদেশের শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার, নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য জ্বালানী মিলিয়ে বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি কাজে অগ্রাধিকার প্রদান করার মধ্যেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের প্রকৃত সমাধান নিহিত।